ফলকে জিয়ার নাম, অবহেলিত বিপ্লব উদ্যানে প্রাণ ফেরানোর উদ্যোগ

  • উদ্যানের ফলকে থাকা জিয়ার নামই কাল হয়ে দাঁড়ায় পরবর্তীকালে।
  • মেয়র নাছির ও রেজাউলের সময় লিজ দেওয়া হয় উদ্যানের জায়গা।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ১৮
যান্ত্রিক জীবনে একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে চট্টগ্রাম নগরবাসীর অন্যতম ভরসা ছিল ষোলশহরের বিপ্লব উদ্যান। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাসনামলে দখলের কবলে উদ্যানটি তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। সীমিত হয়ে গেছে উদ্যানের আয়তনও। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম শহরে বসবাস প্রায় ৮০ লাখ মানুষের। কিন্তু এই বিপুল জনসংখ্যার অনুপাতে এখানে বড় আয়তনের কোনো উদ্যান নেই। আছে ছোট দুটি উদ্যান। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ৮ দশমিক ৫৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয় আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক। অপরটি নগরীর কেন্দ্রস্থল ষোলশহরের বিপ্লব উদ্যান। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মরণে ১৯৭৯ সালে দুই একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় উদ্যানটি।

বিপ্লব উদ্যানটি মুক্তিযুদ্ধের এক মহান স্মারকও। এখান থেকেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিরোধ যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে স্থাপন করা ফলকে থাকা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামই পরবর্তীকালে এই উদ্যানের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সবুজে ঢাকা ছোট্ট এই উদ্যানে বারবার আগ্রাসী আঁচড় পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়রদের। একের পর এক দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দিয়ে উদ্যানকে ইটপাথরের জঞ্জালে পরিণত করা হয়েছে। তবে বর্তমান সিটি মেয়র বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন ওই উদ্যানে আবারও প্রাণ ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় সবুজের সমারোহ ছিল বিপ্লব উদ্যানে। উদ্যানের ফোয়ারাগুলোয় ছিল পদ্ম ও শাপলার রাজত্ব। ছিল ছোট ছোট মাছে ভরপুর উন্মুক্ত চৌবাচ্চা। যান্ত্রিক জীবনে একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে বিকেল হলেই নগরবাসী ছুটে আসত উন্মুক্ত উদ্যানে। কিন্তু এখন দোকান ও ইটপাথরের জঞ্জালের কারণে এখানে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা দায়।

সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, সবুজে সমৃদ্ধ বিপ্লব উদ্যানের মনোরম পরিবেশ ধ্বংসের কাজ প্রথম শুরু করেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর রিফর্ম ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০ বছরমেয়াদি একটি চুক্তি সম্পাদন করেন তিনি। এর আওতায় উদ্যানের একপাশে ২০টি দোকান নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি। দোকানগুলো নাছিরের পছন্দের লোকেদের কাছেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপরও কিছু সবুজ অবশিষ্ট ছিল উদ্যানে। সর্বশেষ মেয়র (বর্তমানে অপসারিত) ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় সিটি করপোরেশন। চুক্তির অংশ হিসেবে উদ্যানের অবশিষ্ট জায়গায় ২০০ ফুট দীর্ঘ স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এদিকে সর্বশেষ আদালতের আদেশে সম্প্রতি মেয়রের দায়িত্বে আসা বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন উদ্যানটিকে আবারও সবুজে ভরিয়ে দিতে জঞ্জাল পরিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিপ্লব উদ্যানের স্মৃতিফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে গিয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের উচিত ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক এই স্থাপনাকে সংরক্ষণ করা। কিন্তু তারা করেছে উল্টো। শহীদ জিয়ার স্মৃতি মুছে দিতে বিপ্লব উদ্যানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে, পরিণত করেছে জঞ্জালে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

দ্রুত বেতন-ভাতা পাবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান

দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগ, সুযোগ পেতে পারে ইলন মাস্কের স্টারলিংক

গাজীপুরে বেতন পেলেন ৫ কারখানার সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক, কাজে যোগ দেবে কাল

মালামালের সঙ্গে শিশুকেও তুলে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত