কাশিমপুর কারাগার: ৭ হাজার বন্দির আধুনিক হাসপাতালে নেই চিকিৎসক 

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ২৩: ১০
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ২৩: ৫৬

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বন্দীদের চিকিৎসার জন্য ২০০৩ সালে গড়ে তোলা হয় ২০০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই চিকিৎসক ও জনবল। এ কারণে অসুস্থ বন্দীরা চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন, নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ। 

কারাগার সূত্রে জানা যায়, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ ও ২ এবং হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার মিলিয়ে বন্দীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫৯০ জন। এসব কারাগারে অসুস্থ বন্দীদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে আছে উন্নতমানের অস্ত্রোপচার কক্ষ, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, প্যাথলজি ল্যাব ইত্যাদি। চিকিৎসা দিতে একজন তত্ত্বাবধায়ক, দুজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট, নয়জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট, পাঁচজন আবাসিক চিকিৎসক, নয়জন মেডিকেল অফিসার, দুজন সহকারী সার্জন, একজন প্যাথলজিস্ট, দুজন রেডিওলজিস্ট, দুজন ফার্মাসিস্ট ও একজন ডিপ্লোমা নার্সসহ ৩৩টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু ১৯ বছরেও একজন চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়নি। 

সূত্র আরও জানায়, দীর্ঘদিন বন্দিজীবন, বার্ধক্য ও বদ-অভ্যাসসহ নানা কারণে বন্দীরা যক্ষ্মা, টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগে বেশি আক্রান্ত হন। স্থায়ী চিকিৎসক না থাকায় যথাসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় বেশি ঝুঁকিতে থাকেন হৃদ্রোগীরা। 

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারগারের জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, ‘কারাগার থেকে হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। হৃদরোগে আক্রান্তসহ গুরুতর অসুস্থ বন্দিকে হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি, নিরপত্তা, পথের যানজটসহ হাসপাতালে নিতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা। কারাগারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত বন্দিকে কারা হাসপাতালে প্রাথমিক সেবা দিয়ে দ্রুত নেওয়া হয় তাজউদ্দীন মেডিকেলে। অনেক সময় কারাগার থেকে হাসপাতালে স্থানান্তরের পথে সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে পথেই ঘটে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা।’ 

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার আমিরুল ইসলাম জানান, ‘গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রেষণে দুজন চিকিৎসক নিযুক্ত আছেন। তাঁরা পালাক্রমে হাসপাতালে প্রতিদিন এসে চিকিৎসা দেন। অসুস্থ বন্দীদের অবস্থা গুরুতর হলে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে বন্দী রোগীদের জন্য প্রিজন সেল বা ওয়ার্ড নেই। ফলে বন্দীদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই।’ 

তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাশিমপুর কারাগার থেকে এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন দুই-তিনজন রোগী আসেন। বেশি আসেন হৃদ্রোগী। অনেককে চিকিৎসা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। যাঁরা মারা যান তাঁদের বেশির ভাগই হৃদ্রোগী এবং কারাগার থেকে হাসপাতালে আনার পথেই তাঁদের মৃত্যু হয়।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন কারাভোগ, ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ইত্যাদি কারণে অনেক বন্দী হতাশায় ভোগেন। তাঁদের নিয়মিত কাউন্সেলিং ও বিশেষ চিকিৎসা দরকার হয়। এ জন্য নিয়ম অনুযায়ী কারাগারে একজন মনোরোগ চিকিৎসক থাকা জরুরি। মহিলা কারাগারে গাইনিসহ অন্যান্য রোগের কোনো চিকিৎসকও নেই। 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কারা হাসপাতালে স্থায়ী চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জন্য বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত