১৫ লাখ টাকা ঋণ করে ইতালি গিয়ে ৭ মাস বেকার, অতঃপর আত্মহত্যা

হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ৫২

সুদে ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে ১৫ লাখ ঋণ করে গত বছর ইতালিতে গিয়েছিলেন কুমিল্লার যুবক সুমন মিয়া (২৫)। গত বুধবার রোমে একটি গির্জার পেছন থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। দূতাবাস ও পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারকে জানানো হয়, সুমন আত্মহত্যা করেছেন। 

এ ঘটনায় ইতালিপ্রবাসী কুমিল্লার এক যুবক ফেসবুকে লিখেছেন, ইতালিতে গিয়ে ৭ মাস যাবৎ কোনো কাজ না পাওয়ায় হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন সুমন নামের এক যুবক। 

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার নিলখী গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে সুমন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। মুন্সিগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছেন সুমন। 

এ দিকে সুমনের মৃত্যুর খবরে তাঁর পরিবারে চলছে মাতম। স্বজন হারানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এতগুলো টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন। 

সুমনের বড় ভাই রুবেল এসব বিষয় নিশ্চিত করে জানান, রোমের তুসকোলানা জুলিও আগ্রিকোলা পার্কের একটি গির্জার পেছনে গত বুধবার সকালে এক পথচারী সুমনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ও দূতাবাসের ধারণা—গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। 

তিনি আরও জানান, গত বছর এপ্রিল মাসে রোমানিয়া এবং জুন মাসে ইতালিতে যান সুমন। ইতালি যেতে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা ছিল সুদের দেওয়ার শর্তে ঋণ আর বাকি টাকা ছিল আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করা। সে কোনো কাজ না পাওয়ায় টাকা পাঠাতে পারেনি। এলাকার কয়েকজন অস্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বৈধতার অভাবে দু-একদিন পর সেগুলোও বাদ দিতে হয় তাঁকে।

রুবেল বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বিদেশ যাওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা পুরোটাই ঋণের। এর মধ্যে এক বিঘা জমি বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করছি। আমার ভাইয়ের মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। কীভাবে তার এই ঋণ শোধ করব সেটা নিয়ে আমরা পুরো পরিবার চিন্তায় আছি।’

লাশ দেশে আনার বিষয়ে প্রশাসন ও বিত্তশালীদের কাছে আইনগত সহায়তা চেয়েছেন দরিদ্র রুবেল মিয়া। 

এ ঘটনায় ইতালিপ্রবাসী মুরাদ মহিবুর নামে কুমিল্লার এক ব্যক্তি ফেসবুকে পোস্ট করেন, ‘সুমন মিয়া সাত মাস আগে ইতালির রোম শহরে এসেছেন। মাত্র ২৫ বছরের ওই যুবক ইতালিতে এসেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস বেকার থেকে কোনো কাজ না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছেন। এমন নির্মম মৃত্যু কারোই কাম্য নয়।’ 

তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইতালিতে নতুন করে যারা আসবেন, তারা অবশ্যই বৈধপন্থায় স্পনসর ভিসায় আসবেন। কৃষি ভিসায় এসে এখানে তেমন কোনো কাজ নেই। তাই আপনজন না থাকলে, না আসাটাই ভালো।’ 

এ বিষয়ে হোমনার নিলখী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার জালাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুমন আমার প্রতিবেশী, সে রোমানিয়া হয়ে ইতালি গিয়েছিল। কী কারণে আত্মহত্যা করেছে এটা তো আমরা বলতে পারছি না, তবে রোমানিয়া যাওয়ার সময় তাদের কিছু দেনা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি সে পরিবারের সবার ছোট।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও প্রবাসী ছিলাম। ইতালিতে লোকজন না থাকলে কষ্ট করে থাকতে হয়। সে হয়তো নানা রকম চাপে ছিল। ইতালিতে অবৈধদের নানারকম ঝামেলায় থাকতে হয়।’

এখন মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত