Ajker Patrika

প্রতিবন্ধী ৩ ছেলে ও অন্ধ স্বামীকে নিয়ে অকূল পাথারে হাসিনা বেগম

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ০৯: ৪৪
প্রতিবন্ধী ৩ ছেলে ও অন্ধ স্বামীকে নিয়ে অকূল পাথারে হাসিনা বেগম

রিকশাচালক অলিউল্লাহ ও গৃহিণী হাসিনার চার সন্তান। এর মধ্য তিনজনই প্রতিবন্ধী। দুই ছেলে মানসিক ও এক ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিছুদিন ধরে অলিউল্লাহ আর চোখে দেখছেন না। বের হতে পারছেন না রিকশা নিয়ে, হচ্ছে না আয়-রোজগার। তাই গৃহিণী হাসিনা এখন অপারগ হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে পরিবারটি। 

ভোলার মনপুরা উপজেলার ৩ নম্বর উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়েনের উত্তর সাকুচিয়া গ্রামে এই পরিবারের বাস। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। উপজেলার ৩ নম্বর উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়েনের উত্তর সাকুচিয়া গ্রামের রিকশাচালক অলিউল্লাহর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে ২ ছেলে রাকিব (২৩) ও শাকিব (২০) মানসিক প্রতিবন্ধী। আর ছোট ছেলে শাহীন (১৪) শারীরিক প্রতিবন্ধী। শুধু তার একমাত্র মেয়ে সুস্থ। 

পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম অলিউল্লাহ রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে ছয় সদস্যর এই সংসার চালাতেন। কিন্তু সম্প্রতি চোখের সমস্যা থেকে তাঁর দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি এখন আর রিকশা চালাতে পারছে না। অর্থের অভাবে সন্তান আর নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। বর্তমানে অসহায় অবস্থায় চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানান রিকশাচালক অলিউল্লাহ। 

অলিউল্লাহ বলেন, ‘আমার চার ছেলে-মেয়ের তিনজনই প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ছোট ছেলে শাহীনকে তার নানাবাড়ি তজুমদ্দিন উপজেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকাল নিজেও চোখে দেখি না। রিকশা নিয়েও বের হতে পারি না। খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছি কোনোমতে। বিনা সুদে কোনো ব্যাংক দোকান বা পশুপালনের জন্য ঋণ দিলে প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবন ভালোভাবে কাটাতে পারতাম।’ 

এ বিষয়ে প্রতিবন্ধী তিন সন্তানের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী তিন সন্তান নিয়ে আমি খুব কষ্টে আছি। এত দিন স্বামী অলিউল্লাহ রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন স্বামীও চোখে দেখতে পান না। প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে আমি সাহায্যের জন্য এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি। মানুষের কাছ থেকে যা পাই তা দিয়েই কোনোমতে চলছে আমাদের সংসার।’

স্থানীয়রা জানান, পরিবারে উপার্জনের কোনো ব্যক্তি না থাকায় কখনো একবেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে উপোস থাকতে হচ্ছে তাদের। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন। ফলে এ পরিবারের দুঃখ-কষ্টের যেন সীমা নেই। 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সোহেল বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের একটি অংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার তাঁদের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। রিকশাচালক অলিউল্লাহ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর দুই ছেলে মানসিক ও এক ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাধ্যমে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে ৭০০ টাকা করে বছরে ৮ হাজার ৪০০ টাকা ভাতা পায়। সেই হিসাবে তিনজনে বছরে ২৫ হাজার ২০০ টাকা ভাতা পায়।’

ইউপি সদস্য মো. সোহেল আরও বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অনুদান তাদের দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও দেওয়া হবে। তবে অসহায় এই পরিবারকে স্থানীয়ভাবে কিছু সহায়তা করলে এবং সরকারিভাবে বড় কোনো সুযোগ-সুবিধা ও চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হলে পরিবারটি আরও ভালো থাকতে পারে।’

এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) সিদ্দিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে দেখছে। তবে, ওই পরিবারের তিনজনকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সরকার যেভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে এসেছে, তাঁর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারটির দীর্ঘদিনের অভাব অনটন ঘুচবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কক্সবাজার বিমান ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের হামলা, সংঘর্ষে নিহত ১

শাশুড়ির মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলের মৃত্যু

নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক নিয়ে কী প্রস্তাব এল, জানালেন আখতার

আবরার হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেমির পলায়নের বিষয়ে যা জানাল কারা অধিদপ্তর

রামদা হাতে যুবলীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল, পরে গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত