গাছে বেঁধে প্লাস দিয়ে নখ তুলে চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩৫
Thumbnail image

কুমিল্লার দেবিদ্বারে চোর সন্দেহে এক যুবককে মধ্যরাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাঁকে চিকিৎসা বাবদ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে এ ঘটনা দফারফার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, এখনো থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের পূর্ব নবীপুর গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. বশির মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার মো. আল মামুন ওই এলাকার আবদুল কাদের মিয়ার ছেলে। তাঁকে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। আজ শুক্রবার পর্যন্ত তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানা গেছে।
 
এদিকে মারধরের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সালিস-বৈঠকে মামুনের চিকিৎসা বাবদ ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মামুনকে মোবাইল চোর সন্দেহে তাঁর নিজের ঘর থেকে তুলে নিয়ে যান কয়েক যুবক। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. হাসানকে জানালে তিনি চেয়ারম্যান ও থানায় বিষয়টি জানান। তিনি মামুনকে মারধর না করে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বলেন এবং ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান তাঁকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসার জন্য। এর ফাঁকে চোর ধরার খবর পেয়ে উত্তেজিত এলাকাবাসী মামুনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে কিল-ঘুসি, রড, লাঠিসোঁটা, পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। পরে ইউপি সদস্য হাসান এসে তাঁকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেন। 

নির্যাতনের শিকার মো. আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। দিন আনি দিন খাই। তারা রাতে আমার ঘরে এসে কোনো কিছু না বলেই জোর করে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়। আমি বারবার বলেছি চুরি করিনি; কিন্তু কেউ শোনেনি। তারা আমাকে মারধর করে আমার পুরো শরীর শেষ করে ফেলেছে। আমি আর কোনো কাজকর্ম করতে পারব না। চিকিৎসকেরা বলছেন আমাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে।’ 

আহত মামুনের মা জাহানারা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চোর সন্দেহে রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে আমার ছেলেকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে। তারা প্লাস দিয়ে আমার ছেলের পায়ের নখগুলো তুলে ফেলছে। আমার ছেলে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, তাঁর বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নিত। কিন্তু গ্রামবাসী মিলে আমার ছেলের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পিটিয়েছে।’ 

আহত মামুনের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। রাতে আমার স্বামীকে ঘরে থেকে তুলে নিয়ে চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করল। তাঁকে বিনা দোষে রাতভর গাছের সঙ্গে বেঁধে বর্বর নির্যাতন করেছে। আমি এর বিচার চাই।’ 

অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য বশির মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামুন বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করত। এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে সে চুরি করে নাই। তাকে উত্তেজিত লোকজন পিটিয়েছে। আমার কিছু করার ছিল না।’ 

ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি স্থানীয় সালিসে মীমাংসা করা হয়েছে। তাঁরা দুই পক্ষই মেনে নিয়েছে। সাবেক মেম্বার বশির মিয়াকে ১৫ হাজার টাকা চিকিৎসা বাবদ দিতে বলা হয়েছে।’ 

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত