নবীনগরে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েসহ ‘ঋণে জর্জরিত’ মায়ের বিষ খেয়ে আত্মহত্যা

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
Thumbnail image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একই পরিবারের চারজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের এক দিন না যেতেই ঋণে জর্জরিত মা-মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল রাতে উপজেলার ইব্রাহিমপুর ও কাঁঠালিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

মারা যাওয়া দুজন হলেন, নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মজিবুর রহমানের স্ত্রী নূরতারা বেগম (৫৫) ও তাঁর মেয়ে পাশের কাঁঠালিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী সবুজ মিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের (২৬)।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নূরতারা বেগম দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে বিভিন্ন সমিতি থেকে ক্ষুদ্রঋণ তুলেছিলেন। তা ছাড়া তাঁর মেয়ে সোনিয়া আক্তারের কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার এনেছিলেন। মেয়ের টাকা-স্বর্ণালংকার দিতে না পারা ও সমিতির কিস্তির চাপে ছিলেন নূরতারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নাতনিকে দিয়ে কাঁঠালিয়া গ্রামে মেয়ের কাছে বিষের বড়ি পাঠান তিনি। দুপুরে মা বড়ি খেয়ে মেয়েকে ফোনে জানালে মেয়েও বড়ি খান। পরিবারের লোকজন তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুজনকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়। কুমিল্লা নেওয়ার পথে দুজনই মারা যান। সোনিয়া আক্তার অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে।

সোনিয়া আক্তারের পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে বলে, ‘সকালে আম্মা আমাকে বলেছে, নানি রাস্তায় আসবে আমাকে ১ হাজার টাকা দিতে এবং সঙ্গে একটা ব্যাগ দিবে। কেউ যেন জানতে না পারে। আমি নানির কাছ থেকে টাকা ও ব্যাগ নিয়ে বাসায় আসি। এ সময় আমার ছোট বোন মজা খাওয়ার জন্য কান্না শুরু করে। বোনকে সঙ্গে দিয়ে আম্মা আমাকে দোকানে পাঠিয়ে দেয়। মজা কিনে বাসায় গিয়ে দেখি আম্মা দরজা বন্ধ করে আছে। ডাকাডাকি করলেও দরজা না খোলায় আমি চিৎকার শুরু করি। সবাই এসে দরজা ভাঙ্গে। তখন আম্মা বমি করতে ছিল। পরে বাড়ির লোকজন আম্মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

নূরতারা বেগমের ছেলের বউ লিজা বেগম বলেন, তাঁর শাশুড়ি দুপুরে বাইরে থেকে ঘরে এসে শুয়ে পড়েন। বিদেশে দুই ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলার কিছুক্ষণ পর বমি করতে থাকেন। পরে বাড়ির লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

নূরতারা বেগমের স্বামী মজিবুর রহমান বলেন, ‘সকালে আমি কৃষি কাজে গিয়েছিলাম। বিকেলে বাড়ি আসার পথে জানতে পারি, আমার স্ত্রী ও মেয়ে কেড়ির বড়ি খাইছে। এই খবর শুনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’ তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সমিতি ও মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো ঋণ ছিল আমাদের পরিবারের। আমার দুই ছেলে বিদেশে রয়েছে। তারা তো টাকা পাঠাচ্ছে। তারপরও কেন আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে মরতে হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে রাত ১০টার দিকে দুজন কীটনাশক খাওয়ার রোগী এসেছিল। তাঁদের আমরা ওয়াশ দিয়েছি। অবস্থা খারাপ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাঁদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত