চট্টগ্রামে পাঁচ নারী উদ্যোক্তার অন্যরকম ‘বৈঠক’

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

২০২০ সালের মাঝামাঝি করোনা মহামারির প্রকোপে যখন লকডাউনে সবার ঠাঁই ঘরের চৌহদ্দিতে তখনই নতুন কিছু করার আগ্রহ জাগে আইনজীবী নূরজাহান ইসলামের মাথায়। মন দেন প্রিয় মিষ্টান্ন বানানোর দিকে। কয়েক দিন পর হাত দেন মসলা তৈরিতেও। অদ্বৈত মল্ল বর্মণের স্মৃতিবিজড়িত তিতাস নদীর পাড়ের এই নারী ‘তিতাস কন্যা’ নামে অনলাইনে পেজ খুলে শুরু করেন দেশীয় খাবার ও মসলা বিক্রির ব্যবসা। 

শখের বসে বছর দু-এক আগে শুরু করা সেই উদ্যোগ বেশ সাড়া পেয়েছে। তবে মনে একটি খেদ রয়েই গিয়েছিল। সেটি হলো—অনলাইনে বিক্রি বলে ক্রেতাদের সঙ্গে দেখা না হওয়া। সেই ‘দূরত্ব’ ঘোচাতে ভিন্ন এক উদ্যোগ নিয়েছেন নূরজাহানসহ পাঁচ নারী উদ্যোক্তা। ঈদকে সামনে রেখে ‘বৈঠক’ নামে দুই দিনের এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন তাঁরা। চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশীর শেখ রেসিডেন্স নামের একটি ভবনের নিচ তলায় আয়োজিত এই প্রদর্শনী শেষ হয়েছে গত শনিবার। 
 
নূরজাহান ছাড়াও প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া বাকি চার উদ্যোগ হলো—পোশাক নিয়ে ‘মৌরিতা’, গয়না নিয়ে ‘মাদুর’, বিভিন্ন নান্দনিক উপহার সামগ্রী নিয়ে ‘বিচিত্রা’, বিভিন্ন দেশীয় খাবার নিয়ে ‘হুমা’স কিচেন’। এই চার নারীরও উদ্যোক্তা হওয়া হয়ে ওঠা করোনা মহামারির গুমোট-বদ্ধ সময়েই। 

গতকাল দুপুরে প্রদর্শনীস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ২০ বাই ২০ ফুটের একটি কক্ষের ভেতরে চারদিকে বিভিন্ন স্টল। কোনো স্টলে দেশীয় খাবার, কোনোটিতে শোভা পাচ্ছে নানা পদের গয়না, কোথাও রং-বেরঙের আলপনার পোশাক। আর মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় মাদুর বিছিয়ে চলছে গল্প–আড্ডা, সঙ্গে বিকিকিনি। 

এই পাঁচ নারী উদ্যোক্তার তিনজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে বিভিন্ন পেশায় ব্যস্ত। তাঁদেরই একজন মেহের নিগার। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই শিক্ষক অবসরে কাজ করেন পোশাকের ডিজাইন নিয়ে। পোশাকের গায়ে আঁকেন নানা আলপনাও। 

এমন ভিন্ন আয়োজনের কারণ জানতে চাইলে মেহের নিগার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা যেহেতু সবাই অনলাইন মাধ্যমে কাজ করি, তাই ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি কথা হয় না। ক্রেতাদেরও শুধু ছবি দেখেই পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা–সাক্ষাতের জন্যই এই আয়োজন।’ 

পুঁতির মালা গেঁথে গেঁথে নানা রকমের গয়না বানান তাজমিন ঝুমুর। তিনি বলেন, ‘কাঁচামাল কিনে নিজেই গয়না বানাই। বেশ সাড়া পাচ্ছি।’ 

ঘরোয়া পরিবেশে মেলা আয়োজনের পেছনের গল্প শোনান উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলেন, ‘শুধুমাত্র দেশীয় পণ্য নিয়ে কোনো মেলা চট্টগ্রামে হয়নি। আমরাই শুরু করলাম। সে জন্য চেয়েছি সেটি ঘরোয়া আমেজে করতে। কেননা তাতে আন্তরিকতা থাকবে।’ 

প্রদর্শনীতে পণ্য কিনতে নগরীর টেক্সটাইল এলাকা থেকে এসেছিলেন মাফরুহা জামান। এমন প্রদর্শনী দেখে বেশ উচ্ছ্বসিত এই নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশীয় সব জিনিস নিয়ে এমন ভিন্নধর্মী মেলা আগে কখনো দেখিনি। শুধু দেশীয় বলে না। এখানকার সব পণ্যই ইউনিক।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত