রহস্যময় কানা রাজার সুড়ঙ্গ

শিপ্ত বড়ুয়া, রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ২০

কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় রহস্যময় কানা রাজার সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায় ২০১৮ সালের শেষের দিকে। রামু উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনায় সুউচ্চ পাহাড়ের নিচে এই সুড়ঙ্গের অবস্থান। 

স্থানীয় গ্রামবাসীরা এটির সঙ্গে বহুদিন ধরে পরিচিত। এটিকে তাঁরা আঁধার মাণিক নামে চেনেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা সালামত উল্লাহ (২৮) জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই কানা রাজার সুড়ঙ্গের বিষয়ে জেনে আসছি। আগে ভয়ে ওখানে কেউ যেত না। সবাই এই গুহাকে আঁধার মানিক নামে চেনে। রামু থেকে একদল লোক নিয়মিত আসা যাওয়ার ফলে এখন স্থানীয়রাও যাওয়া আসা করছে। সবার কাছে এখন রহস্য কানা রাজার সুড়ঙ্গ বা আঁধার মানিকের ভেতরে কি থাকতে পারে? 

রামুর অনেক অনুসন্ধানী মানুষ এরই মধ্যে এই গুহার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। প্রথম দিকে কক্সবাজার আর্ট ক্লাবের সভাপতি তানভির সরোয়ার এই গুহাটিতে প্রবেশ করেন বলে জানা যায় এবং নানান তথ্য নিয়ে আসেন। 

তানভির সারোয়ার জানান, আঁধার মানিকের প্রবেশ মুখ ত্রিভুজাকৃতির মাটি থেকে ২৫ ফুট উঁচু। আনুমানিক ৭০ ফুট গভীর পর্যন্ত অনেক কষ্টে হামাগুড়ি দিয়ে গুহাটিতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। এরপরে ঘরের রুমের মত বড় খালি জায়গা আছে ভেতরে। সেখান থেকে আরও পথ বের হয়েছে। ভেতরে একটি বাড়ির মত বিশালাকৃতির জায়গা আছে। এ ছাড়া গুহার ভেতরে মূল্যবান নানান পুরোনো ফলক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

আর্ট ক্লাবের সভাপতি আরও জানান, এরই মধ্যে সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে আঁধার মানিক তালিকাভুক্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই গুহাটি খনন ও গবেষণা কাজ পরিচালনা করা হবে। তাঁদের সঙ্গে এই কাজে যোগ দেবেন ডেনমার্কের একদল গবেষক। এই কাজে উন্নত প্রযুক্তির স্ক্যানার ব্যবহার করা হবে। 

ইতিহাসবিদ শিরুপন বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে যে কানা রাজার গুহা বা আঁধার মানিকের সন্ধান পাওয়া গেছে, সে কানা রাজা হলো চিন পিয়ান। মূলত ১৭৯৮ সালে চিন পিয়ান বর্মি রাজ কর্তৃক পরাজিত হয়ে কয়েক হাজার অনুসারীসহ নাফ নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের কক্সবাজার অঞ্চলে উদ্বাস্তু হিসেবে পালিয়ে আসেন। সে থেকে তিনি এখানে বসবাস করেন। 

জি. ই হারভের লেখা “হিস্ট্রি অব বার্মা” বইয়ে দেখা যায়, আরাকানের দেশপ্রেমিক রাজা চিন পিয়ান ১৮১৫ সালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় অসুস্থতায় মারা যান। বলা হয়, তিনি এই আঁধার মানিক বা গুহাতে আত্মগোপন করেছিলেন। 

এ ছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক প্রকাশিত মফিদুল হক সম্পাদিত 'রোহিঙ্গা জেনোসাইড' বই থেকে জানা যায়, এই চিন পিয়ানই হলেন কানা রাজা। তাঁর মৃত্যুর পর রামুর স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বর্তমান আঁধার মানিক বা কানা রাজার গুহার কাছেই তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন। সে থেকে এটি কানা রাজার সুড়ঙ্গ বা আঁধার মানিক নামে পরিচিত। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত