মিয়ানমারে সংঘাত: টেকনাফ সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বিকট বিস্ফোরণ

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৪৯
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০: ২৭

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সীমান্তচৌকির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান সংঘাত এখন মংডুর দিকে ছড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি, মর্টার শেলসহ ভারী অস্ত্রের বিকট বিস্ফোরণ শোনা গেছে। দু-তিনটি শব্দের সঙ্গে কম্পন টের পেয়েছেন এপারের বাসিন্দারা। 

দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের সংঘাতের আঁচে বাংলাদেশ সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ অস্থির। টানা কয়েক দিন সংঘাতের পর চার দিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া সীমান্ত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত। তারপরও সীমান্তঘেঁষা খেতখামারে যেতে ভয় পাচ্ছেন চাষি ও কৃষকেরা।

দুই দিন ধরে টেকনাফের পূর্ব ও দক্ষিণাংশের ওপারে রাখাইনের মংডুতে তুমুল সংঘর্ষ চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কয়েকটি সীমান্তচৌকি রয়েছে। এসব চৌকির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই চলছে। এতে এপারের সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে দু-তিন ধরে গুলি ও ভারী অস্ত্রের শব্দ পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল দিবাগত রাত ১টা থেকে আজ সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। মাঝেমধ্যে বিকট শব্দও কানে আসছে। সকালে প্রায় এক ঘণ্টা তীব্র গোলাগুলিতে এপারের মানুষের ঘুম ভাঙে। ওপারের মংডু এলাকায় আজ সকালে আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা গেছে। এরপর দুটি বিকট শব্দে কেঁপে উঠে সীমান্ত এলাকা। কোনো কোনো এলাকায় অগ্নিসংযোগও হচ্ছে।

নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। রাখাইনের মংডুর শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা ও ফাদংচা এলাকা অবস্থিত। 

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ  ৯ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব এলাকার সীমান্তচৌকি ঘিরে সংঘর্ষ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ সকাল ৮টার দিকে দুটি বিকট শব্দে এপারের মাটি কেঁপে ওঠে। এ অবস্থায় সীমান্তের নারী-শিশুরা আতঙ্কে রয়েছেন।’

সেন্ট মার্টিনের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা আবদুল করিম ও জসিম উদ্দিন বলেন, গত বুধবার থেকে সেন্ট মার্টিনে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত কয়েকটি বিকট শব্দ হয়েছে। 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী  বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানোর হয়েছে। সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ২ বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহি উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে থেমে থেমে রাতভর গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন সীমান্তে থাকা বিজিবির সদস্যরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।

২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। দু-তিন দিন তীব্র লড়াইয়ের পর তমব্রু ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। সেখানে বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে ঠিকতে না পেরে ৩৩০ জন বিজিপি, সেনা ও বেসামরিক নাগরিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের গতকাল সাগরপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। 

৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী এবং অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। এ ছাড়া গোলাগুলিতে আহত হন আরও ৯ জন। অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত