১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, তোপের মুখে অধ্যক্ষের পদত্যাগ

ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩: ২২
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪: ৫৩

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বালিনা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অলিউল্লাহ মাদানীর বিরুদ্ধে ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গতকাল রোববার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেছেন। অধ্যক্ষের দাবি, তিনি নির্দোষ। 

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, মাদ্রাসার বিভিন্ন ফান্ড ও অনুদান থেকে ১৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ অলিউল্লাহ মাদানী। এ ছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠানের টাকায় ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন ও রিচার্জেবল ফ্যান কিনেছেন। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকা ও ফরম পূরণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। 

এদিকে, দুর্নীতির খবরে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালে গতকাল দুপুরে পদত্যাগ করেন অলিউল্লাহ মাদানী। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকা বণ্টনের অনিয়মের দায় এবং বিভিন্ন অভিযোগ স্বীকার করে তিনি একটি লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, দুর্নীতির কথা অধ্যক্ষ সবার সামনে স্বীকার করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। বালিনা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার জনতা ব্যাংকের হিসাব থেকে সাতবারে ৪ লাখ ৭৫ হাজার, সোনালী ব্যাংক থেকে দুবারে ৫ লাখ ২০ হাজার, অগ্রণী ব্যাংক থেকে পাঁচবারে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকাসহ মোট ১২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা চেক জালিয়াতি করে উত্তোলন করেন। 

 ২০২৩ সালে পারফরম্যান্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশনের (পিবিজিএসআই) আওতায় আসা সুবিধাবঞ্চিত ১৫ শিক্ষার্থীর অনুদানের ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ। তবে শিক্ষার্থীদের সহায়তা বিবরণীতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে অনুদানের টাকা বিতরণ করা হয়েছে। 

অনুদানের বিবরণীতে নাম থাকা মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থী জানায়, অনুদানের টাকা তাদের নামে এসেছে সে বিষয়ে তারা জানে না। টাকা পায়নি। অনুদানের বিবরণীতে তারা স্বাক্ষর করেনি। স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 
 
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বালিনা আলিম মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতেন। এসব অনিয়মের কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিতেন। 

বালিনা আলিম মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মায়মুনা আক্তার ও সাইফুল ইসলাম বলে, গরমে ক্লাস করি। অনেক রুমে ফ্যান নাই। আমাদের কষ্ট হয়। অধ্যক্ষ মাদ্রাসার অনুদানের ফ্যান বাসায় নিয়ে গেছেন। এমন অধ্যক্ষ চাই না। 

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ মাওলানা অলিউল্লাহ মাদানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকা, ফ্যান ও মোবাইল ফিরিয়ে দেব। ইতিমধ্যে কিছু দিয়েছি। সভাপতি স্বাক্ষর করা খালি চেক রেখে যেতেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন ব্যবসায়িক কারণে। তাই জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে হয়েছে। অন্য টাকার যে অভিযোগ আছে, সেসব মাদ্রাসার কল্যাণে খরচ করা হয়েছে।’ 

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘চাপে পড়ে পদত্যাগ ও অঙ্গীকারনামা দিয়েছি। আমি নির্দোষ।’ 

ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে অধ্যক্ষ জানাননি বলে দাবি করেছেন বালিনা আলিম মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি তফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বাক্ষর জাল করে তিনি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি এখন প্রকাশ হওয়ায় জানতে পেরেছি।’ 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল করিম বলেন, ‘ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত