Ajker Patrika

ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ১৮: ৩৯
ঘুষের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

চট্টগ্রামে ৩ লাখ টাকার ঘুষে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগসহ নানা অভিযোগে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মো. আবু তৈয়ব। তিনি নগরের হামজারবাগ এলাকার রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

আজ মঙ্গলবার তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মো. তালেব আলী। তবে শিক্ষক আবু তৈয়ব এই অভিযোগ অস্বীকার করে একে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে বলেছেন, ‘সভাপতি আমার কাছে টাকা চাইতেন। টাকা না পেয়ে আমাকে বরখাস্ত করেছেন।’

গতকাল সোমবার ওই শিক্ষককে পাঠানো সভাপতি স্বাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্ত আদেশে বলা হয়, গত ৮ মে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, আর্থিক অনিয়ম, বিধিবহির্ভূতভাবে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ এবং আরও নানা অভিযোগ আনেন।

ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল সোমবার ওই কমিটি তদন্ত করতে গেলে প্রধান শিক্ষক কমিটির সভাপতির সামনে তদন্ত কমিটির সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তদন্তকাজে বাধা দেন। ২৩ মে সভাপতির পাঠানো নোটিশ গ্রহণ করেননি প্রধান শিক্ষক।

আদেশে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন কমিটির ২০০৫ সালের ৭ মের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হন ওই প্রধান শিক্ষক। ওই বরখাস্ত আদেশ এখনো বলবৎ আছে। তাই প্রধান শিক্ষকের চাকরির বৈধতা নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিকৃতি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট করার অভিযোগেরও সত্যতা পাওয়া যায় বলে আদেশে বলা হয়।

বরখাস্তের আদেশ ৩০ মে থেকে কার্যকরের কথা উল্লেখ করা হয় ওই আদেশে।

এদিকে গত ২৮ ও ২৯ মে বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন দুই শিক্ষক নিয়োগের সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক ঘুষ হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেছেন বলে লিখিত অভিযোগ করা হয়। লিখিত অভিযোগে নিয়োগের সময় ওই দুই শিক্ষকের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। তা ছাড়া ২৬ মে দুজনকেই আরও ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে চাপ দেন ওই প্রধান শিক্ষক। টাকা না দিলে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও হুমকি দেন।

প্রধান শিক্ষককে বরখাস্তের বিষয়ে রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মো. তালেব আলী বলেন, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ এবং বঙ্গবন্ধুর নামে বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত প্রয়োজনীয় নথিপত্র নষ্ট করাসহ জাতির জনকের সংরক্ষিত ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপন করায় প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়বকে সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত করা হয়। এ ছাড়া তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের আপিল ও আরবিট্রেশন বোর্ডের চূড়ান্তভাবে বহিষ্কৃত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন অবৈধভাবে বিদ্যালয়ে চাকরি করছিলেন।

প্রধান শিক্ষকের ঘুষ গ্রহণ ও ফের ঘুষ দাবির বিষয়ে বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‘চার মাস আমি সুনামের সঙ্গে চাকরি করেছি। চাকরিতে যোগদানের সময় প্রধান শিক্ষক আমার কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এরপর আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে চাপ দেন। ১৫ দিনের মধ্যে তিনি টাকা দিতে বলেন। এ সময়ে টাকা দিতে না পারলে আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার হুমকি দেন। পরে বাধ্য হয়ে আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবর লিখিত আবেদন করি।’

তবে আর্থিক অনিয়ম ও খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো. আবু তৈয়ব এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে বিভিন্ন সময় সভাপতি টাকার জন্য চাপ দিতেন। তাঁকে টাকা না দেওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত