ইউটিউব সেলিব্রেটি বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, নায়ক গ্রেপ্তার

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ২০: ১৭

ইউটিউব সেলিব্রেটি বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে অ্যাডভোকেট জাহিদ চৌধুরী (৪১) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। কুমিল্লা সদরের দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম আশ্রাফপুর এলাকা থেকে গতকাল রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

র‍্যাব জানায়, নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মেয়ে ও নারীদের ধর্ষণ করতেন অ্যাডভোকেট জাহিদ। তাঁর প্রলোভনের মধ্যে রয়েছে—ইউটিউব সেলিব্রেটি বানানো, পড়াশোনা করানো, পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা, ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে বিয়ে করা। আইনি সহায়তা দেওয়ার নামেও অসহায় নারীদের ফাঁদে ফেলার মতো অভিযোগ রয়েছে জাহিদের বিরুদ্ধে। অবশেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

গত ২ জানুয়ারি নগরীর ২য় মুরাদপুর এলাকার এক নারী তাঁর দুই সন্তান নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ করেন র‍্যাব-১১ এর সিপিসি-২ এর কুমিল্লার কার্যালয়ে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নামে র‍্যাব। মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ জানুয়ারি সোমবার রাতে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার মধ্যম আশ্রাফপুর এর একটি বাসার ৭ম তলার ভাড়ায় থাকা অ্যাডভোকেট জাহিদ চৌধুরীকে (৪১) গ্রেপ্তার করে। এ অভিযানে নিখোঁজ রিমা আক্তার (১৫) (ছদ্ম নাম) ও রিমার ভাই মো. ফয়সাল (২০) এবং হোসনেয়ারা (৩২) (ছদ্ম নাম) নামে আরেক নারীকে উদ্ধার করে র‍্যাব। 

র‍্যাব জানায়, পূর্ব পরিচয় সূত্রে জাহিদ চৌধুরীকে (৪১) রিমা আক্তার ও তার ভাই মো. ফয়সাল (২০) মামা বলে ডাকত। জাহিদ নিজেকে একজন জনপ্রিয় ইউটিউবার হিসেবে পরিচয় দেয় এবং সে বিভিন্ন ছেলে মেয়েদের ইউটিউব সেলিব্রেটি করার মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছে বলে জানায়। এ কথা শুনে রিমার মনেও ইউটিউব সেলিব্রিটি হয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছা জাগে। তাঁরা মায়ের অগোচরে জাহিদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যেত। বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের শর্টফিল্ম এবং ভিডিও তৈরি করে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করত। সে শর্টফিল্মে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করত জাহিদ। 

র‍্যাবের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, গত বছরের ২৫ নভেম্বর জাহিদ রিমার পরিবারকে না জানিয়ে স্কুল থেকে আশ্রাফপুর বাসায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাকে ইউটিউব সেলিব্রেটি, পড়াশোনা করানো, পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তার নামে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের পরে উক্ত ঘটনা কারও কাছে না বলার জন্য ভয়ভীতিসহ হুমকি দেয়। পরে বিষয়টি তার মাকে জানালে জাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে এবং তাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যায়। এর পরেও জাহিদ তাঁকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করত। পরে বিভিন্ন প্রলোভনে আবারও সেখান থেকে রিমা ও তার ভাইকে বের করে এনে গোপনে আশ্রাফপুর বাসায় এনে রাখে। 

পরে হোসনেয়ারা (৩২) (ছদ্ম নাম) নামে একজনকে চাকরি দেওয়ার নাম করে বাসায় নিয়ে আসে এবং রিমার ভাই ও হোসনেয়ারাকে (৩২) একটি রুমে আবদ্ধ রেখে তাঁদের শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে। জাহিদ পরবর্তীতে রোজার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বারবার ধর্ষণ করে। এতে ভাই বাধা দিতে চাইলে ভাই ও হোসেনেয়ারার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের ভাইয়ের মুখ বন্ধ রাখে। 

প্রসঙ্গত, অ্যাডভোকেট জাহিদ একজন বিবাহিত ব্যক্তি এবং তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। সে পরিবার নিয়ে কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার দৌলতপুর রেলগেট এলাকায় বাস করে। 

গ্রেপ্তারকৃত আসামি জাহিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে র‍্যাবের সহযোগিতায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত