প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ময়লার ভাগাড়, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ৪১
Thumbnail image

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শোলাকিয়া এলাকায় অবস্থান শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। প্রতিদিন এর শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে হয় নাক চেপে। কারণ বিদ্যালয়টির সামনেই রয়েছে একটি ময়লার ভাগাড়, যেখান থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। এতে মশা-মাছির উপদ্রবসহ দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বাসিন্দারা। নিজেদের এমন ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। 

জানা গেছে, ১৯৯০ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টিতে এখন ১৬২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এটি। সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির সামনেই সড়ক ঘেঁষে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। দিন যত যাচ্ছে রাস্তার পাশের ময়লার ভাগাড় ততই বড় হচ্ছে। নষ্ট হওয়া শাকসবজি, হোটেলের পচা-বাসি খাবার, মুরগির নাড়িভুঁড়ি এবং বাসাবাড়ির ময়লাসহ সব ধরনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এখানে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। উৎকট গন্ধের কারণে ক্লাসরুমে বসে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য। পাশাপাশি নাক চেপে পার হচ্ছে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা পথচারীরাও। 

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বখতিয়ার ও পলাশ বলে, আমরা স্কুলে যতক্ষণ থাকি, ততক্ষণ দুর্গন্ধের মধ্যে কাটাতে হয়। দুর্গন্ধের কারণে বমি করে দিই। এ রকম অবস্থা অনেক দিন থেকে চলছে। এই স্কুলে ক্লাস করা অনেক কষ্টকর। 

অভিভাবক মো. লিটন ও খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্গন্ধে টেকা যায় না। তার পরও জোর করে স্কুলে পাঠাই। বাচ্চারা বমি করে দেয়, এত দুর্গন্ধ! স্কুলটির সামনে খেলার মাঠ রয়েছে, সেই মাঠেও খেলাধুলা করতে পারে না আমাদের বাচ্চারা। আমরা জোর আবেদন জানাচ্ছি এখানকার ভাগাড় সরিয়ে অন্য কোথাও স্থাপন করার। আমাদের বাচ্চাদের বাঁচান। এমন চলতে থাকলে বাচ্চারা বাঁচবে না।’ 

বিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা বলছেন, পৌরসভায় বারবার অভিযোগ জানানোর পরেও এখান থেকে ময়লার ভাগাড় সরানো হয়নি। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই। 

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আবিদুর রহমান ভূঞা বলেন, দুর্গন্ধের কারণে শিশুর মানসিক ও শারীরিক ঝুঁকি রয়েছে। ময়লাতে মশা-মাছিসহ নানা ধরনের পোকামাকড় থাকে। এই মশা থেকে ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার আশঙ্কা আছে। মাছির কারণে শিশুদের পেটের পীড়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। 

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ইয়াসমীন সুলতানা বলেন, ‘দুর্গন্ধের কারণে দরজা-জানালা বন্ধ করে ক্লাস নিতে হয়। তার পরও সম্ভব হয় না। এত দুর্গন্ধ! এভাবে চলতে থাকলে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাবে। বিষয়টির সুরাহা চাই।’ 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিশোরগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়ক অভি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের (ডিডিএলজি) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। আশা করি খুব দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হবে। 

পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সুলতান মিয়া বলেন, আমি এ বিষয়ে পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের (ডিডিএলজি) সঙ্গে কথা বলব। খুব দ্রুত যেন এই জায়গা থেকে ভাগাড় সরিয়ে অন্য কোথাও স্থাপন করা হয়। 

স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মুকতাদিরুল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি সবে পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বসেছি। আমি আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জেনেছি। সবাইকে নিয়ে বসব। কোথায় কী সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করে তা সমাধান করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত