Ajker Patrika

গৃহবধূকে ধর্ষণের পর হত্যা, মরদেহের সঙ্গে আবারও শারীরিক সম্পর্ক 

লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর প্রতিনিধি
গৃহবধূকে ধর্ষণের পর হত্যা, মরদেহের সঙ্গে আবারও শারীরিক সম্পর্ক 

লক্ষ্মীপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণের পর হত্যা করে কথিত ‘প্রেমিক’ ও তাঁর বন্ধু। হত্যার পর মরদেহের সঙ্গে আবারও শারীরিক সম্পর্ক করার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই গৃহবধূর কথিত ‘প্রেমিক’ সোহাগ। গতকাল শনিবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামাল হোসেনের আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। এ ঘটনায় অপর আসামি রফিককে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। 

এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে রায়পুর উপজেলার দেবীপুর এলাকায়। 

পুলিশ ও নিহতের স্বজনেরা বলছে, গত মঙ্গলবার গৃহবধূ লায়লা নুর মজুমদার নিপু কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাবার বাড়ি থেকে ব্যাংকে টাকা তুলতে বের হন। এরপর নিখোঁজ হন তিনি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দেবীপুরের একটি সুপারি বাগান থেকে অর্ধগলিত অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধার হয়। পরে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। পুলিশ নিহত গৃহবধূর ব্যাগে থাকা ভিজিটিং কার্ডের ওপর লেখা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নালঘর থেকে সোহাগ হোসেন নামে এক যুবককে আটক করে। পরে গত শুক্রবার বিকেলে আবুল কাশেম মজুমদার রায়পুর থানায় এসে ওই নারীকে নিজের মেয়ে বলে শনাক্ত করেন। এরপর অজ্ঞাত আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত নিপুর বাবা। 

এদিকে পুলিশ প্রযুক্তির মাধ্যমে গত মঙ্গলবার ‘প্রেমিক’ সোহাগের সঙ্গে নিপুর যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। পরে সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি পুলিশকে জানান, সোহাগের বন্ধু রফিকের প্রলোভনে নিপুকে রফিকের মামার বাড়ি রায়পুর নিয়ে যান সোহাগ। সোহাগ নিপুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করলে রফিকের মামি তাঁদের ঘর বের করে দেয়। ওই বাড়ি থেকে ফেরত আসার সময় সুপারি বাগানের ভেতর নিয়ে সোহাগ ও রফিক মিলে নিপুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের সহযোগী রফিক হত্যাকাণ্ডের পরে মৃত নিপুর সঙ্গে আবারও শারীরিক সম্পর্ক করে। 

পুলিশ আরও জানায়, ওই মামলায় সোহাগকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার বিকেলে আদালতে তোলা হয়। পরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামাল হোসেনের আদালতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা ও ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দেন। হত্যার পর তার বন্ধু রফিক আবার নিহত নিপুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার কথাও স্বীকার করেন সোহাগ। 

নিহত গৃহবধূ নিপুর বাবা আবুল কাশেম মজুমদার বলেন, ‘প্রায় ৫-৬ বছর আগে মেয়ে লায়লা নুর মজুমদার নিপুর বিয়ে হয়। জামাতা আরিফুর রহমান দুবাই প্রবাসী। তাঁদের ঘরে কোনো সন্তান নেই। মেয়ে কিছুদিন শ্বশুর বাড়ি ও কিছুদিন আমাদের বাড়িতে থাকত। গত মঙ্গলবার সকালে আমাদের বাড়ি থেকে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চৌদ্দগ্রামের কাশিনগর বাজার শাখায় টাকা তুলতে রওনা দিয়ে নিখোঁজ হয় সে। পরে রায়পুর থানায় এসে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করি। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ 

এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন এ ঘটনাকে ন্যক্কারজনক দাবি করেন বলেন, ‘নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারপরও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত পাওয়া যাবে।’ 

লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বিষয়টিকে ন্যক্কারজনক ও আলোচিত ঘটনা দাবি করে বলেন, ‘দ্রুত সময়ে গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতক আসামিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। এ ধরনের ঘটনার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবে প্রধান আসামি সোহাগ আদালতে ধর্ষণের পর হত্যা, খুনের পর আবার ধর্ষণ করার হয়েছে মর্মে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা।’ 

জেলা পুলিশ সুপার ড এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামি হত্যা ও ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। দ্রুত সময়ে এই ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে। অন্য আসামি রফিককে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। দ্রুত সময়ে আদালত চার্জশিট দেওয়া হবে। এটি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আসামিদের শাস্তি পেতেই হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম ছেলে বিয়ে করে পরিবারহারা, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে ঢাকায় এসে ধর্ষণের শিকার

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

মাদারীপুরে ৩ খুন: ঘটনার পেছনে পা ভাঙার প্রতিশোধসহ ৩ কারণ

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুর ছবি-পরিচয় প্রকাশ করলেই আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত