সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
মাথার ওপর জ্বলন্ত সূর্য, পায়ের নিচে গলন্ত পিচঢালা সড়ক। এমন আবহাওয়ার মধ্যে মোড়ে মোড়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ থেকে সকল বয়সীরা। কিন্তু মিলছে না গাড়ির দেখা। হঠাৎ দু-একটি দেখা গেলেও, তাতে উঠতে পারাটাও দায়। অতিরিক্ত ভাড়া ও উপচে পড়া ভিড়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে আজ রোববার নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। বিকেল সাড়ে ৩টা অবধি ছিল একই পরিস্থিতি।
নগরীর প্রবেশমুখের ওই মোড় থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, দোহাজারী, লোহাগাড়া উপজেলাসহ পর্যটক শহর কক্সবাজার, টেকনাফ ও পার্বত্য বান্দরবান প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এমন দুর্ভোগ শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রামে নয়। দুর্ভোগে পড়েছিল উত্তর চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য আরও দুই জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়িতে যাতায়াতকারীরা। নগরীর অভ্যন্তরে তো আছেই।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে গত শনিবার এক বৈঠকে বিভাগের পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ রোববার ভোর ৬টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়।
এই পরিষদের আহ্বায়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা ও সাবেক যুবলীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু ও সদস্যসচিব সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মো. মুছা। তাঁরা উভয়ই স্ব-স্ব সংগঠনের শীর্ষ নেতা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আন্তজেলা রুটে চলাচলকারী আরও বাস মালিক নেতা ও ফেডারেশনভুক্ত আরও কয়েকটি সংগঠন।
প্রভাবশালী পরিবহন নেতাদের ডাকে মূলত এই গণপরিবহন ধর্মঘট হওয়ায় রোববার ভোর থেকে তা কার্যকরে কড়াকড়ি ছিল। নির্ধারিত দিনে নগরের বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, অক্সিজেন, অলংকার মোড়, সিটি গেট, জিইসি মোড় থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ধরনের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। মালিকেরা বাস কাউন্টারগুলোও বেশির ভাগই বন্ধ রেখেছেন। তবে নগরের অভ্যন্তরে গণপরিবহন চললেও—তা ছিল সীমিত। হাতেগোনা বাস, মিনিবাস, অটো টেম্পু, হিউম্যান হলার চলাচল করছিল। যারা মূলত এই ধর্মঘটের বিপক্ষে ছিলেন।
এ ছাড়া স্পেশাল বাস সার্ভিস মেট্রো প্রভাতি ও সোনার বাংলার গাড়িগুলোও নগরীতে চলাচল করেছে। ধর্মঘট না মানায় কিছু গাড়ি ভাঙচুরের শিকারও হয়েছে। তবে নগরী থেকে আন্তজেলা রুটে বিভিন্ন দূরপাল্লার বাস চলাচল একেবারে বন্ধ ছিল। পরিবহন শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট মোড়, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, ষোলোশহর, চান্দগাঁও এক কিলোমিটার, নতুন ব্রিজ, মুরাদপুর, অক্সিজেনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে জটলা ছিল সাধারণ যাত্রীদের।
বাসের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় মোড়গুলোতে গাড়ি থামলে সেখানে উঠতে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। প্রতিটি বাসে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। গাড়ি না পেয়ে কেউ কেউ হেঁটে কিংবা রিকশা ও মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। দূর গন্তব্যের যাত্রীরা রওনা হচ্ছেন ট্রাকে কিংবা মাইক্রোবাসে চড়ে।
নতুন ব্রিজে গাড়ি অপেক্ষারত অবস্থায় কথা হয় মো. বাহাদুর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি তাঁর মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে সকালে চট্টগ্রাম শহরে এসেছিলেন। এখন শহর থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছেছেন কিন্তু গাড়ি পাচ্ছেন না।
বাহাদুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিরোধী দল বিএনপির হরতাল-অবরোধের সময় আজকের মতো পরিস্থিতি আমাদের পড়তে হয়নি। তখন সীমিত হলেও গাড়ি চলেছে। আজ সকালে গাড়ি বন্ধ ছিল। কিন্তু মায়ের অসুস্থতার কারণে বাধ্য হয়ে শহরে আসতে হয়েছে। লোকাল সিএনজি করে শহরে এসেছি। যাওয়া-আসা বাবদ সবাই ডাবল ভাড়া নিয়েছে। এখন আবার ডাবল-ভাড়া দিয়ে অন্য গাড়িতে করে বাড়িতে যেতে হবে। বাসে যাচ্ছি না ভিড়ের কারণে। এ জন্য অপেক্ষা করছি অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় কি না তা দেখার জন্য।’
সকালে নগরের চান্দগাঁওয়ের এক কিলোমিটার এলাকায় কয়েকটি দূরপাল্লার বাস কাউন্টারের সামনে নারী ও শিশু যাত্রীদের জটলা দেখা যায়। কিন্তু কাউন্টারগুলো ছিল বন্ধ। তাঁরা একে অপরে হা-হুতাশ করছিলেন। এমন অবস্থায় সেখানে দুজন লোক একটি বড় ভারী কার্টন নিয়ে একটি সিএনজি থেকে নামেন। তখন কক্সবাজার ও টেকনাফগামী একটি কাউন্টারের কর্মচারী তাঁদের জানান, গাড়ি যাবে না দুদিন। যেখান থেকে এসেছেন সেখানে চলে যান। দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।
দুজনের মধ্যে আব্দুল সালাম নামে একজন বলেন, ‘টেকনাফ যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এখন কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। বিকল্পভাবে যেকোনো প্রকারে আমাদের টেকনাফে পৌঁছাতে হবে।’ পরে আব্দুস সালামসহ সেখানে থাকা অন্যযাত্রীরা বিকল্প যানবাহন হিসেবে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রোবাস ট্রাক চালকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।
নগরের ইপিজেডে একটি কারখানায় কর্মরত তারেকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অনেকক্ষণ দাঁড়ানোর পর খুব কষ্টে একটি বাসে চেপে বহদ্দারহাট থেকে ইপিজেডে পৌঁছেছি। এমনিতে গরম, তার মধ্যে বাসের ভেতর উপচেপড়া ভিড় ছিল। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মরতে ধরছিলাম।’
এদিকে নগরীর বহদ্দারহাট-মুরাদপুরে রাস্তায় চলাচল করা ৪-৫টি বাস ভাঙচুর করেছে ধর্মঘট পালনকারীরা। এর মধ্যে স্পেশাল বাস সার্ভিসের বাসও রয়েছে। সড়কগুলোতে বাসের জানালার ভাঙা টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বহদ্দারহাটের পাশাপাশি মুরাদপুরেও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
বহদ্দারহাটে স্পেশাল বাস সার্ভিস মেট্রো প্রভাতির কাউন্টার ইনচার্জ মো. রাকিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকাল ১০টা নাগাদ কয়েকজন লোক এসে আমাদের ৮টি বাস আটকে রাখে। এর মধ্যে একটি বাস ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের একটি বাস ভাঙার পাশাপাশি এই মোড়টির ১০ নম্বর রুটে আরও একটি বাস ভাঙচুর করে তাঁরা।’
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে সামান্য হাতাহাতি হয়েছিল। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, শহরের অভ্যন্তরে রিকশাসহ অন্যান্য ছোট ছোট যানবাহন থাকায় যাত্রী সাধারণের তেমনটা সমস্যা হয়নি। তবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় দূরপাল্লার যাত্রীদের একটু সমস্যা হয়েছে। এটা ছাড়া শহরের অভ্যন্তরে পিকেটিং বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ধর্মঘটের বিরোধিতা করে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদসহ আরও কয়েকটি সংগঠন।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে শ্রম আইন পরিপন্থী বেআইনি এই ধর্মঘট আহ্বানকারী চিহ্নিত ও পেশাদার চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করছি।
প্রশাসনের সঙ্গে ধর্মঘটকারীদের বৈঠক
ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে রোববার বেলা ৩টা নাগাদ পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে এক বৈঠক হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রাউজান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
মাথার ওপর জ্বলন্ত সূর্য, পায়ের নিচে গলন্ত পিচঢালা সড়ক। এমন আবহাওয়ার মধ্যে মোড়ে মোড়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ থেকে সকল বয়সীরা। কিন্তু মিলছে না গাড়ির দেখা। হঠাৎ দু-একটি দেখা গেলেও, তাতে উঠতে পারাটাও দায়। অতিরিক্ত ভাড়া ও উপচে পড়া ভিড়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে আজ রোববার নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। বিকেল সাড়ে ৩টা অবধি ছিল একই পরিস্থিতি।
নগরীর প্রবেশমুখের ওই মোড় থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, দোহাজারী, লোহাগাড়া উপজেলাসহ পর্যটক শহর কক্সবাজার, টেকনাফ ও পার্বত্য বান্দরবান প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এমন দুর্ভোগ শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রামে নয়। দুর্ভোগে পড়েছিল উত্তর চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য আরও দুই জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়িতে যাতায়াতকারীরা। নগরীর অভ্যন্তরে তো আছেই।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে গত শনিবার এক বৈঠকে বিভাগের পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ রোববার ভোর ৬টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়।
এই পরিষদের আহ্বায়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা ও সাবেক যুবলীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু ও সদস্যসচিব সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা মো. মুছা। তাঁরা উভয়ই স্ব-স্ব সংগঠনের শীর্ষ নেতা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আন্তজেলা রুটে চলাচলকারী আরও বাস মালিক নেতা ও ফেডারেশনভুক্ত আরও কয়েকটি সংগঠন।
প্রভাবশালী পরিবহন নেতাদের ডাকে মূলত এই গণপরিবহন ধর্মঘট হওয়ায় রোববার ভোর থেকে তা কার্যকরে কড়াকড়ি ছিল। নির্ধারিত দিনে নগরের বহদ্দারহাট, নতুন ব্রিজ, অক্সিজেন, অলংকার মোড়, সিটি গেট, জিইসি মোড় থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ধরনের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। মালিকেরা বাস কাউন্টারগুলোও বেশির ভাগই বন্ধ রেখেছেন। তবে নগরের অভ্যন্তরে গণপরিবহন চললেও—তা ছিল সীমিত। হাতেগোনা বাস, মিনিবাস, অটো টেম্পু, হিউম্যান হলার চলাচল করছিল। যারা মূলত এই ধর্মঘটের বিপক্ষে ছিলেন।
এ ছাড়া স্পেশাল বাস সার্ভিস মেট্রো প্রভাতি ও সোনার বাংলার গাড়িগুলোও নগরীতে চলাচল করেছে। ধর্মঘট না মানায় কিছু গাড়ি ভাঙচুরের শিকারও হয়েছে। তবে নগরী থেকে আন্তজেলা রুটে বিভিন্ন দূরপাল্লার বাস চলাচল একেবারে বন্ধ ছিল। পরিবহন শ্রমিকেরা অলস সময় পার করছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট মোড়, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, ষোলোশহর, চান্দগাঁও এক কিলোমিটার, নতুন ব্রিজ, মুরাদপুর, অক্সিজেনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে জটলা ছিল সাধারণ যাত্রীদের।
বাসের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় মোড়গুলোতে গাড়ি থামলে সেখানে উঠতে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। প্রতিটি বাসে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। গাড়ি না পেয়ে কেউ কেউ হেঁটে কিংবা রিকশা ও মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। দূর গন্তব্যের যাত্রীরা রওনা হচ্ছেন ট্রাকে কিংবা মাইক্রোবাসে চড়ে।
নতুন ব্রিজে গাড়ি অপেক্ষারত অবস্থায় কথা হয় মো. বাহাদুর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি তাঁর মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে সকালে চট্টগ্রাম শহরে এসেছিলেন। এখন শহর থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছেছেন কিন্তু গাড়ি পাচ্ছেন না।
বাহাদুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিরোধী দল বিএনপির হরতাল-অবরোধের সময় আজকের মতো পরিস্থিতি আমাদের পড়তে হয়নি। তখন সীমিত হলেও গাড়ি চলেছে। আজ সকালে গাড়ি বন্ধ ছিল। কিন্তু মায়ের অসুস্থতার কারণে বাধ্য হয়ে শহরে আসতে হয়েছে। লোকাল সিএনজি করে শহরে এসেছি। যাওয়া-আসা বাবদ সবাই ডাবল ভাড়া নিয়েছে। এখন আবার ডাবল-ভাড়া দিয়ে অন্য গাড়িতে করে বাড়িতে যেতে হবে। বাসে যাচ্ছি না ভিড়ের কারণে। এ জন্য অপেক্ষা করছি অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় কি না তা দেখার জন্য।’
সকালে নগরের চান্দগাঁওয়ের এক কিলোমিটার এলাকায় কয়েকটি দূরপাল্লার বাস কাউন্টারের সামনে নারী ও শিশু যাত্রীদের জটলা দেখা যায়। কিন্তু কাউন্টারগুলো ছিল বন্ধ। তাঁরা একে অপরে হা-হুতাশ করছিলেন। এমন অবস্থায় সেখানে দুজন লোক একটি বড় ভারী কার্টন নিয়ে একটি সিএনজি থেকে নামেন। তখন কক্সবাজার ও টেকনাফগামী একটি কাউন্টারের কর্মচারী তাঁদের জানান, গাড়ি যাবে না দুদিন। যেখান থেকে এসেছেন সেখানে চলে যান। দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।
দুজনের মধ্যে আব্দুল সালাম নামে একজন বলেন, ‘টেকনাফ যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এখন কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। বিকল্পভাবে যেকোনো প্রকারে আমাদের টেকনাফে পৌঁছাতে হবে।’ পরে আব্দুস সালামসহ সেখানে থাকা অন্যযাত্রীরা বিকল্প যানবাহন হিসেবে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রোবাস ট্রাক চালকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।
নগরের ইপিজেডে একটি কারখানায় কর্মরত তারেকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অনেকক্ষণ দাঁড়ানোর পর খুব কষ্টে একটি বাসে চেপে বহদ্দারহাট থেকে ইপিজেডে পৌঁছেছি। এমনিতে গরম, তার মধ্যে বাসের ভেতর উপচেপড়া ভিড় ছিল। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মরতে ধরছিলাম।’
এদিকে নগরীর বহদ্দারহাট-মুরাদপুরে রাস্তায় চলাচল করা ৪-৫টি বাস ভাঙচুর করেছে ধর্মঘট পালনকারীরা। এর মধ্যে স্পেশাল বাস সার্ভিসের বাসও রয়েছে। সড়কগুলোতে বাসের জানালার ভাঙা টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বহদ্দারহাটের পাশাপাশি মুরাদপুরেও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
বহদ্দারহাটে স্পেশাল বাস সার্ভিস মেট্রো প্রভাতির কাউন্টার ইনচার্জ মো. রাকিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকাল ১০টা নাগাদ কয়েকজন লোক এসে আমাদের ৮টি বাস আটকে রাখে। এর মধ্যে একটি বাস ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের একটি বাস ভাঙার পাশাপাশি এই মোড়টির ১০ নম্বর রুটে আরও একটি বাস ভাঙচুর করে তাঁরা।’
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে সামান্য হাতাহাতি হয়েছিল। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, শহরের অভ্যন্তরে রিকশাসহ অন্যান্য ছোট ছোট যানবাহন থাকায় যাত্রী সাধারণের তেমনটা সমস্যা হয়নি। তবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় দূরপাল্লার যাত্রীদের একটু সমস্যা হয়েছে। এটা ছাড়া শহরের অভ্যন্তরে পিকেটিং বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ধর্মঘটের বিরোধিতা করে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদসহ আরও কয়েকটি সংগঠন।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে শ্রম আইন পরিপন্থী বেআইনি এই ধর্মঘট আহ্বানকারী চিহ্নিত ও পেশাদার চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করছি।
প্রশাসনের সঙ্গে ধর্মঘটকারীদের বৈঠক
ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে রোববার বেলা ৩টা নাগাদ পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে এক বৈঠক হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রাউজান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
চট্টগ্রামে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলিসহ তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের চান্দগাঁও থানার টেকবাজার এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
১ মিনিট আগেসিলেটে ১ কোটি ২১ লাখ টাকার চোরাই পণ্য আটক করেছে বিজিবি। গতকাল বৃহস্পতি ও আজ শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব আটক করা হয়।
১৮ মিনিট আগেচট্টগ্রাম নগরে আত্মীয়ের বাসা থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর মনছুরাবাদ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডাবলমুরিং থানা-পুলিশ।
২১ মিনিট আগেকিশোরগঞ্জে সাবেক জেলা প্রশাসক পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে ছোট ভাইকে পারিবারিক বাসাবাড়ি থেকে উচ্ছেদ এবং সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার শহরের গৌরাঙ্গবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলেন ছোট ভাই আ. করিম মোল্লা।
৩৪ মিনিট আগে