জুরাছড়িতে ফসলি জমি দখল করে অবাধে চলছে তামাক চাষ    

জুরাছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ০৫
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৫০

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় আবাদি জমির ওপর অবাধে চলছে তামাকের চাষ। অন্যদিকে তামাক চুল্লিতে পোড়াতে পাহাড়ে নির্বিচারে চলছে প্রাকৃতিক বনের গাছ কাটার হিড়িক।

নির্বিচারে গাছ কাটায় প্রাকৃতিক বনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া তামাক চাষে ফসলি জমির উর্ব্বরাশক্তি নষ্ট হচ্ছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও জ্বালানি কাঠ ব্যবহারে জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়ছে। প্রতিবছর এই উপজেলায় তামাকের চাষ বেড়ে রবি ফসলের জমিগুলো দখল করছে বলে দাবি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জুরাছড়ি ইউনিয়নের ঘিলাতলী ও শীলছড়ি, মৈদং ইউনিয়নের বারাবান্যা, হাজাছড়ি, জামেরছড়ি, ফকিরাছড়ি ও দুমদুম্যা ইউনিয়নে বস্তিপাড়া ও বরকলক এলাকায় তামাকের বীজতলা করা হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় আবাদি জমিতে তামাকের চারা রোপণ করা হচ্ছে। আবার কোথাও তামাকের পাতা গজিয়ে সবুজ হয়েছে বিল। তামাক চুল্লিতে পোরোনোর জন্য অনেক জঙ্গলে কিংবা রাস্তার পাশে কাঠ কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে চুল্লিতে তামাক শুকানো হয়। চুল্লি তৈরিতে অনেককেই ব্যস্ত দেখা যায়।

শীলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে তামাক চাষ করা হয়েছে। প্রতিবছর তামাক পরিপক্ব হলে গন্ধে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে।

শীলছড়ি ক্যাম্পের পূর্বে ২০ গজ দূরে প্রতিবছর চুল্লি স্থাপন করা হয়। জনচলাচলের পথে বাজারজাত করতে প্রস্তুত করা হয়। প্রশাসন এতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় ছাত্রসমাজের।

মৈদং ইউপি চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন, ‘তামাক কোম্পানি কম শর্তে ও কম সুদে ঋণ প্রদান এবং প্রত্যক্ষভাবে কারিগরি সহায়তা প্রদানের কারণে চাষিরা তামাক চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। রবি ফসল চাষাবাদে সার ওো কীটনাশকের অভাব এবং উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করার অসুবিধার কারণে তামাকের চাষ বাড়ছে।’

মৈদং ইউনিয়নের মদন চন্দ্র চাকমা বলেন, ‘মৌসুমি শাকসবজি চাষ করলে যেখানে সার আর কীটনাশকের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়, সেখানে তামাক চাষে এসব না চাইতেই এসে যায়। এ ছাড়া মৌসুমি শাকসবজি বাজারজাতকরণ ও যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়।’

ঘিলাতলীর রিটনে চাকমা বলেন, ‘গেল বছর তামাক চাষে ভালো দাম পাইনি। তাতে ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। ঋণ কমাতে এ বছর আবার তামাক চাষ করছি।’

বারাবান্যা শ্যামলী চাকমা, জামেরছড়ির কল্প চাকমা বলেন, ‘তামাক চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কোম্পানি থেকে অগ্রিম ঋণ পাওয়া যায়।’

তাঁরা জানান, এক হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করে উৎপাদন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে ২-৩ লাখ টাকা আয় হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা বলেন, ‘তামাকের গন্ধে তাৎক্ষণিকভাবে রোগ দেখা না দিলেও পরে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এতে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে তামাক চাষের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে তিনটি ইউনিয়নে চাষি ও তামাক কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুরাছড়িতে ৫০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ২৬০ হেক্টরের বেশি জমিতে রবি ফসলের চাষ হয়। কিন্তু তামাক চাষের প্রভাবে এর পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তামাক চাষ বন্ধ না হলে রবি ফসল চাষের পরিমাণ কমতে থাকবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল আহম্মেদ সরকার বলেন, ‘তামাক চাষ বন্ধে কৃষি বিভাগ থেকে বাদাম, ডাল, সরিষা, ভুট্টা ও উচ্চফলনশীল ধানের বীজ হতদরিদ্র কৃষকদের বিনা মূলে প্রদান করা হচ্ছে। তামাক বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সামাজিক সচেতনতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ে প্রচার অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত