Ajker Patrika

ঘুমধুমের ১৩ পাড়ার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে 

মাঈনুদ্দিন খালেদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৪৩
ঘুমধুমের ১৩ পাড়ার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে 

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে এসে পড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন। এই অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১৩টি পাড়ার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। আশপাশের অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন স্থানীয় প্রশাসনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে বলেন। আজকের পত্রিকাকে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক জানান, এ বিষয়ে লিখিত কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন আরও জানান, তবে এ বিষয়ে আসলে স্থানীয়দের জোর করার সুযোগ নেই। কারণ, তাদের আত্মীয়স্বজন ও মালামাল রেখে তাদের জন্য সরে যাওয়া কঠিন। তিনি আরও তিন দিন আগেই স্থানীয় প্রশাসনকে নাগরিকদের নিরাপদ রাখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেন বলেও জানিয়েছেন।

তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার ওপর দায়িত্ব বর্তায় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার।’

ঘুমধুমের চেয়ারম্যান জানান, এরই মধ্যে ঘুমধুম ইউনিয়নের উত্তর ঘুমধুম বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের। এরই মধ্যে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

যেসব পাড়ার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে সেগুলো হলো—নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ঘুমধুম, জলপাইতলি, তুমব্রু পশ্চিমকুল, ক্যাম্পপাড়া, বাজারপাড়া, কোনারপাড়া, মধ্যমপাড়া, ঘোনারপাড়া, উত্তরপাড়া, ভাজাবনিয়াপাড়া, উলুবনিয়াপাড়া, চাকমাপাড়া ও বাঁশবাগানপাড়া।

তবে এসব পাড়া ছাড়াও অন্যান্য গ্রাম বা পাড়ার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি জানান, ঘুমধুম থেকে তুমব্রু পর্যন্ত যতগুলো গ্রাম আছে, সবগুলো গ্রামের বাসিন্দাদেরই সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে সবাই নিরাপদে থাকে।

মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন রাজ্য রাখাইনে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর লড়াই চলছে। সেই লড়াইয়ের আঁচ এসে পড়েছে বাংলাদেশেও। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ২২৯ জন সদস্য। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ঘুমধুমের এই এলাকা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। এর পাশেই মিয়ানমার সীমান্ত। সেখানে মিয়ানমার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। কিছুক্ষণ পরপরই ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের শব্দ। এতে পুরো সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। দুজনের মৃত্যুর পর ওই বাড়ির আশপাশের পরিবারগুলো বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত