Ajker Patrika

আফসোসের হাওয়ায় ভারী কয়লাঘাট

সাবিত আল হোসেন
আফসোসের হাওয়ায় ভারী কয়লাঘাট

একসঙ্গে এত লাশ কখনোই দেখেননি সৈয়দপুরের কয়লাঘাট এলাকার বাসিন্দারা। লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃতদের অধিকাংশ যাত্রীই মুন্সিগঞ্জের। কিন্তু শোকের ছায়া পড়েছে পুরো কয়লাঘাট পুবালি সল্ট এলাকায়। নদী পেরিয়ে মদনগঞ্জ ট্রলার ঘাটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরা প্রতিবারই তাকিয়ে থাকেন নির্মাণাধীন ব্রিজটির নিচে। গত ৪ এপ্রিল ঠিক এই স্থানেই সলিল সমাধি হয়েছে ৩৪ জনের।

কয়লাঘাটের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একটি মেহগনি গাছ। সে ব্যথাতেই কি সে নির্জন হয়ে আছে? নাকি আগেও এমন ছিল? গাছেদের কোটরে যে কত ব্যথা জমে থাকে, তার খবর কে রাখে! গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত যে কয়েকটি মরদেহ উত্তোলন করা হয় শীতলক্ষ্যা থেকে, তার সবকয়টির স্থান হয়েছিল কয়লাঘাট সংলগ্ন এ মেহগনি গাছের নিচে। উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা ঠিক এই গাছের নিচে মরদেহ রেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। গাছটি বেশ বড় হওয়ায় এর ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল জীবিত, মৃত সবাই। ৩৪ লাশের সাক্ষী হয়ে এই গাছ দাঁড়িয়ে থাকবে বহু বছর।

গণমাধ্যমের কাছে এলাকার নাম কয়লাঘাট হিসেবে পরিচিত হলেও স্থানীয়রা পুবালি মিল এলাকা হিসেবে জায়গাটিকে চেনেন। নির্মাণাধীন সেতুর একদম কাছেই ঘাটটির অবস্থান। দুই পাড়ের অধিকাংশ মানুষ স্থানীয় কারখানার সঙ্গে নিজেদের জীবন–জীবিকা জড়িয়ে নিয়েছেন। তবে বিকেল নামতেই ধীরে ধীরে জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে কয়লাঘাট। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ট্রলার চলাচল। সুনসান নীরব এই ঘাটে অসংখ্য লাশের উপস্থিতি, আর হৃদয় বিদারক কান্না শিহরণ তোলে এখানে আসা সবার মনে। বাতাসও কি একটু গুমোট হয়ে বয় না!

স্থানীয় বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘লাশ পাওনের পর থিকা এই এলাকার মানুষের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসছে। আগে মানুষ বিকালে এখানে (ঘাট) আড্ডা দিত। কিন্তু এখন আসলে মানুষের মন খারাপ হইয়া যায়। যারা ওই পাড়ে যাইব, তারাও আফসোস করতে করতে যায়। যেমনে জাহাজটা লঞ্চরে ডুবাইসে ওইটা দেইখা মানুষ ট্রলারে পার হইতেও ভয় পায়। ব্রিজের কাম শেষ না হইলে এমন ভয় মানুষ সব সময় পাইব।’

গত ৬ এপ্রিল সকালে নদীর তীরে এসে ডুবে যাওয়া লঞ্চযাত্রীদের মরদেহ দেখতে পেয়েছিলেন পূবালী মিল এলাকার বাসিন্দা আকবর। ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ হাতে নিয়ে ছুটে এসেছিলেন ঘাটের দিকে। ভেবেছিলেন আজ যদি নিখোঁজ ব্যক্তিদের মরদেহের খোঁজ পাওয়া যায়। পেয়েছিলেনও খোঁজ। তবে সেসব মরদেহ ছিল বিকৃত অবস্থায়। তারপর থেকেই ট্রমায় ভুগছেন তিনি। প্রথম দিন ব্যাগে মোড়ানো লাশ দেখে খুব বেশি খারাপ না লাগলেও পরদিন বিকৃত মরদেহ দেখার পর থেকে দিনরাত মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যার কয়লাঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি সাবিত আল হাসানকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয় এসকেএল-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজ। লঞ্চডুবির পর ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে ঘাতক কার্গো জাহাজ ও তার ১৪ স্টাফকে গ্রেপ্তার করে কোস্ট গার্ড। ৯ এপ্রিল আসামীদের আদালতে তোলা হলে জাহাজের চালকসহ পাঁচ আসামীকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত। বাকি নয় আসামীকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত