Ajker Patrika

সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা: প্রণোদনার সুবিধাবঞ্চিত গভীর সমুদ্রে যাওয়া জেলেরা

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৩, ১৩: ৫৪
সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা: প্রণোদনার সুবিধাবঞ্চিত গভীর সমুদ্রে যাওয়া জেলেরা

মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা ২৩ জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এই সময়ে জেলেদের প্রণোদনা হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি জেলে পরিবারকে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সেই মোতাবেক প্রথম কিস্তির ৫৬ কেজি চাল বিতরণও করা হয়েছে। কিন্তু নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় গভীর সমুদ্রে যাওয়া অধিকাংশ জেলে এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, হাতিয়ায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ৮০০। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৭০। এ বছর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় প্রথম কিস্তিতে এই উপজেলায় ২৭২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৪ হাজার ৮৭৩ জেলে পরিবারের মাঝে ৫৬ কেজি করে বিতরণ করা হয়। দ্বিতীয় কিস্তিতে এসব জেলে আরও ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। 

বুড়িরচর ইউনিয়ন জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি জবিয়ল হকের দাবি, সরকারি হিসাবে হাতিয়ায় নিবন্ধিত জেলে ২০ হাজার ৮০০। এর মধ্যে সরকারি চাল পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৭৩ জন। অন্য ১৬ হাজার জেলে কিছুই পাননি। তাঁদেরকে বেকার থেকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করতে হচ্ছে। 

জবিয়ল হক জানান, সরকারি হিসাবের বাইরে অনেক জেলে রয়েছেন যাঁদের নিবন্ধন হয়নি। নিবন্ধন না থাকায় তাঁরা সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছেন। 

আবুল বাসার বয়স (৫৫)। ৫ সন্তানের বাবা ওই ব্যক্তি পেশায় জেলে। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। দীর্ঘ ৩৫ বছর এই পেশায় থাকলেও জেলে হিসেবে তাঁর নাম নিবন্ধন হয়নি। নিবন্ধন না থাকায় সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তিনি। ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করতে হচ্ছে তাঁকে। সংসার চলছে অর্ধাহারে, টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে। 

মাঝি আবুল বাসার আজকের পত্রিকাকে জানান, হাতিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর বাড়ি। স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাঁর ৭ সদস্যের সংসার। দুই মেয়ে বিয়ে দিলেও ছোট দুজন পড়ালেখা করে স্থানীয় বঙ্গবন্ধু পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে। সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন তিনি। আর এতে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাঁর। মাঝেমধ্যে ট্রলারের মালিক থেকে অগ্রিম কিছু টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। 

বাসার মাঝি হাতিয়ার কাজির বাজারের নুর ইসলাম মেম্বারের মালিকানা এমভি নুর ইসলাম-২ মাছধরা ট্রলারের মাঝি। তাঁর সঙ্গে একই ট্রলারে হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের আরও ১৮ জন মাঝিমাল্লা কাজ করেন। তাঁদের কেউ জেলে হিসেবে নিবন্ধিত নন। সবার অবস্থা অনেকটা একই। 

বাসার মাঝির মতো গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়া অনেক মাঝিমাল্লার অবস্থাই প্রায় এক। স্থানীয় সূর্যমুখী বাজারে একটি চায়ের দোকানে আজকের পত্রিকার এ প্রতিনিধির কথা হয় আলাউদ্দিন নামে আরেক মাঝির সঙ্গে। তিনিও একই মালিকের এমভি নুর ইসলাম-১ নামে একটি ট্রলারের মাঝি। আলাউদ্দিনের দাবি, তাঁর নামে নিবন্ধন আছে অথচ সরকারি কোনো সুবিধা তিনি পাননি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়া অনেক মাঝিমাল্লা বলেন, ‘আমরা ১২ মাস সমুদ্রে থাকি। তীরে আমাদের বেশি দিন থাকা পড়ে না। তাতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে ভালো সম্পর্কও হয় না। এই সুযোগে তীরে থাকা জেলেরা সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নেন। এ ছাড়া ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুধু গভীর সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের জন্য। কিন্তু যাঁরা নদীতে মাছ শিকার করার সুযোগ পান, তাঁরা আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার চালও পান।’ 

হাতিয়া উপজেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবির উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁদের সমিতির অধীনে হাতিয়ায় ২৫৭টি বড় মাছ ধরা ট্রলার রয়েছে। এই ট্রলারগুলো ১২ মাস গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সব ট্রলার তীরে অবস্থান করছে। প্রতিটি ট্রলারে কম-বেশি ২০ জন করে মাঝিমাল্লা রয়েছেন। এতে বেকার সময় পার করছেন এসব ট্রলারের প্রায় ৫ হাজার জেলে। 

নবির উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, এখন ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। সরকারিভাবে দেওয়া সুবিধাগুলো গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেদের পাওয়ার কথা। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে, ২৫৭টি ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের মধ্যে পাঁচজনও পাওয়া যাবে না, যাঁরা সরকারি সুবিধা পেয়েছেন। 

এ ব্যাপারে একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তাকে সরাসরি বলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। 

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মানস মণ্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিবন্ধন নেই, জেলে কার্ড নেই, এমন লোকদের আমরা সরকারি কোনো সুবিধা দিতে পারি না।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে মানস কুমার বলেন, ‘এখন যাঁরা সুবিধা পাচ্ছেন তাঁরাও জেলে। কে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যায়, কে যায় না তা দেখার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের। তবে হাতিয়ায় যে পরিমাণ জেলে রয়েছেন, তাতে সরকারিভাবে দেওয়া বরাদ্দ অনেকটা অপ্রতুল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ভিসা নীতি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে: বলছেন কূটনীতিকেরা

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রদল ও এনসিপি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিলুপ্তের সিদ্ধান্ত হয়নি, নাহিদের মন্তব্যের জবাবে উমামা

আ.লীগ নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত