Ajker Patrika

সুগন্ধার বাতাসে মানুষ পোড়া গন্ধ, নদীতীরে স্বজনদের আহাজারি 

হৃদয় হোসেন, ঝালকাঠি থেকে ফিরে
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩: ১৪
সুগন্ধার বাতাসে মানুষ পোড়া গন্ধ, নদীতীরে স্বজনদের আহাজারি 

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামে একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মৃত স্বজনদের আহাজারিতে এখন নদীতীরের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সবশেষ ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। 

আজ শুক্রবার দুপুরে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত কুমার দে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল নদীতীরে স্বজনেরা ভিড় করছেন। এই ভিড় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে। বাড়ছে নদীতীরে স্বজনদের আহাজারি। এদের মধ্যে বেশির ভাগই জানেন না তাঁদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে। 

লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা বরগুনার তালতলী উপজেলার মোসা. সোনিয়া বেগম (২৫) নামের এক যাত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, লঞ্চে আগুন লাগার সময় তিনি ইঞ্জিনরুমের ওপরে দোতলার ডেকে অবস্থান করছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ডেক গরম হয়ে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এরপর লঞ্চের সঙ্গে বাঁধা দড়ি বেয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে নিচে নামেন। এরপর নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে তার মা রেখা বেগম এবং পাঁচ বছরের বড় ছেলে জুনায়েদ সিকদার এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। 

আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চঅতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত কুমার দে বলেন, ‘লঞ্চের অধিকাংশ যাত্রী ছিল বরগুনার। আগুন থেকে বাঁচতে এদের মধ্যে অনেকে নদীতে লাফ দিয়েছিলেন। নিখোঁজদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের একটি ও কোস্ট গার্ডের দুটি দল অভিযান পরিচালনা করছে।’ 

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মরদেহ উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে পিরোজপুর, বরিশাল, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্ট গার্ড সদস্যরা কাজ করছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। 

নিহতদের মধ্যে বেতাগী উপজেলার কাজীরাবাদ ইউনিয়নের মো. রিয়াজ (২৩) এবং বরগুনার সদর উপজেলার ফুলঝুরি ইউনিয়নের ৮ বছরের শিশু তাইফার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন তার স্বজনেরা। এ ঘটনায় শিশুটি মারা গেলেও গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে আছেন তার বাবা বশির। 

এদিকে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ ৮০-৯০ জন বরিশাল, ঝালকাঠিসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে বরিশালের বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় সেখানে দগ্ধ রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

লঞ্চের ভেতরে থাকা জিনসপত্র পুড়ে কয়লা হয়ে গেছেহাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক যাত্রী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে। আকস্মিকভাবে ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের লেলিহান শিখা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুন ও ধোঁয়ায় লঞ্চ আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে প্রাণে বাঁচতে অনেকেই লঞ্চ থেকে নদীতে লাফ দেন। এ সময় লঞ্চের ভেতরে থাকা যাত্রীরা চারদিকে ছোটাছুটি করতে থাকে। তাদের ধাক্কায় ও পদদলিত হয়ে অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। যাত্রীরা দিশেহারা হয়ে চিৎকার করতে থাকে। যে যেভাবে পেরেছে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালিয়েছে। অনেকেই স্বজনদের রেখে নদীতে ঝাঁপ দেয়। 

নিচতলার ইঞ্জিনরুম-সংলগ্ন জায়গায় যেসব যাত্রী ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হয়, তারাই বেশি দগ্ধ হন। এ সময় কয়েকজনকে শরীরে আগুন নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। 

লঞ্চের যাত্রী শিমুল তালুকদার জানান, ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালের ঠিক আগে গাবখান সেতুর কিছু আগে লঞ্চের ইঞ্জিনরুমে আগুন লেগে যায়। এরপর সেই আগুন পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। জীবন বাঁচাতে তিনি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন। তবে অনেকেই লঞ্চে থেকে যায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত হয়নি, নাহিদের মন্তব্যের জবাবে উমামা

আ.লীগ নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত