মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা, হাতিয়ার জেলেদের চলছে সাগরে নামার প্রস্তুতি

ইসমাইল হোসেন কিরন, হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ২০
Thumbnail image
হাতিয়ার জেলেরা নদীতে যাওয়ার সর্বশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কেউ মেরামত করছেন নৌকা । কেউ বুনছেন জাল। আবার কেউ নৌকা ধোয়ামোছার কাজে ব্যস্ত। বড় ট্রলারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার নিয়ে নিচ্ছেন জেলেরা। সুনসান ঘাটগুলো হয়ে উঠছে কর্মচঞ্চল। সাগরে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ রোববার মধ্যরাত থেকে। রাত ১২টার পর মাছ শিকারে নামবেন নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার প্রায় ১ লাখ জেলে।

হাতিয়ার সূর্যমুখী ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলা উদ্দিন জানান, হাতিয়ায় ছোট-বড় ২০টি ঘাটে প্রায় ১০ হাজার জেলেনৌকা রয়েছে। এসব নৌকায় ১০ জন করে হলেও ১ লাখ মানুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত। মা ইলিশ রক্ষায় গত ২২ দিন নদীতে ও সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। সময় শেষ হওয়ায় আজ মধ্যরাত থেকে মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছেন এসব জেলে। এতে জেলেপল্লিতে বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশে। ঘাটে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।

সকাল থেকে বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে দেখা যায় জেলেরা নদীতে যাওয়ার সবশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে খালের মধ্যে ইঞ্জিন চালু করে ট্রলার চালিয়ে পরীক্ষা করে নিচ্ছেন। বড় বড় মাছ ধরার ট্রলারগুলোয় নেওয়া হচ্ছে বরফ।

সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি আবুল হোসেন জানান, রাতে তারা সাগরের উদ্দেশ্যে ঘাট ছেড়ে যাবেন। এ জন্য ১০ দিনের খাবার, জ্বালানি তেল ও বরফ নিয়ে নিচ্ছেন। মাছ পাওয়া গেলে তিন-চার দিন পর ফিরে আসবেন, না হয় তাদের ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অবস্থান করতে হবে।

সূর্যমুখী ঘাটের কয়েকজন জেলে জানান, গত ২২ দিন বেকার ছিলেন তাঁরা। তাঁদের আয়-উপার্জন বন্ধ ছিল। কেউ কেউ অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়লেও অনেকে নিজেদের নৌকা, জাল মেরামতে সময় কাটিয়েছেন। রাত ১২টার সবাই নদীতে নামবেন মাছ শিকারে । এ বছর মৌসুমের প্রথম থেকে ভালো মাছ পাওয়া যায়নি। অনেক জেলে এখনো আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। নিষেধাজ্ঞার পরে নদীতে মাছ পাওয়া না গেলে তাঁদের পথে বসতে হবে।

উপজেলার কাজীর বাজার ঘাটের জেলে নাজিম উদ্দিন জানান, নিষেধাজ্ঞায় বেকার ছিলেন ২২ দিন। কিন্তু দেওয়া হয়েছে কেবল ২৫ কেজি চাল। পাঁচ সদস্যের পরিবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস কিনতে তাঁকে টাকা ধার করতে হয়েছে।

তিনি জানান, নৌকায় তিনি ছাড়া আরও ৯ জেলে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সরকারিভাবে দেওয়া চাল পেয়েছেন আরও পাঁচজন। অন্য চারজন কিছুই পায়নি। তাঁদের এই ২২ দিন দৈনিক মজুরিতে কাজ করে সংসার চালাতে হয়েছে।

মাছধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ সাগরে নামছে জেলেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ সাগরে নামছে জেলেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাতিয়া ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রাশেদ উদ্দিন জানান, হাতিয়ায় গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করার মতো ট্রলার রয়েছে দুই শতাধিক। এসব ট্রলারে ২০ জন করে ৪ হাজার জেলে রয়েছেন। গত ২২ দিন এসব জেলের পরিবারের ভরণ-পোষণ ট্রলার মালিকদের করতে হয়েছে। এ বছর ট্রলারমালিকেরাও এখনো লাভের মুখ দেখতে পাননি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান বলেন, হাতিয়ায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে পালন করা হয়েছে। এ সময় নদীতে ও সাগরে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে ছিল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় কিছু অসাধু জেলেকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়। এ বছর প্রণোদনা হিসেবে হাতিয়ায় ১২ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে এই চাল বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত