Ajker Patrika

নামাজে গিয়ে রক্তভেজা শরীরে মায়ের কোলে ফিরল সাইমন

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২: ০২
Thumbnail image

‘প্রতিদিনই এশার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় বলে যায়। এদিনও মসজিদে গিয়েছে, কিন্তু আমার কাছে বলে যায়নি। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এলাকায়। পরে লোকজন বাসার সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু রক্তভেজা শরীরে। তার অবস্থা দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার একমাত্র ছেলে। কেন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে?’ 

এভাবে কাঁদতে কাঁদতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১৬ বছর বয়সী কিশোর সাইমনের কথা বলছিলেন তার মা এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মকিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা বিউটি আক্তার। গত শুক্রবার রাতের ওই সংঘর্ষে আহত সাইমন ঢাকার এক হাসপাতালে মারা যান পরদিন শনিবার রাতে।

গতকাল রোববার রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মিঠানিয়া ব্রিজসংলগ্ন একটি পাঁচতলা ভবনে সাইমনদের ভাড়া বাসায় কথা হয় তাঁর মা-বাবার সঙ্গে। এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাইমনের গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের দিকদাই গ্রামের সরদারবাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। সেখান থেকেই বাবা-মা বাসায় আসেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকাহত এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেক অনুরোধের পর রাজি হন কথা বলতে।

বিউটি আক্তার বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল ছেলে কোরআনের হাফেজ হবে। যে কারণে দুই বছর আগে এলাকার সাউদুল কুরআন হিফজ মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। সেখানে হিফজ বিভাগে পড়াশোনা করত। ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে আমার ছেলে খুব আনন্দ-উল্লাস করছিল। তখন বাসার প্রতিবেশীরা বলছিল সাইমন খুব দুষ্টুমি করে, তার কোনো বিপদ হতে পারে। কিন্তু এসব আমি কিছুই মনে করিনি। কিন্তু সত্যি সত্যি আমি ছেলেকে হারিয়ে ফেললাম। আর কোনো দিন সাইমন আমাকে মা বলে ডাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘সাইমনের বয়স যখন ৯ বছর, তখন ওর বাবা সাইফুল ইসলাম আমাদের ছেড়ে চলে যান। তিনি অন্যত্র বিয়ে করেন। আমার সঙ্গে ডিভোর্স হয়। ওই বয়সে সাইমনকে নিয়ে আমি বাপের বাড়িতে চলে আসি। তিন বছর আগে মো. ইউনুছের সঙ্গে বিয়ে হয় আমার।’

মো. ইউনুছের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চরবাকিলা গ্রামে। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে হাজীগঞ্জের এই বাসায় ভাড়া থাকেন এই দম্পতি। ইউনুছ রাজমিস্ত্রি কাজ করে সংসার চালান।

আবারও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিউটি বলেন, ‘গত সাত বছর আমার ছেলের খোঁজ নেয়নি তার জন্মদাতা। আমি মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলেকে লালন-পালন করেছি। আমার স্বপ্নই ছিল ছেলে হাফেজ ও আলেম হবে। আমরা সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। আমার মা-বাবা নেই। আমরা পাঁচ বোন। আমার কোনো ভাই নেই।’

সাইমনের মা বিউটি আক্তার ও সৎ বাবা মো. ইউনুছসাইমনের সৎবাবা ইউনুছ বলেন, ‘সাইমন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে আসে। আমিও সেখানে এশার নামাজ আদায় করতে যাই। মসজিদে থাকতেই একজন পরিচিত ব্যক্তি ফোন দিয়ে জানাল সংঘর্ষে সাইমন আহত হয়েছে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা নিয়ে যাই। রাতেই কুমিল্লা থেকে পাঠায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় ৭টায় সাইমন মারা যায়। সেখানে হাসপাতালের খরচ আসে সব মিলিয়ে প্রায় ৭২ হাজার টাকা। এলাকার লোকজনের সহযোগিতায় হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে আসি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘রোববার দুপুরে সাইমনের মরদেহ ঢাকার হাসপাতাল থেকে নিয়ে হাজীগঞ্জ থানায় এলে ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে চাঁদপুর মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জ দিকদাইর সরদারবাড়িতে জানাজা শেষে সাইমনকে দাফন করা হয়।’

হত্যার ঘটনা সম্পর্কে ইউনুছ বলেন, ‘তখন বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলছিল। নামাজ শেষে বাসায় আসার জন্য বের হয়। কিন্তু দুই পক্ষের মারামারি দেখে বড় মসজিদের গেটের সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলে তাকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা ও পিঠে কোপ দেয়। তলপেটেও আঘাত করা হয়। তখন সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। ওই অবস্থায় লোকজন আমাকে ফোন দিয়ে জানায়।’

এদিকে সাইমন হত্যার ঘটনায় জনৈক সাইফুল ইসলাম নামে মামা পরিচয়ের ব্যক্তি হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বলে নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক। তিনি বলেন, ‘মামলায় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।’

সাইমন হত্যার বিষয়ে মা-বাবা কেউই কোনো ধরনের মামলা করেননি নিশ্চিত করে তার মা বিউটি বেগম জানান, তার কোনো ভাই নেই। বাবা ইউনুছ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা ওসিকে জানিয়েছি এ ঘটনায় মামলা করব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত