Ajker Patrika

কাশ্মীরে হাউসবোটে অগ্নিকাণ্ড: বাবাকে খুঁজছে ছোট্ট আরাধ্য ও নেফারতিতি

নুরুল আলম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) 
কাশ্মীরে হাউসবোটে অগ্নিকাণ্ড: বাবাকে খুঁজছে ছোট্ট আরাধ্য ও নেফারতিতি

ভারত শাসিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা ডাল লেকে হাউসবোটে অগ্নিকাণ্ডে নিহত তিনজনের মধ্যে রাঙামাটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল নাথের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামের বনমালী উকিল বাড়ির স্বপন কুমার নাথের সন্তান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১১ নভেম্বর) ভোর সোয়া ৫টার দিকে ডাল লেকের নয় নম্বর ঘাটের কাছে আগুনের সূত্রপাত হয়। একটি হাউসবোট থেকে পাশে নোঙর করে রাখা আরও চারটি হাউসবোটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পুড়ে যাওয়া পাঁচটি হাউসবোটের একটিতে ছিলেন অনিন্দ্যসহ বাংলাদেশি তিনজন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে তিনজনই মারা যান। এ সময় আরও সাতজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।

দুর্ঘটনায় নিহত ইমন দাশ গুপ্তের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিনাজুরীতে। অপরজন আসিফ মঈন উদ্দিনের বাড়ি একই উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নে।

তাঁদের শরীর সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

অনিন্দ্য কৌশলের চাচাতো ভাই মৃণাল কুমার নাথ বলেন, ‘দাদা সপরিবারে কর্মস্থল রাঙামাটি থাকতেন। দাদা গত ৩ নভেম্বর ভারতে গেছেন। ১৩ নভেম্বর ফিরে আসার কথা ছিল। শুক্রবার রাত ১০টায় স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা রানী দেবীকে ফোনে জানান, তাঁরা তিন বন্ধু কাশ্মীরে আছেন। এটিই সর্বশেষ কথা।’

মৃণাল কুমার আরও বলেন, ‘অনিন্দ্যর ভ্রমণের পাশাপাশি ভারতে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। এভাবে দাদা ছোট ছোট অবুঝ দুটি শিশু রেখে চলে যাবেন ভাবতে পরছি না। এক বছর বয়সী ছেলে আরাধ্য এবং চার বছর বয়সী মেয়ে নেফারতিতি মায়ের কাছে জানতে চাচ্ছে, বাবা কখন আসবে। বাবা আসলে তাদের জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবে। বাবা আসলেই তারা খাবে—মায়ের সাথে এ নিয়ে বায়না ধরছে। স্বজনেরা মিথ্যে সান্ত্বনা দিয়ে তাদের ঘুম পারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

ভারত থেকে রোববার রাত ৯টায় ডিএনএ রিপোর্ট পজিটিভ আসার কথা জানানো হয়েছে। ভারতে থেকে অনিন্দ্যর ফুপাতো বোন ময়না দেবী সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে কাশ্মীরে যাবেন। বাংলাদেশ থেকে স্বজনেরাও যাবেন।

অনিন্দ্য কৌশল নাথের বাবা স্বপন কুমার নাথ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অবসর নিয়েছেন। এরপর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সর্বশেষ কর্ণফুলী টানেলের সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছেলের শোকে তিনি নির্বাক। তাঁর দুই সন্তান—অনিন্দ্য কৌশল ও কৌশাল তূর্ণা।

গত শনিবার সকালে কাশ্মীরে দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে প্রথমে জানতে পারেন অনিন্দ্যর কর্মস্থল রাঙামাটি গণপূর্তের কর্মকর্তারা। রোববার সকালেই অনিন্দ্যদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ছুটে আসেন রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জয় বড়ুয়া ও উপ–সহকারী প্রকৌশলী লেনিন চাকমা। এরপর বাড়ি থেকে বারবার চেষ্টা করেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে অফিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন তাঁরা। পরে অনিন্দ্যর ফুপাতো ভাই দেবব্রত নাথ কাশ্মীরের শ্রীনগরে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন।

অনিন্দ্য কৌশলের এক বছর বয়সী ছেলে আরাধ্য স্পৃহা পৃথু এবং চার বছর বয়সী কন্যা নেফারতিতি বারবার বাবাকে খুঁজছে। স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা রানী দেবী শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন—চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী ইমন দাশ গুপ্ত এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসিফ মঈন উদ্দিন। ইমন দাশ গুপ্তের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বিনাজুরীতে। আসিফ মঈন উদ্দিনের বাড়িও রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নে।

ভারতীয় গণমাধ্যম এসেছে, প্রাথমিক তদন্তে কাশ্মীরের কর্মকর্তারা ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত