Ajker Patrika

বিজয়ের দিনে যে চাওয়া সাধারণ মানুষের

অর্চি হক, সাভার থেকে
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫৭
বিজয়ের দিনে যে চাওয়া সাধারণ মানুষের

‘আমরা কোনো গন্ডগোল চাই না। গন্ডগোল হইলেই আমাগো ব্যবসা বন্ধ হইয়া যাইব। না খাইয়া থাকন লাগব।’ বিজয়ের ৫০ বছরে এমনই প্রত্যাশার কথা জানালেন সাভারের বাদাম বিক্রেতা ফরিদুল।

শুধু ফরিদুল নন, আজ বৃহস্পতিবার সকালে সাভারের স্মৃতিসৌধে মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা অসংখ্য মানুষের চাওয়া, এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে আর কোনো দুর্নীতি না হোক। সেই সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত রাখার কথাও ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। 

ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মুশফিকা রহমানও এসেছিলেন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। তিনি বললেন, ‘৫০ বছরে দেশ তো অনেক এগিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে আমরা এগিয়েছি, অর্থনীতিতে এগিয়েছি। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এখানে আরও কাজ করতে হবে।’

বাদাম বিক্রেতা ফরিদুল বলেন, ‘সব যেন ঠিকঠাক চলে। কোনো গন্ডগোল যেন না হয় এইটাই চাওনের। গন্ডগোল না থাকলে মানুষ বাইরে বাইর হইব। আর বাইরে বাইর হইলেই আমাগো বেচাবিক্রি চলব।’ 

স্মৃতিসৌধে পতাকা ও ব্রেসলেট বিক্রি করছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বললেন, ‘এই সময়ে আসলে ভালো বেচাবিক্রি হয়। তাই আসলাম।’

বিজয়ের ৫০ বছরে স্থানীয় বাসিন্দা বীনা মেশ্রার চাওয়া ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত চাকরি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, চাকরি পেতে ঘুষ-দুর্নীতি হলে তরুণ সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর তরুণেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা দেশেরও ক্ষতি। 

স্কুলছাত্রী সোনিয়া আর মুনিয়া দুই বোন, এবারই প্রথম এসেছে স্মৃতিসৌধে। মুনিয়া বলল, এত মানুষের ভিড়। ভালো ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার ছিল। সবাই শুধু ধাক্কাধাক্কি করতেছে। কে যে কোন দিকে যাবে, নিজেরাও জানে না।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসার ফুলে ভরে উঠেছে স্মৃতিসৌধের বেদি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। নারী-পুরুষনির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। বাবা-মায়ের হাত ধরে আসছে শিশুরাও। 

গত বছর করোনার কারণে বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে জনসমাগম ছিল না। তবে এবার সেই আক্ষেপ পুষিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। 

বিজয়ের ৫০ বছরে স্থানীয় বাসিন্দা বীনা মেশ্রার চাওয়া ঘুষ দুর্নীতিমুক্ত চাকরিসাভারের ব্যবসায়ী মনির হোসেন এসেছিলেন তাঁর মেয়েকে নিয়ে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এখানে আসা হয়। গত বছর আসা হয়নি বলে মেয়েটার মন খারাপ ছিল। এবার তাই না এসে পারলাম না। 

এদিন ভোর সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রথমে স্মৃতিসৌধের বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর সময় জাতীয় স্মৃতিসৌধে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক। 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। 

এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। 

এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত