বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: এক্স-রে মেশিন নষ্ট ১০ বছর ধরে, বন্ধ অস্ত্রোপচারও

হৃদয় হোসেন মুন্না, বেতাগী (বরগুনা)
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ২০: ৪৪

চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তার ওপর মূল ভবনের নির্মাণকাজ চলায় রয়েছে শয্যাসংকটও। মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, কার্ডিওলজি, চক্ষুসহ বিশেষজ্ঞ ১০ জন চিকিৎসকের মঞ্জুরীকৃত পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পদগুলোয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 

হাসপাতালের এক্স-রে যন্ত্রটি ১০ বছর ধরে অকেজো। নেই হাসপাতালের নিজস্ব বৈদ্যুতিক (জেনারেটর) ব্যবস্থা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারও বন্ধ। এসব কারণে এখানে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

বরগুনার সিভিল সার্জন ফজলুর হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। প্রতি মাসেই সমস্যাগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। ভবন পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই কারণে এক্স-রে মেশিনটি সরিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সমস্যা নিরসনে কাজ করছি।’ 

বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এখানে গাইনি ও প্রসূতি, শিশু, চর্ম ও যৌনসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদ খালি রয়েছে। ৭ জন মেডিকেল অফিসারের পদের বিপরীতে ৪টি পদই ফাঁকা। ডেন্টাল চিকিৎসক, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও প্যাথলজি বিশেষজ্ঞের পদ শূন্য রয়েছে। নেই ডেন্টালের সরঞ্জাম। স্বাস্থ্য সহকারী ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ ১৪ জন মাঠকর্মীরও পদ ফাঁকা।  

এর বাইরে চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে ৩ জনই নেই। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ৫টি পদসহ স্টোরকিপার, পরিসংখ্যানবিদ, কম্পাউন্ডার, ক্যাশিয়ার, প্রধান সহকারী, প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদে দীর্ঘদিন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া অফিস সহায়কের দুটি, ওয়ার্ড বয়ের দুটি, আয়ার একটি, রাঁধুনির দুটি নৈশ প্রহরীর দুটি, ল্যাব এটেনডেন্টে, মালি এবং ওটি বয়ের একটি পদ ফাঁকা রয়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নতুনভাবে নির্মাণের জন্য পুরোনো মূল ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সে জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। পাশের অন্য একটি দোতলা ভবনে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। ৫০ শয্যার বিপরীতে এই ভবনে রয়েছে ৩০ শয্যা। নিচতলায় বহির্বিভাগ, অফিসকক্ষ ও জরুরি বিভাগ। স্টোররুমে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় দ্বিতীয় তলার খোলা স্থানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে অসংখ্য চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে। 

শাহ আলম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই মোটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্ট করলে তাকে বেতাগী হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু হাসপাতালের এক্স রে মেশিন নষ্ট থাকায় বাড়তি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে এক্স-রে করাতে হয়েছে।’ 

বেতাগী পৌরশহরের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রায় দেড় লাখ মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স–রে মেশিনটি প্রায় ১০ বছর ধরে বিকল। নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। একটু সমস্যা হলেই মানুষকে দৌড়াতে হয় জেলা শহর বা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’ 

জানতে চাইলে বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক লিখন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ৬০ থেকে ৬৫ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকি। এতে খুব কষ্ট হয়। দুই-এক জন চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মানুষের সঠিক সেবা দেওয়া যায় না।’ 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাহামিদা লস্কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসক কর্মচারীর সংকট চলছে। গত ১৩ আগস্ট চিঠি লিখে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। শূন্য পদের চাহিদাও পাঠানো হয়েছে। তবে আমরা রোগীদের খুব ভালো সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুতই এই সংকটের সমাধান হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত