মৎস্য বিভাগের অভিযানে ‘মারধর’, নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এক জেলে নিখোঁজ

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ৫৭

বরগুনার পাথরঘাটার বিষখালি নদীতে সদর মৎস্য বিভাগের অভিযানের সময় তিন জেলেকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় এক জেলে মারধর থেকে রক্ষা পেতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সঙ্গে থাকা জেলেরা। 

আজ শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিষখালীর নদীর দক্ষিণ কুপধোন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

নিখোঁজ জেলে মো. রিপন (৪১) উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের দক্ষিণ কূপধোন গ্রামের মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। আহত জেলেরা হলেন–মো. রাসেল একই এলাকার নুরু মোল্লার ছেলে এবং সুলতান হাওলাদারের ছেলে দেলোয়ার হোসেন। 

স্থানীয় সূত্র ও আহত দুই জেলে জানান, প্রতিদিনের মতো রিপন, রাসেল ও দেলোয়ার দুটি ট্রলার নিয়ে বিষখালী নদীতে মাছ ধরার জন্য যায়। রাত আড়াইটার দিকে স্পিডবোট নিয়ে বরগুনা সদর উপজেলার মৎস্য বিভাগ অবৈধ খুটি অপসারণের জন্য অভিযানে আসে। তখন ওই দুটি ট্রলারকে ধরে সেখানে থাকা জেলেদের মারধর করেন তাঁরা। মারধরের একপর্যায়ে রিপন নদীতে ঝাঁপ দিলে পরবর্তী সময়ে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

নিখোঁজ জেলের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যানএরপর রাসেল ও দেলোয়ারকে নিয়েই অভিযান চালায় মৎস্য বিভাগ। আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে অভিযান শেষে রাসেল ও দেলোয়ারকে তীরে ছেড়ে দেয়। 

আহত রাসেল ও দেলাওয়ার জানান, তাঁদের আটক করে ব্যাপক মারধরের পর সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায় মৎস্য বিভাগের লোকজন। এ সময় রিপন প্রতিবাদ করায় তাঁকে বেদম পেটানো হয়। মারধর সহ্য করতে না পেরে নদীতে ঝাঁপ দেয় রিপন। সেই থেকে রিপনকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

দেলাওয়ার বলেন, ‘আমরা রিপনকে উদ্ধারের জন্য বারবার বললেও মৎস্য কর্মকর্তা কর্ণপাত করেনি। আমরা এর প্রতিবাদ করলে আমাদেরকেও স্পিডবোর্ডের মধ্যে অমানুষিক নির্যাতন করে। এরপর সকালে তীরে নামিয়ে দেয়।’ 

মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বরগুনা সদর থেকে গতকাল রাতে বিষখালি নদীতে অবৈধ খুঁটিগুলো অপসারণের জন্য একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় স্থানীয় কিছু জেলেরা সহযোগিতা করেছেন। তখন কোনো জেলেকে আটক করার হয়নি। ওই সময় তাদের লেবার ছিল সঙ্গে। তখন কোনো জেলে নিখোঁজের খবর পাওয়া যায়নি। পাথরঘাটা থেকে কিছু ছবি পাঠানো হয়েছে সেই ছবিতে আঘাতের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে আমি বরগুনা জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি।’ 

এদিকে জেলে নিখোঁজের সংবাদে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাথরঘাটা সার্কেল আবু সালেহ, পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, কালমেঘা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গোলাম নাসির, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। 

মো. রিপনের সঙ্গে থাকা জেলেরাপাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির জানান, বরগুনা সদর মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে দিবাগত রাত দুইটার দিকে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। জেলে নিখোঁজের ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তদন্ত করে এর বিচার দাবি করেন। 

এদিকে নিখোঁজ জেলের সন্ধানে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সুলতানা নাদিরার নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জেলেদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছেন। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পাথরঘাটা সার্কেল আবু সালেহ বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত