বাণিজ্যিকভাবে বোয়াল চাষ করে সফল ঢাবি শিক্ষার্থী শহীদুল

ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ১১: ৫৮
Thumbnail image

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এলাকার জেলেদের কাছ থেকে একটি-দুটি করে পোনা সংগ্রহ করে নিজেদের পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে বোয়াল মাছ চাষ শুরু করেন মৎস্যচাষি মো. শহীদুল ইসলাম (৫৩)। বছর ঘুরে আসতেই সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি। ২০-৫০ টাকা দরে বোয়ালের পোনা কিনে বছরের মাথায় তা প্রতিটি বিক্রি করছেন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। তাঁর এমন সফলতা দেখে উপজেলার অনেকেই বোয়াল মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। 

জানা গেছে, শহীদুল ইসলাম ওই উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের লাড়ুচৌ গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন। পড়ালেখা শেষ করে দীর্ঘদিন চাকরির জন্য ঘুরছিলেন তিনি। চাকরি না পেয়ে বেকার জীবন থেকে মুক্তি পেতে ভাইদের পরামর্শে ও সহযোগিতায় মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েন। এখন তাঁর মাছের খামারে এলাকার সাত-আটজন বেকার যুবক চাকরি করছেন। মাছ চাষের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব সবজি চাষ, ফলদ বাগান ও বনজ বাগান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শহীদুল ইসলাম। শুধু মৎস্য চাষে নয়, সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি এলাকায় ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ ছাড়া শহীদুল ইসলাম গত কয়েক বছরে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সেরা মাছচাষি হিসেবে সনদপত্র ও সম্মাননা পেয়েছেন। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এরই মধ্যে তাঁর পুকুরের সব বোয়াল মাছ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রুই, কাতলা, পুঁটি, সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, পাঙাশসহ অন্যান্য মাছ রয়েছে। এ ছাড়া এই বর্ষা মৌসুমেও এলাকার জেলেদের কাছ থেকে নতুন করে আবারও বোয়াল মাছের পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর এই সফলতা দেখে আশপাশের গ্রামের অনেকেই অন্যান্য মাছের পাশাপাশি বোয়াল মাছ চাষের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। 

মাছচাষি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুটা ছোট পরিসরে হলেও আমাদের মাছের খামারটি এখন সাড়ে চার একর জায়গাজুড়ে রয়েছে। এই খামার ছাড়াও মাছ চাষের জন্য আমার আরও ছোট ছোট ১০টি খামার রয়েছে। এসব খামরে অন্যান্য মাছচাষির মতো দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করে আসছি। এ বছর আমার নিজ উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে বোয়াল চাষে উদ্যোগ নেই। এরপর নিজে ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বেশাল (বেল) জাল ও জেলেদের কাছ থেকে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা দরে ৪৭০টি বোয়াল মাছে পোনা সংগ্রহ করে তা চাষ করি। একই খামারে পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুইসহ অন্যান্য মাছ চাষ করা হয়েছে। এতে আমার পোনা ক্রয়, পুকুরে চাষ ও বিক্রয় পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এসব বোয়াল মাছের খাবার হিসেবে অন্যান্য পুকুরে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনা ও ছোট মাছ উৎপাদন করি। সেসব পোনা মাছ দিয়ে বোয়াল মাছের দৈনন্দিন খাবারের জোগান দেওয়া হতো। এ ছাড়া বাজার থেকে কিনে আনা খাবার ব্যবহার করা হতো।’ 

শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আট মাসে আমাদের খামারে অন্যান্য মাছের পাশাপাশি প্রতিটি বোয়াল চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের হয়। এসব বোয়াল মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে পুকুর থেকে পাইকার ও এলাকার লোকজন কিনে নিয়ে যান। এ বছর আমার পুকুরের বোয়ালসহ অন্যান্য মাছ চাষে ৬ লাখ টাকা খরচ করা হয়। সেগুলো আবার ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রিও করেছি। এর মধ্যে শুধু বোয়াল মাছ বিক্রি করেছি ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার।’ 

খামার থেকে মাছ নিতে আসা মাছ বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমি বিভিন্ন সময়ে শহীদুল ইসলামের মাছের খামার থেকে পাইকারি দরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনে বিভিন্ন আড়তে ও বাজারে বিক্রি করি। আজও এখান থেকে বোয়ালসহ অন্যান্য মাছ কিনে আড়তে নিয়ে যাব। আর কিছু মাছ সকালবেলা স্থানীয় বাজারে খুচরা বিক্রি করব। পুকুর থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বোয়াল মাছ কিনে নিয়ে তা বাজারে ক্রেতাদের কাছে ৭০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। 

এ বিসয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয় বণিক বলেন, বোয়াল মাছ এখন বিপন্নপ্রায়। প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম নষ্ট হওয়ায় মাছটি আগের মতো পাওয়া যায় না। মাছচাষি শহীদুল ইসলাম তাঁর খামারে বোয়াল মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি একজন ভালো মাছচাষি। নিয়মিত তাঁর খামার পরিদর্শন ও উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা চাই মাছচাষি শহীদুল ইসলামের মতো অন্যরাও মিশ্র মাছ চাষ করে সফল ও লাভবান হোক। এ ক্ষেত্রে উপজেলা মৎস্য কার্যালয় তাঁদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সব সময় পাশে থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত