বেতাগীতে ভ্যাকসিন নেই, মারা যাচ্ছে মুরগি ও কবুতর

হৃদয় হোসেন মুন্না, বেতাগী (বরগুনা)
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ২৩: ১৫

দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রাণিসম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে প্রায় দুইমাস সময় ধরে নেই মুরগির রানীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন না পেয়ে প্রতিদিন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে মুরগি ও কবুতর পালনকারী প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মুরগি ও কবুতরের রানীক্ষেত রোগ দেখা দিলেও দুই মাসের বেশি সময় ধরে রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অসংখ্য মুরগি ও কবুতর মারা গেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুরগির ভাইরাসজনিত রোগ রানীক্ষেতের আক্রমণের আক্রান্ত মুরগির শতকরা ৯০ শতাংশ মারা যায়। তাই প্রতিরোধক হিসেবে নির্দিষ্ট বয়সে ছানাদের ভ্যাকসিন দিতে হয়। ৬ দিন বয়সী ছানাদের এক ডোজ ও ২১ দিন বয়সী ছানাদের ২য় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। শীত মৌসুমে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে প্রতিটি উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী আর ভিডি প্রতিষেধক সরবরাহ করা হয়ে থাকে। 

কিন্তু বর্তমানে সাপ্লাইয়ের অভাবে তা সরবরাহ করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রাণী সম্পদ অফিসে ভ্যাকসিন না পেয়ে বাধ্য হয়েই অনেকে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দামে ভ্যাকসিন কিনছেন। 

বেতাগী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে সর্বশেষ গত ১২ নভেম্বর ১৩০ ইমপুল আর ভিডি সরবরাহ করা হয়। এগুলো থেকে ২৮ হাজার মুরগি বা কবুতরকে টিকা দেওয়া সম্ভব। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে এর পর আর কোনো ভি ডি ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়নি। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এসব প্রতিষেধকের একটি অংশ বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করেন। ফলে প্রতি বছরই সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে পোলট্রি খামারি মালিক ও গৃহস্থ ব্যক্তিরা ক্ষতির মুখে পড়েন। 

উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বারবার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়েও প্রতিষেধক মেলেনি। অপেক্ষা করতে করতে অনেক মুরগিরই ততক্ষণে মারা গেছে। যেগুলো বেঁচে আছে তা নিয়েও এখন আতঙ্কে রয়েছি।’ 

একই ইউনিয়নের বাসিন্দা আয়শা বেগম বেগম বলেন, ‘আমার ১০টি মুরগি ছিল। ভাইরাসে সবগুলোই মারা গেছে। একাধিকবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়েও প্রতিষেধক পাইনি। অফিসের লোকেরা বাইর থেকে ভ্যাকসিন কিনতে বলে।’ 

গতকাল রোববার সরেজমিনে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অনেকেই প্রতিষেধক না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। তখন কথা হয় পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল মজিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি গত কয়েকদিন ধরে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এসেও ভ্যাকসিন পাইনি। গত ১৫ দিনে আমার প্রতিবেশী বিমল ও আলেয়ার কয়েকটি মুরগি মারা গেছে। অন্যরা মুরগি মারা যাওয়ার আশঙ্কায় সুস্থ মুরগি জবাই করে খেয়ে ফেলেছেন। তবে আমি বিকল্প হিসেবে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ওষুধ খাইয়ে দিয়েছি।’ 

বেতাগী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোসা. নারগিস আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত মাস থেকে ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে বেশ কয়েকবার এসেও ভ্যাকসিন পাইনি। তারা ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসিন কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ফার্মেসির লোকেরা বলে তাদের কাছে দেশীয় জাতের মুরগির জন্য কোনো ভ্যাকসিন নেই। তারা শুধু পোলট্রি জাতের মুরগির জন্য প্রতিষেধক বিক্রি করেন।’ 

উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের একাধিক ক্ষুদ্র পোলট্রি খামারিরা বলেন, ‘শীতের শুরুতে মুরগির বিভিন্ন রোগে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কিন্তু প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় বাইরে থেকে চড়া দামে এসব ভ্যাকসিন কিনতে হয়। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাকসিন না পাওয়ায় এবারে অনেকেই খামারে মুরগির বাচ্চা তোলেননি। আর যারা তুলেছেন এর মধ্যে অনেকের শত শত মুরগি মারা যাওয়ায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।’ 

বেতাগী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আশরাফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলায় সাপ্লাই না থাকায় আমাদেরকে তারা ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারেনি। তবে খুব দ্রুতই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে। আর ভ্যাকসিন বাইরে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এসব অপপ্রচার। আমরা সঠিকভাবেই ওষুধ বিতরণ করি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত