ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে আহত আরিফুল এখন শয্যাশয়ী, চিকিৎসা খরচ বহনে অনিশ্চয়তা 

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ৪১
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ৫৬

মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরে ভ্যানে আতর ও টুপি বিক্রি করতেন ২১ বছরের তরুণ আরিফুল ইসলাম। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন মিরপুরেই। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। এদিন বাঁ পায়ে ৪টি গুলি লাগে তাঁর। এর পর থেকেই শয্যাশয়ী। স্ত্রী মারুফা আক্তারের দীর্ঘনিশ্বাস তিনি সুস্থ হয়ে হাঁটতে পারবেন কি না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা শামীমা বেগমের প্রশ্ন, ‘মোগো সংসার কেমনে চলবে?’

আরিফুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের নতুন শ্রীনগর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মো. হারুন অর রশিদের ছেলে। প্রায় এক মাস চিকিৎসা নিয়ে গত শনিবার নিজ বাড়ি মির্জাগঞ্জে ফিরেছেন তিনি।

আরিফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পুরোনো একটি টিনশেড ঘরে আরিফুল খাটের ওপর শুয়ে আছেন। বাঁ পায়ে ব্যান্ডেজ ও গুলির ক্ষতস্থান। পা নাড়াচাড়া করতে পারছেন না। অসুস্থ বাবার পাশেই তিন মাসের সন্তান আরাফ হোসেন ঘুমিয়ে পড়েছে। আরিফুলের বাড়িতে অনেক লোকজনের সমাগম দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবেশী ও বন্ধুরা প্রতিদিনই তাঁকে দেখতে আসছেন।

আরিফুল বলেন, ‘অভাবের সংসারে বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি। সংসারের ভার কাঁধে নিয়ে পাঁচ বছর আগে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যাই। এক বন্ধুর সহায়তায় মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে ভ্যানে করে আতর টুপিসহ ইসলাামিক জিনিসপত্র বিক্রি শুরু করি। এতে যে লাভ হতো বাড়িতে মা-বাবা ও ভাইদের জন্য খরচ পাঠাতাম। দুই বছর আগে আমি বিয়ে করি। তিন মাসের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে।’

আরিফুল আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৮ জুলাই থেকে মিরপুর গোলচত্বরে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে শরিক হই। কারফিউয়ের মধ্যে ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হই। মিরপুর আইডিয়াল গার্লস স্কুলের পেছনের গলিতে এসে কয়েক হাজার ছাত্র-জনতার সঙ্গে একত্র হই। বিকেল ৪টায় আমরা গলি থেকে মিছিল নিয়ে মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরের দিকে যাই। সেখানে তখন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছিল। সেনাবাহিনীর সামনেই আমরা মিছিল দিতে থাকি। গোলচত্বর থেকে কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী চলে যায়। এরপরই ফায়ার সার্ভিস ভবনের ওপর থেকে আমাদের মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। মুহূর্তেই সেখানে এক শিশুসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়।’

‘গুলিবিদ্ধ ১০ বছরের শিশুটিকে আমি তুলে নিরাপথ স্থানে নিয়ে যেতে চাইলে বাঁদিক থেকে চারটি গুলি এসে আমার পায়ে লাগে। এর মধ্যে দুটি গুলি পা ছিদ্র হয়ে বের হয়ে যায়। পরে ছাত্ররা অ্যাম্বুলেন্স এনে আমাকে মিরপুর ১১ নন্বর ইসলামিয়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আগারগাঁও অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছাত্রদের কাছে স্বজনদের মোবাইল নম্বর দিলে বিষয়টি স্বজনদের জানান। এরপর স্বজনেরা হাসপতালে আসেন। এদি হাসপাতালের খরচ আমাদের চালাতে হয়। এতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপরের চিকিৎসা ছাত্ররাই বহন করেন।’ বলেন, আরিফুল।

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িতে এলে শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম স্যার চিকিৎসার জন্য আমাকে ২০ হাজার টাকার একটি চেক দিয়ে গেছেন। বর্তমানে পরিবারে আমাদের অনেক খরচ। বাবা কাঠালতলী বেসরকারি সংস্থা আশা অফিসে পিয়ন পদে চাকরি করেন। বাবার সামান্য আয় দিয়ে আমার ওষুধ ও পরিবারের খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’

আরিফুলের মা শামীমা বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘ছেলেটা অমার পঙ্গু হয়ে গেছে। এ পা দিয়ে আমার ছেলে মনে হয় আর হাঁটতে পারবে না। কীভাবে আমাদের সংসার চলবে।  ওর বাবা যে আয় করে তাতে আমাদের সংসার চলে না। মেজো ছেলে হাসিব বেতাগী লক্ষ্মীপুরা আলিম মাদ্রাসায় আলিম দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। সেজো ছেলে হামিম বাজিতা ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে তামিম নতুন শ্রীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। ওদের লেখাপড়া ও অসুস্থ বড় ছেলে আরিফের চিকিৎসার খরচ কোথায় পাব?’

মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আরিফুলের বাড়িতে গিয়ে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকার একটি অনুদানের চেক পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকার একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। এ টাকাও তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে পেয়ে যাবেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য কোথাও যেতে হলে প্রবাসী অ্যাম্বুলেন্সে বিনা খরেচে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত