Ajker Patrika

দুর্গম থানচির গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়া

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ২০: ৩২
দুর্গম থানচির গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়া

বান্দরবানের থানচি উপজেলার গ্রামে গ্রামে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঘরে ঘরে জ্বর, কাশি, বুকে ব্যথা, পেটে ব্যথাসহ নানা উপসর্গের রোগী। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে আগাম বৃষ্টির শুরু থেকেই ম্যালেরিয়ার রোগী বাড়ছে। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা হওয়ায় উপজেলা সদরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেকে যেতে পারছে না। অধিকাংশই কাছাকাছি হাট-বাজারের ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্র্যাক দুই সপ্তাহ যাবৎ ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট ও ওষুধ দিলেও তা অপ্রতুল হওয়ায় প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আসছে না। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দুর্গম গ্রামগুলোয় বৃষ্টি শুরু হতেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে ডায়রিয়াও দেখা দিচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ১০-১২ জন করে ম্যালেরিয়া ও জ্বরের রোগী রয়েছে। গত পাঁচ দিনে শিশুসহ ১৭ জন স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। বেশি দুর্গম অঞ্চল থেকে মানুষ হাসপাতালে আসতে পারছে না। 
 
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ নিলুফা ইয়াজমিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, গত ৫ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত ১৭ জন ম্যালেরিয়ার রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে সাতজন বাড়িতে চলে গেছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু ও কিশোর। নিলুফা বলেন, ‘পাহাড়ে এ সময় অর্থাৎ বৃষ্টি হলে মশার উপদ্রব বাড়ে। ঘরের আঙিনায় পানি, ময়লা-আবর্জনা জমা থাকলে মশার উপদ্রব বেশি হয়। সব সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে।’ 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ম্যালেরিয়ার রোগী প্রদীপ ত্রিপুরা (৫০)। রেমাক্রী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষ চন্দ্রপাড়ার বাসিন্দা তিনি। বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ঘরে ঘরে জ্বর। জ্বর পরীক্ষা করার যন্ত্র নেই, স্বাস্থ্যকর্মীও নেই। আগে তো এনজিও কর্মী ছিল, এখন তা-ও নেই। অনেকে স্থানীয় হাটবাজার থেকে জ্বরের ওষুধ কিনে খেয়ে সুস্থ হয়ে যায়। আমিও ওষুধ খেয়েছি, কিন্তু ভালো না হওয়ায় ছেলেকে নিয়ে গতকাল হাসপাতালে এসেছি। চিকিৎসক-নার্সরা পরীক্ষা করে দেখে ম্যালেরিয়া জ্বর।’ 

প্রদীপ বলেন, ‘দুর্গম রেমাক্রী ইউনিয়নের ছোট মদক থেকে থানচি পর্যন্ত ইঞ্জিনচালিত বোটের ভাড়া অনেক। রোগী হলে রিজার্ভ নিতে হয়। বোটের ভাড়া গুনতে হয় ৩ হাজার টাকা। সেই সামর্থ্য সবার নেই।’ 

থানচি সদর ইউনিয়নের চাইঞানপাড়ার বাসিন্দা য়ইপুং ম্রো কারবারি (৫৬)। তিনিও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি। এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। বিছানায় শোয়া অবস্থায় তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের পাড়ায় প্রায় সব পরিবারের দু-একজন জ্বর, কাশি, বুকে ব্যথা, পেটে ব্যথায় আক্রান্ত। ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়ে কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে জানতে পারি আমার ম্যালেরিয়া হয়েছে। এখন সামান্য সুস্থ বোধ করছি।’ ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ত্যক্ষ্যংপাড়ার বাসিন্দা চিংক্যনু মারমাও (২৭) বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। 

জানতে চাইলে রেমাক্রী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার বিদ্রজয় ত্রিপুরা বলেন, ‘ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে, সঙ্গে ডায়রিয়া। গত বুধবার মেনতাংপাড়ার মেনতাং ম্রো কারবারি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমি এ বিষয়ে চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ইমা চন্দ্র ত্রিপুরাও একই তথ্য জানান। 

চিকিৎসাসেবার বিষয়ে জানতে চাইলে মেম্বার বিদ্রজয় বলেন, ‘ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন কেউ। স্বাস্থ্যকর্মী, ব্র্যাকের কর্মী থেকে কিছু সহযোগিতা পাচ্ছে। তবে বেশি মানুষ ও দুর্গম এলাকার কারণে এখানে স্বাস্থ্য ও পাড়াকর্মী অপ্রতুল।’ 

এ ব্যাপারে ব্র্যাকের মাঠ সংগঠক অর্পণ চাকমা বলেন, ‘ব্র্যাকের উপজেলা সদর ছাড়াও বলিপাড়া ইউনিয়নের একটি, রেমাক্রী ইউনিয়নের দুটি শাখা অফিস রয়েছে। সেখানে মোট আটজন কর্মী সার্বক্ষণিক ম্যালেরিয়ার ওষুধ, পরীক্ষার কিট ও মশারি সরবরাহ করছেন। উপজেলা সদরে মোট সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।’ 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘উপজেলায় ছোট-বড় ২৪৫টি গ্রাম রয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের তথ্যমতে, জনসংখ্যা ২৮ হাজার ৭৫০। দুর্গম হওয়ায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে পাহাড়ি উঁচুনিচু পথ হেঁটে যেতে হয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তবু সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মশারি, ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট, প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছে। স্বল্পতা ছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর গতকাল চাহিদা অনুযায়ী ওষুধপত্র এসে পৌঁছেছে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেছেন, পাড়ায় পাড়ায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। গতকালও টিম পাঠিয়েছি। আরও শক্তিশালী টিম আগামীকাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ, কিট, মশারি পাঠানো হবে।’ 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে যথাযথ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানচিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ২৭ জন আটক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
ভোলাহাটের চামুশা সীমান্ত এলাকায় আটক ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভোলাহাটের চামুশা সীমান্ত এলাকায় আটক ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে ২৭ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ভোরে মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধীন ভোলাহাটের চামুশা সীমান্ত এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ জন পুরুষ, ১২ জন নারী, ৫টি শিশুসহ ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি রয়েছে। তারা সবাই পাসপোর্ট ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।

এ বিষয়ে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, আটক ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়েছিল। পরে তারা আবার কোনো বৈধ ভ্রমণ নথি ছাড়াই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় বিজিবি তাদের আটক করে। তিনি আরও বলেন, আটক ব্যক্তিদের পরিচয়, স্থায়ী ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও বাংলাদেশি নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক যাচাই শেষে জিডির মাধ্যমে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শরীয়তপুরে ছাত্রদল-এনসিপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ, আহত ১০

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরে ছাত্রদল-এনসিপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শরীয়তপুরে ছাত্রদল-এনসিপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

শরীয়তপুরে ছাত্রদল ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একাধিক বিস্ফোরণ ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

আজ সোমবার শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নাঈম ব্যাপারী নামের এক ছাত্রদল কর্মীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার (৩৮), ছাত্রদল কর্মী নিরব তালুকদার (১৮), আকাশ (২২), আরমান (২৬), মামুন (৩০), আবিদ খান (২৮), ইসাহাক সরদার (৩২), বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ আলীসহ কয়েকজন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে এনসিপি নেতা সবুজ তালুকদারের নেতৃত্বে সন্ধ্যায় শহরে একটি বিক্ষোভ-মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গার্লস স্কুল এলাকা থেকে শুরু হয়ে শরীয়তপুর–ঢাকা মহাসড়কের চৌরঙ্গী মোড় অতিক্রম করে তামিম ফ্যামিলি ফুড সেন্টারের সামনে পৌঁছালে ছাত্রদলের কর্মী আকাশের সঙ্গে এনসিপির নেতা-কর্মীদের বিরোধের সৃষ্টি হয়।

এনসিপির নেতা-কর্মীরা ওই ছাত্রদল কর্মীকে ধরে নিয়ে পুনরায় চৌরঙ্গী মোড়ে ফিরে এসে মারধর করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদারের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। উভয় পক্ষ হাতবোমা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। হাতবোমা বিস্ফোরণ ও অস্ত্রের আঘাতে অন্তত ১০ জন আহত হন। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং যান চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়।

এ বিষয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে এনসিপির একটি বিক্ষোভ-মিছিল চলাকালে ছাত্রদলের এক কর্মীর সঙ্গে ভুল-বোঝাবুঝি থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজীপুরকে সমন্বিত ও পরিবেশবান্ধব মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনা হবে: স্থানীয় সরকার সচিব

গাজীপুর প্রতিনিধি
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেছেন, গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত ও যানজটমুক্ত শহরে রূপান্তরের পথে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়। তিনি আরও বলেন, সরকার গাজীপুরকে একটি সমন্বিত ও পরিবেশবান্ধব মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে।

আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় সরকার সচিব এসব কথা বলেন।

এ সময় গাজীপুর মহানগর উন্নয়নে গাসিকের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার সচিব বলেন, গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত, যানজটমুক্ত ও আধুনিক শহরে রূপান্তরের পথে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগগুলো সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক। খাল পুনঃখনন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ইতিমধ্যে নগরবাসীর জীবনমানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

রেজাউল মাকছুদ জাহেদী আরও বলেন, খালের সৌন্দর্য ও দীর্ঘস্থায়ী কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে গার্ড ওয়াল নির্মাণ, সুয়ারেজ, বিশুদ্ধ পানির লাইন স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার আর্থিক বরাদ্দ দেবে। গাজীপুরের মানুষ যেন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে, সে লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।

এ ছাড়া গাজীপুরকে একটি সমন্বিত ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার গুরুত্বসহকারে চিন্তাভাবনা করছে বলেও জানান

স্থানীয় সরকার সচিব। প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে নাগরিক সেবা সহজীকরণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাই সরকারের মূল লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ দিন বিকেলে মহানগরীর টঙ্গীর হিমারদীঘি এলাকায় গাসিক নির্মিত আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত ‘প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫’-এর জমজমাট ফাইনাল উপভোগ করেন স্থানীয় সরকার সচিব। টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের লড়াইয়ে বাসন অঞ্চল-৬ দল ২-০ গোলে কোনাবাড়ী অঞ্চল-৭-কে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়। খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে ট্রফি তুলে দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী।

গাসিক প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইসরাইল হাওলাদার এবং গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলম হোসেন। এ ছাড়া গাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ: রহস্য উদ্‌ঘাটনে এক তরুণীকে খুঁজছে পুলিশ

কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির প্রতিনিধি মো. মোতালেব শিকদার (৪০)। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির প্রতিনিধি মো. মোতালেব শিকদার (৪০)। ছবি: সংগৃহীত

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির প্রতিনিধি মো. মোতালেব শিকদারের গুলিবিদ্ধের ঘটনা উদ্‌ঘাটনে এক তরুণীকে খুঁজছে পুলিশ। সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল আকসা মজিদ সরণির ১০৯ নম্বর রোডের মুক্তা হাউসের নিচতলার ভাড়াটে হিসেবে ছিলেন ওই তরুণী। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।

বাড়ির মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী নামের এক তরুণী এক মাস (ডিসেম্বরের ১ তারিখ) আগে নিচের ফ্লোরটি ভাড়া নেয়। ওই তরুণী নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকত। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে এক মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিই। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণীর খোঁজ নেই। তার কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র বা ঠিকানা আমাদের কাছে নেই।’

বাড়ির মালিক এস এম আমিনুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমরা ওই বাড়িতে থাকি না। সব ফ্লাট ভাড়া দেওয়া। পরিবার-পরিজন নিয়ে বয়রা এলাকায় আমাদের আরেকটি বাড়িতে বসবাস করি। গুলির ঘটনা শোনার পর আমার স্ত্রীকে পাঠাই।’

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ওই তরুণী নিজেকে তন্বী পরিচয় দিয়ে এবং এনজিওতে চাকরি করার কথা জানিয়ে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। একজন যুবককে স্বামী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে স্বামী-স্ত্রী বসবাস করবে বলে জানায়। তবে ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় নিয়ম মানেনি। চুক্তিপত্র ও ন্যাশনাল আইডি কার্ড চাইলে সে পরে দেবে বলে আমাদের জানায়।’

এস এম আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে ওই ফ্ল্যাটে অসামাজিক কার্যকলাপ হয় বলে আশপাশের ভাড়াটেদের কাছ থেকে জানতে পেরে এই মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিই। সে কারণে আইডি কার্ডের ফটোকপি নেওয়া হয়নি।’

খুলনায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মোতালেব শিকদারের গুলিবিদ্ধের ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক রয়েছেন।

খুলনা মেট্রোলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) ত ম রোকনুজ্জামান বলেন, মজিদ সরণির ১০৯ নম্বর রোডের মুক্তা হাউসের নিচতলায় বসবাসরত তন্বীর রুম থেকে কোনো ছবি বা আইডি কার্ড পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁকে শনাক্ত করতে সময় লাগছে।

রোকনুজ্জামান বলেন, আশপাশের ভাড়াটেদের তথ্য অনুযায়ী ওই বাসায় অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। অনেক যুবকের যাতায়াত ছিল।

কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই তরুণীকে খুঁজছি। বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ওই তরুণীর মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে তন্বী নামের ওই নারীর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তাকে ধরতে পারলে মোতালেবকে গুলি করার ঘটনার নেপথ্যের কারণ বের হয়ে আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত