সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ছেলেকে পাহাড়ি দুর্বৃত্তের থেকে রক্ষা করেছে বাবা 

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০: ৫৯

কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি দুর্বৃত্তের কবল থেকে স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে রক্ষা করেছে সাহসী বাবা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক এলাকায়। গত ২৩ মার্চ রাত ৯ টারদিকে মোহাম্মদ হোছনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বাবা-ছেলে দুর্বৃত্তের কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও তাদের এলোপাতাড়ি মারধরে দুজনই আহত হয়েছে। এ ছাড়া অপর এক অপহরণের ঘটনায় ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণে ৩ যুবককে মুক্তি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। 

আহত মোহাম্মদ হোছন মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। হোছনের ছেলে আবদুল আজিজ ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে ছেলেকে দুর্বৃত্তের হাত থেকে রক্ষা করেছে বাবা মোহাম্মদ হোছন। 

মোহাম্মদ হোছন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো মাগরিবের পর থেকে পড়ার টেবিলে স্কুলের পড়া শিখছিল আব্দুল আজিজ। পড়া শেষ করে রাত ৯ টারদিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির উঠানে বের হলে হঠাৎ মুখে কালো কাপড় পরা সশস্ত্র ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত তাকে ধরে ফেলে। এ সময় তার চিৎকারে বাবা হোছন ঘর থেকে দ্রুত বের হলে তাকেও ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু সাহসী হোছন সু-কৌশলে দুজন দুর্বৃত্তের লম্বা বন্দুক ধরে টানদিলে ছেলে আজিজকে ছেড়ে দেয় এবং আজিজ দৌড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। এ সময় অপর দুর্বৃত্তের বন্দুকের আঘাতে আজিজের হাত ভেঙে যায়। এদিকে দুর্বৃত্তের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও তাদের বাড়ির সকলের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তের দল হোছনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং একপর্যায়ে তাকে ফেলে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। 

এলাকাবাসীরা আরও জানায়, ১৫-২০ জনের দুর্বৃত্তের দল পাহাড়ে অবস্থান করছে দীর্ঘ দিন ধরে। সেখানে বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। 

এদিকে গত ২২ মার্চ দমদমিয়া এলাকার ৩ জন যুবক ও ১৯ মার্চ জাদিমুড়াস্থ জুম্মাপাড়ার একজন কৃষককে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। তাদের মধ্যে কৃষক ছৈয়দ উল্লাহ ৫ দিন পর ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসে এবং দমদমিয়া এলাকার ৩ যুবক রিদুয়ান সবুজ, মোস্তফা ও রহমত উল্লাহকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকায় মুক্তিপণে রোববার বিকেল ৩ টারদিকে মুক্তি দেয়। মুক্তিপণ নেওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের শরীরে মারধরের জখম রয়েছে। এর আগে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ চেয়েছি দুর্বৃত্তরা। এমনটি জানিয়েছেন তাদের পরিবার। এতে চরম উৎকণ্ঠায় ও উদ্বিগ্ন রয়েছে পরিবারসহ এলাকাবাসী। 

অপরদিকে এ খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ চাউর হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। তাদের উদ্ধারে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। 

পবিত্র রমজান মাসে অপহরণ আতঙ্কে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় রোববার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার মো. আলী স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এ সময় তিনি সম্মিলিত ভাবে দুর্বৃত্তের মোকাবিলা করার সাহস জোগান এবং রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য ৪টি দলে বিভক্ত করে পাহারা দল গঠন করেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী মেম্বার জানান, রোহিঙ্গা দুর্বৃত্ত পাশের পাহাড়ে অবস্থান করে শান্ত এলাকাকে অশান্ত করে তুলছে। যে কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে। তারা সশস্ত্র হওয়ায় ভয়ে রয়েছে এলাকাবাসী। তাদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান। 

টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাছির উদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ উপজেলার বাহারছড়ার ইউপির জাহাজপুরা এলাকা থেকে ৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারা হলেন, কলেজ শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন (১৭), রশিদ আলম (২৬), জানে আলম, (৪৫), জাফর আলম (৪০), জাফরুল ইসলাম (৩০), ফজল করিম (৩০) ও আরিফ উল্লাহ (৩০)। তারা সকলেই বাহারছড়া ইউপির পূর্ব মাঠ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। পৃথক মুক্তিপণের মাধ্যমে তারাও ফিরে আসে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত