স্কুলে ফিরতে পারেনি সবাই

প্রতিনিধি, সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) 
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ২৮

অটোরিকশার নষ্ট চাকা সারানোর কাজে ব্যস্ত মামুন (১৩)। দোকানে তার সঙ্গে কাজ করছে আরও দুই শিশু শামিম (৯) ও হাসান (১০)। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে এনাম নাহার মোড়ের একটি মোটরসাইকেল মেরামতের দোকানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছে তারা। করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার তারা কাজ শুরু করেছে এই দোকানে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার আগে মামুন পড়ত পূর্ব সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণিতে, শামিম মুছাপুর জুনিয়র অসংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণিতে ও হাসান মুছাপুর উবেদীয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণিতে। টানা ৫৪৪ দিন বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলেও স্কুলে ফিরতে পারেনি তারা। 

একইভাবে উপজেলার শত শত শিক্ষার্থী যাতে পারছে না বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায়। আর্থিক অনটন, স্কুল খোলার অনিশ্চয়তাসহ নানান কারণে অনেক শিক্ষার্থীরা কাজ নিতে বাধ্য হয়েছে গ্যারেজ, হোটেল, ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন জায়গায়। কেউ আবার পাড়ি জমিয়েছে প্রবাসে। শুধু তাই নয়, বাল্যবিবাহের কারণে ঝরে পড়েছে অনেকে মেয়ে শিক্ষার্থী। 

সরেজমিনে গিয়ে শামিমের বাবা মানিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, স্কুল বন্ধ হওয়ার পর অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। পরে ছেলেকে কাজে দিয়ে দিয়েছি। শুনেছি গত পরশুদিন স্কুল খুলেছে। ছেলেকে আবার স্কুল পাঠানোর চিন্তা করেছি। 

আবার স্কুলে যেতে চায় কিনা জানতে চাইলে মামুন বলে, গ্যারেজে কাজ করতে ভালো লাগে না। স্কুলেই ভালো ছিলাম। বন্ধুবান্ধব, পড়ালেখা, খেলাধুলা কত আনন্দ করতাম। কিন্তু এখন আবার স্কুলে যেতে পারব কিনা সেটা জানি না। 

বিদ্যালয়ের কতজন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে জানতে চাইলে মুছাপুর জুনিয়র অসংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিঠু রানী রায় বলেন, স্কুল খোলার পর এখন পর্যন্ত তিন দিন ক্লাস হয়েছে। কিছু শ্রেণির ক্লাস এখনো হয়নি। ক্লাসে অনেককে অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে। তারা হয়তো আসতেও পারে। এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কারা ঝরে পড়েছে। আরও কয়েক দিন ক্লাস চলার পর সামগ্রিক অবস্থা বোঝা যাবে। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাইন উদ্দীন বলেন, আমরা প্রতিদিন সবগুলো বিদ্যালয় থেকে উপস্থিত-অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা নিচ্ছি। শিক্ষকদের দিয়ে হোম ভিজিটের মাধ্যমে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত