চাঁদপুরে টনসিলের অপারেশন করতে গিয়ে লাইফ সাপোর্টে শিশু

চাঁদপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image

চাঁদপুর শহরের ফ্যামিলি কেয়ার হাসপাতাল ও হেলথ কেয়ার ফিজিওথেরাপি সেন্টারে তাহসিন আক্তার (১০) নামে এক শিশু টনসিল অপারেশন সংক্রান্ত জটিলতায় মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে। ঘটনাটি গোপন থাকলেও এক সপ্তাহ পরে প্রশাসনের নজরে আসে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নানা অনিয়ম ধরা পড়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেদায়েত উল্লাহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। 

তিনি বলেন, আজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ কার্যক্রম প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে শহরের ফ্যামিলি কেয়ার হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে ওই ক্লিনিকের বেশ কিছু গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে ব্লাড ব্যাংক না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ফ্রিজে এক ব্যাগ ব্লাড সংরক্ষণ করেছে। এক্স–রে রুম ওটি রুমসহ অন্যান্য রুম অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় দেখা যায়। সার্বিক বিবেচনায় হাসপাতালের পরিচালককে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও আদায় করা হয়। 

অভিযানে প্রসিকিউশন কর্মকর্তা ছিলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. মো. সাখাওয়াত এবং সহযোগিতা করেন সদর মডেল থানা-পুলিশের একটি দল। 

জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের রালদিয়া গ্রামের প্রবাসী মো. সবুজ খানের মেয়ে তাহসিন টনসিলের সমস্যার কারণে চাঁদপুরের নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এএইচএম ফেরদৌস নূরকে (কাউছার) তাঁর চেম্বারে দেখান। চিকিৎসকের পরামর্শে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই হাসপাতালে শিশুটির টনসিল অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরে জটিলতা দেখা দিলে বিষয়টি গোপন রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই শিশুকে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের আইসিইউয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখে। বর্তমানে ওই শিশু জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। 

ঘটনার দিনই চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. ফরহাদ খান। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই আজাদ। জিডির পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিলেও অপারেশন ও অ্যানেসথেসিয়ার দায়িত্বে থাকা ডা. ফেরদৌস নূর ও ডা. আবির কোনো খোঁজ নেননি। উল্টো রোগীর স্বজনেরা তাঁদের খুঁজে পাচ্ছেন না। 

তাহসিনের পরিবারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসা, অবহেলা, অসচেতনতা ও দায়িত্বহীনতায় অপারেশন টেবিলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, শ্বাসনালিতে রক্ত ও লালা ঢুকে পড়ায় রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অ্যানেসথেসিয়ার ওভারডোজের লক্ষণ ছিল বলে ঢাকার চিকিৎসক তাঁদের জানিয়েছেন। 

তাঁদের অভিযোগ, অপারেশনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়ে অপারেশন করা এবং অজ্ঞানের ওষুধ যথাযথ পরিমাণে প্রয়োগ না করায় শিশুটির জীবন এখন সংকটাপন্ন। তাঁরা আরও বলেন, এ ধরনের অপারেশনের জন্য ‘বিটিসিটি’ টেস্ট বাধ্যতামূলক হলেও তাহসিনের অপারেশনের ক্ষেত্রে এই টেস্ট করা হয়নি। 

চাঁদপুর মডেল থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) আজাদ বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টির ব্যাপক তদন্ত চলছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত