ফরিদগঞ্জে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই পর্যাপ্ত জনবল, ভোগান্তিতে রোগীরা

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ১০
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ১৮
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের বাসিন্দা সাহেলা বেগম গতকাল বুধবার তাঁর সন্তানের চিকিৎসা করাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। চিকিৎসক না থাকায় তাঁরা ফিরে যান।

উপজেলার চরমথুরা এলাকা থেকে গতকাল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসেন আবুল কালাম নামের এক বৃদ্ধ। সকাল ১০টার দিকে এসে দুপুর ১২টার সময়ও চিকিৎসক দেখাতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো চিকিৎসক দেখাতে পারেনি।’ পরে আরও আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি চিকিৎসক দেখাতে পারেন।

চিকিৎসকসহ বিভিন্ন বিভাগে জনবলসংকটের মধ্য দিয়ে চলছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দৈনন্দিন কাজ। এতে উপজেলার দরিদ্র মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ষাটের দশকে স্থাপিত হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সরকারি এই হাসপাতাল ২০২১ সালের ১৭ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদনে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে উপজেলার ৬ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে জনবল কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় কার্যত চিকিৎসা সেবা আগের মতোই রয়ে গেছে।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এ ছাড়া নিয়মিত জরুরি বিভাগে প্রায় ১০০ জন এবং অন্তবিভাগে ৭৫ থেকে ৮৫ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। এর পরেও রোগীর চাপ থাকায় মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে অনেকে।

বর্তমানে ৩১ শয্যার হাসপাতালে মোট চিকিৎসকের সংখ্যা ৩৮ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ২৪ জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক বিশেষ ব্যবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন। অথচ ৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুমোদন হলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে চিকিৎসকসহ সব শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ার কথা রয়েছে। এই হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক প্রেষণে অন্যত্র রয়েছেন বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে একজন চিকিৎসককে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী দেখতে হয়। যেখানে একজনকে ৩০ থেকে ৪০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত নয়। এভাবে একটি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চলতে পারে না।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মুজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালেই চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। ফলে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জনবলসংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার দায় এসে পড়ে চিকিৎসকদের ঘাড়ে। তার পরেও রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ৫০ শয্যার জনবলকাঠামো অনুমোদনের জন্য ইতিপূর্বে কয়েক দফা চিঠির পর সর্বশেষ গত ২০ জুন চিঠি দিয়েছি। আশা করছি কর্তৃপক্ষ উপজেলার জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া আমাদের হাসপাতালটিতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষ সেবা নিতে আসেন। সে হিসেবে খুব কমসংখ্যক জনবল দিয়ে বিশালসংখ্যক মানুষের সেবা দিতে হয় আমাদের।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত