ছাত্র আন্দোলনে হামলা: মিরপুরের মামলায় নাসিরনগরের কৃষককে ফাঁসানোর অভিযোগ

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি 
Thumbnail image
নাসিরনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় করা মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরের কৃষক মো. সোবহান মিয়াকে (৬০) আ. লীগের নেতা বানিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। একই ঘটনায় তার দুই ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মিরপুর মডেল থানায় ৪৮ জনকে আসামি করে নাদিয়া আক্তার রিয়া নামে এক নারী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

আজ বুধবার নাসিরনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মো. সোবহান মিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি ২৫-৩০ বছর ধরে ঢাকা যাই না। ঢাকার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নাই। বাড়ির পাশের জমিতে আমি কৃষিকাজ করি। গ্রামের পাশে বাজারে আমার দুই ছেলে ব্যবসা করে। তাদের জন্য প্রতিদিন বাজারে খাবার নিয়ে যাই। আমি নাকি কার পায়ের মধ্যে গুলি মারছি! ঢাকার এক মামলায় তারা আমার এবং দুই ছেলের নাম দিয়েছে।’

সোবহান মিয়ার মেয়ে উম্মে খাদিজা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার পরিবারের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এখন শুনছি, আমার বাবা আর ভাইদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমার বাবা এবং পরিবারের কোনো সদস্য কখনোই মিরপুরে যায়নি। আমার বাবা একজন কৃষক ও দুই ভাই বাজারের ব্যবসা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জন্য যারা আমাদের মামলার হুমকি দিত, এখন তারাই আমাদের মামলা দিচ্ছে। তা হলে আন্দোলন করে লাভ কি?’

ভুক্তভোগীর ছেলে ও মামলার আসামি জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, এই মামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি চক্র জড়িত আছে। আমার চাচার সঙ্গে জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে আমাদের। এ ঘটনায় আমার চাচা রউফ মিয়া ও চাতলপাড় ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া মামলা বাণিজ্যের এ মামলায় আমাদের নাম দিয়েছে।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকেলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কালাম উল্লাহ্ নামে এক ব্যক্তি মিরপুর শপিং কমপ্লেক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় গত ২১ নভেম্বর নাদিয়া আক্তার রিয়া নামে এক নারী বাদী হয়ে ৪৮ জনকে আসামি করে ঢাকার মিরপুর থানায় একটি মামলা করেন।

এ মামলায় মো. সোবহান মিয়াকে ১৮ নম্বর আসামি করা হয়। তাকে উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লতিফ হোসেন বলেন, ‘চাতলপাড় ইউনিয়নে সোবহান মিয়া নামে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নাই। চাতলপাড় ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন অরুপ রায় চৌধুরী।’ এ বিষয়ে বাদী নাদিয়া আক্তার রিয়ার মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পর সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়া মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই সংক্রান্ত প্রায় অনেকগুলো মামলা আমাদের থানায় হয়েছে। এখনই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না। তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলতে পারব।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট একেএম কামরুজ্জামান মামুন বলেন, ‘এই ধরনের মিথ্যা মামলা হওয়াটা দুঃখজনক। একটা নিরপরাধ ব্যক্তিও যেন মিথ্যা মামলার শিকার না হয় এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত