হলভর্তি দর্শকের করতালি এখন শুধুই স্মৃতি

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৩

একটা সময় পটুয়াখালীর সিনেমা হলগুলোতে সিনেমাপ্রেমি দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যেত। দর্শকের করতালিতে মুখরিত থাকত সিনেমা হল। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। বর্তমানে হলের বেহাল অবস্থা, মানহীন সিনেমা এবং প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারসহ নানান কারণে সংকটের মুখে রয়েছে এখানকার সিনেমা হলগুলো। পটুয়াখালী জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোর সব কটি সিনেমা হল এখন বন্ধ। করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করলেও নতুন করে এসব সিনেমা হলে আর কোনো সিনেমা প্রদর্শন করা হয়নি। ফলে খুরিয়ে খুরিয়ে যে কয়টি সিনেমা হল টিকে ছিল সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পটুয়াখালী শহরে তিনটি সিনেমা হল ছিল। পটুয়াখালী শহরের কাজীপাড়া এলাকায় তিতাস সিনেমা হল। যা পূর্বে সৈকত সিনেমা হল নামে পরিচিত ছিল। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে এই হলটি চালু থাকলেও বর্তমানে এটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া শহরের কাটপট্টি এলাকার মনপুরা সিনেমা হলটি বেশ কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে এটি মুকুল সিনেমা হল নামে পরিচিত ছিল। সদর রোডে অবস্থিত রুপালি সিনেমা হলটিও গত বেশ কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। সিনেমা হল বন্ধ হলেও শহরের অনেক এলাকার নাম এখনো সিনেমা হলের নামের সঙ্গে সংযুক্ত। বিশেষ করে মুকুল সিনেমা এবং তিতাস সিনেমা নির্দিষ্ট এলাকা নামে সবাই চিনে থাকেন। 

এদিকে শুধু জেলা শহরেই নয় জেলা শহরের বাইরের সিনেমা হল গুলো বন্ধ হয়েছে বহু আগেই। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রা সিনেমা হল, দুমকীর নসিব সিনেমা হল, গলাচিপার লিকি টপিজ সিনেমা হল, দশমিনার আনন্দ সিনেমা হল, কলাপাড়ার আলিম সিনেমা ও সোসাইটি সিনেমা হল, মহিপুরের সাগর সিনেমা ও দুপুর সিনেমা হল, বাউফলের আনন্দ সিনেমা হল, স্বপন সিনেমা হল, সুন্দরী সিনেমা হল ও বৈশাখী সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে।

পটুয়াখালী তিতাস সিনেমা হলের মালিক আমির হোসেন বলেন, ‘দুই বছর ধরে সিনেমা হল বন্ধ। মানুষজন এখন আর হলমুখী না। নেট আসার পরে সিনেমা হলের দিকে মানুষ ঝুঁকছে না।’

বাউফলের বৈশাখী সিনেমা হলের পরিচালক সুসিল কুমার বলেন, ‘আমাদের বৈশাখী সিনেমা হলে প্রায় ৬০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এরপরেও আমরা ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে হলটি বন্ধ করিনি কিন্তু এখন সিনেমা হলটি না চললেও প্রতিদিন দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা এখন বন্ধ করেছি। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমরা সিনেমা হলটি আবারও চালু করব।’ 

গলাচিপার লিপি টকিজের ম্যানেজার দীপু ভাট বলেন, ‘দর্শক না থাকার কারণে আমাদের মালিক এ ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমরা এ ব্যবসা আবার চালু করতে পারব বলে আশা করি।’ 

সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসরিন মোজাম্মেল এমা বলেন, ‘এক সময় পরিবার নিয়ে হলে গিয়ে ছবি দেখতাম। এখন আর হলে যাওয়া হয় না। হলের পরিবেশও আগের মতো নেই। এছাড়া এখনকার সিনেমার কাহিনি দর্শক টানতে পারে না। প্রযুক্তির ব্যবহারে সিনেমা হলগুলো হারিয়ে গেছে। তবে দেশের ঐতিহ্য সিনেমা হলগুলো টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন। সিনেমা হলগুলোতে মানসম্মত পরিবেশ তৈরি করে পরিবার নিয়ে দেখা যায় এমন সিনেমা যদি চালানো যায় তাহলে আবার ফিরে আসবে সোনালি দিনগুলো।’      

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত