তোফাজ্জল হোসেন রুবেল ও রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর ওই রোডের ১৩টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর নগরীর আরও কিছু স্থানে রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে পুরো রাজধানীকে নিরাপদ করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের কোনো রূপরেখা নেই। পোড়া ভবনটির কী হবে, তা-ও বলতে পারছে না কেউ। ওই ঘটনায় করা পাঁচটি তদন্ত কমিটির মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অন্য কমিটিগুলোও কিছু সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে কোনো সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত কমিটিও কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। অভিযান এখন যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে।’
গত ২৮ মার্চ বিকেলে বেইলি রোডে গিয়ে দেখা যায়, আটতলা গ্রিন কোজি কটেজের নিচে পড়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরা। সামনের ফুটপাত ঘেঁষে ব্যারিকেড দেওয়া। ফুটপাত দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলছে মানুষ। মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম নামের এক পথচারী বলেন, ভবনটির সামনের অংশ পরিষ্কার না করেই ফুটপাত খুলে দিয়েছে। ঝুঁকি ভেবেও চলতে হচ্ছে। সড়ক দিয়ে তো আর হাঁটা যায় না।
সামনে দাঁড়িয়ে পোড়া চিহ্ন দেখছিলেন চার নারী ও এক শিশু। কিছুক্ষণ পর ভবনটি দেখছিলেন মাঝবয়সী আরেক ব্যক্তি। কাছে গিয়ে জানা গেল, তাঁর নাম মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল এখনো ভবনটি পড়ে আছে। মানুষের শোক শেষ হয়ে গেলে আবার আগের মতোই চলবে হয়তো।’
বাইরে থেকে ভবনটি দেখেই এখনো বোঝা যায়, আগুন কতটা ভয়াবহ ছিল। কয়েকটি তলায় পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া আসবাব। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি জমে আছে বেসমেন্টে। নিচতলায় লাগানো ‘ক্রাইম সিন’ লেখা ফিতা। নিচতলায় বসা কয়েকজন পুলিশ সদস্য। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রমনা থানার সহকারী উপপরিদর্শক আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা ভবনের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করছি। ভেতরে কারও ঢোকার সুযোগ নেই। ভবনটিতে যাঁরা ব্যবসা করতেন, তাঁরাও কেউ আসেন না। কিছুই সরানো হয়নি।’
গত ২৯ ফেব্রুয়ারির আগুনে আহত আরও ১৫ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন। নিহতদের পরিবার ও আহত অনেককেই আর্থিক সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এসেছে, তাদের আমরা সহযোগিতা করেছি। নিহতদের ১৩টি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহযোগিতা করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে ১০ হাজার এবং ২ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’
আহত রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বাসায় এসে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাচ্ছি। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় জেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। অফিস থেকেও ওষুধের টাকা দিয়েছিল।’
স্বামীর সঙ্গে ওই ভবনে গিয়ে আহত হয়েছিলেন উম্মে হাবিবা সুমাইয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনো ইনহেলার ব্যবহার করতে হচ্ছে। শ্বাসনালিতে ক্ষত রয়েছে।’
বেইলি রোডের একাধিক দোকানি জানান, গ্রিন কোজি কটেজসহ বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রতিবছর রমজানে দুপুরের পর থেকেই ইফতারি কেনার জন্য ব্যাপক ভিড় থাকত। আগুনের পর বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টগুলোতে বেচাকেনায়ও ভাটা পড়েছে।
গ্রিন কোজি কটেজের পাশের ভবনেই পিৎজা হাট। কর্মী মুনিয়া বলেন, আগে দিনে এক-দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো, এবার ৬০ হাজারের বেশি হচ্ছে না। রোজার শুরুতে অবস্থা আরও খারাপ ছিল।
আগুনের ঘটনায় শুধু কলকারখানা অধিদপ্তরের কমিটি তদন্ত শেষ করেছে। কমিটির সদস্যসচিব ও উপমহাপরিদর্শক মো. আকিদ-উল-হাসান বলেন, দোতলার একটি কফিশপের ইলেকট্রিক কেটলি থেকে আগুনটা লাগে। তারা নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পাশেই সিলিন্ডার থাকায় সেখানে আগুন লেগে রান্নাঘরে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, সিঁড়ির পাশে প্রতিটি তলায় সিলিন্ডার ছিল। ফলে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন থাকায় আগুন বা ধোঁয়া বাইরে যেতে পারেনি। ধোঁয়ার কারণেই অনেকে মারা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তা, লাইসেন্স, শ্রমিকদের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি একটি মামলাও করা হয়েছিল। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনায় ২০-২৫ দিন আগে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। তদন্তকাজ এগোচ্ছে। আলামত সংগ্রহের পর আমাদের ফরেনসিকে পরীক্ষা চলছে। রিপোর্ট এখনো পাইনি।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। চায়ের কেটলি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে গ্যাসের উপস্থিতির ফলে আগুন ছড়িয়ে যায়। ভবন থেকে বেরোনোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ভেন্টিলেশন ছিল খুবই কম। ধোঁয়ার কারণেই অনেকে মারা যায়। ভবনের ধরন পাল্টানো হয়েছে। বাণিজ্যিক অফিস ভবনকে রেস্তোরাঁ করা হয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনাও ছিল না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এর বেশি বলতে পারছি না।’
আগুনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কমিটিকে চার মাসের মধ্যে কারণ অনুসন্ধানসহ এর জন্য কারা দায়ী তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীতে একটি স্থাপনার অনুমোদন এবং সেখানে রেস্তোরাঁ করতে কমপক্ষে ১০টি সরকারি সংস্থার অনুমতি লাগে। সংস্থাগুলো হলো রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, ডিপিডিসি, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা ওয়াসা এবং এনবিআর। গ্রিন কোজি কটেজেও অধিকাংশ সংস্থারই অনুমোদন ছিল।
রাজউকের তদন্তকাজে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব সংস্থার কাছে তদন্তের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তারা জবাব দেয়নি। কীভাবে রেস্তোরাঁটি অনুমোদন পেয়েছিল, তা-ও জানায়নি। ভবনমালিক, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরাঁমালিকদের চিঠি দিয়েও পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় কিছু সুপারিশ দিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) আরিফুল হক বলেন, ‘আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। তারা রাজস্ব বিভাগ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেছে। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগুনের ঘটনায় অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের যেমন দায় আছে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলতে দেওয়ায় বর্তমান কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, স্থাপনাটির এখন যে অবস্থা, তাতে ব্যবহারের আগে সামগ্রিক কারিগরি দিক মূল্যায়ন করে দেখা উচিত। যদি কাঠামোগত ক্ষতি না হয়ে থাকে, তাহলে পুনরায় তা মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা যাবে। তিনি বলেন, আগুনের পর কিছু বিচ্ছিন্ন অভিযান চলেছে। কিন্তু এসব অভিযানে সফলতা আসবে না। পুরো রাজধানীকে নিরাপদ করার জন্য সমন্বিতভাবে কী কী অভিযান চলতে পারে, তার একটি গাইডলাইন তৈরি করা উচিত টাস্কফোর্স বানিয়ে। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি।
রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর ওই রোডের ১৩টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর নগরীর আরও কিছু স্থানে রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে পুরো রাজধানীকে নিরাপদ করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপের কোনো রূপরেখা নেই। পোড়া ভবনটির কী হবে, তা-ও বলতে পারছে না কেউ। ওই ঘটনায় করা পাঁচটি তদন্ত কমিটির মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অন্য কমিটিগুলোও কিছু সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে কোনো সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত কমিটিও কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। অভিযান এখন যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে।’
গত ২৮ মার্চ বিকেলে বেইলি রোডে গিয়ে দেখা যায়, আটতলা গ্রিন কোজি কটেজের নিচে পড়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরা। সামনের ফুটপাত ঘেঁষে ব্যারিকেড দেওয়া। ফুটপাত দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলছে মানুষ। মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম নামের এক পথচারী বলেন, ভবনটির সামনের অংশ পরিষ্কার না করেই ফুটপাত খুলে দিয়েছে। ঝুঁকি ভেবেও চলতে হচ্ছে। সড়ক দিয়ে তো আর হাঁটা যায় না।
সামনে দাঁড়িয়ে পোড়া চিহ্ন দেখছিলেন চার নারী ও এক শিশু। কিছুক্ষণ পর ভবনটি দেখছিলেন মাঝবয়সী আরেক ব্যক্তি। কাছে গিয়ে জানা গেল, তাঁর নাম মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল এখনো ভবনটি পড়ে আছে। মানুষের শোক শেষ হয়ে গেলে আবার আগের মতোই চলবে হয়তো।’
বাইরে থেকে ভবনটি দেখেই এখনো বোঝা যায়, আগুন কতটা ভয়াবহ ছিল। কয়েকটি তলায় পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া আসবাব। আগুন নেভাতে ব্যবহৃত পানি জমে আছে বেসমেন্টে। নিচতলায় লাগানো ‘ক্রাইম সিন’ লেখা ফিতা। নিচতলায় বসা কয়েকজন পুলিশ সদস্য। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রমনা থানার সহকারী উপপরিদর্শক আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা ভবনের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করছি। ভেতরে কারও ঢোকার সুযোগ নেই। ভবনটিতে যাঁরা ব্যবসা করতেন, তাঁরাও কেউ আসেন না। কিছুই সরানো হয়নি।’
গত ২৯ ফেব্রুয়ারির আগুনে আহত আরও ১৫ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন। নিহতদের পরিবার ও আহত অনেককেই আর্থিক সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘যারা এসেছে, তাদের আমরা সহযোগিতা করেছি। নিহতদের ১৩টি পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহযোগিতা করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে ১০ হাজার এবং ২ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।’
আহত রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বাসায় এসে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাচ্ছি। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় জেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। অফিস থেকেও ওষুধের টাকা দিয়েছিল।’
স্বামীর সঙ্গে ওই ভবনে গিয়ে আহত হয়েছিলেন উম্মে হাবিবা সুমাইয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনো ইনহেলার ব্যবহার করতে হচ্ছে। শ্বাসনালিতে ক্ষত রয়েছে।’
বেইলি রোডের একাধিক দোকানি জানান, গ্রিন কোজি কটেজসহ বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রতিবছর রমজানে দুপুরের পর থেকেই ইফতারি কেনার জন্য ব্যাপক ভিড় থাকত। আগুনের পর বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টগুলোতে বেচাকেনায়ও ভাটা পড়েছে।
গ্রিন কোজি কটেজের পাশের ভবনেই পিৎজা হাট। কর্মী মুনিয়া বলেন, আগে দিনে এক-দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো, এবার ৬০ হাজারের বেশি হচ্ছে না। রোজার শুরুতে অবস্থা আরও খারাপ ছিল।
আগুনের ঘটনায় শুধু কলকারখানা অধিদপ্তরের কমিটি তদন্ত শেষ করেছে। কমিটির সদস্যসচিব ও উপমহাপরিদর্শক মো. আকিদ-উল-হাসান বলেন, দোতলার একটি কফিশপের ইলেকট্রিক কেটলি থেকে আগুনটা লাগে। তারা নেভানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পাশেই সিলিন্ডার থাকায় সেখানে আগুন লেগে রান্নাঘরে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, সিঁড়ির পাশে প্রতিটি তলায় সিলিন্ডার ছিল। ফলে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন থাকায় আগুন বা ধোঁয়া বাইরে যেতে পারেনি। ধোঁয়ার কারণেই অনেকে মারা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তা, লাইসেন্স, শ্রমিকদের বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি একটি মামলাও করা হয়েছিল। তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনায় ২০-২৫ দিন আগে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। তদন্তকাজ এগোচ্ছে। আলামত সংগ্রহের পর আমাদের ফরেনসিকে পরীক্ষা চলছে। রিপোর্ট এখনো পাইনি।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। চায়ের কেটলি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে গ্যাসের উপস্থিতির ফলে আগুন ছড়িয়ে যায়। ভবন থেকে বেরোনোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ভেন্টিলেশন ছিল খুবই কম। ধোঁয়ার কারণেই অনেকে মারা যায়। ভবনের ধরন পাল্টানো হয়েছে। বাণিজ্যিক অফিস ভবনকে রেস্তোরাঁ করা হয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনাও ছিল না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এর বেশি বলতে পারছি না।’
আগুনের ঘটনায় স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কমিটিকে চার মাসের মধ্যে কারণ অনুসন্ধানসহ এর জন্য কারা দায়ী তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীতে একটি স্থাপনার অনুমোদন এবং সেখানে রেস্তোরাঁ করতে কমপক্ষে ১০টি সরকারি সংস্থার অনুমতি লাগে। সংস্থাগুলো হলো রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, ডিপিডিসি, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা ওয়াসা এবং এনবিআর। গ্রিন কোজি কটেজেও অধিকাংশ সংস্থারই অনুমোদন ছিল।
রাজউকের তদন্তকাজে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব সংস্থার কাছে তদন্তের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তারা জবাব দেয়নি। কীভাবে রেস্তোরাঁটি অনুমোদন পেয়েছিল, তা-ও জানায়নি। ভবনমালিক, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরাঁমালিকদের চিঠি দিয়েও পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় কিছু সুপারিশ দিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) আরিফুল হক বলেন, ‘আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। তারা রাজস্ব বিভাগ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেছে। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগুনের ঘটনায় অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের যেমন দায় আছে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলতে দেওয়ায় বর্তমান কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, স্থাপনাটির এখন যে অবস্থা, তাতে ব্যবহারের আগে সামগ্রিক কারিগরি দিক মূল্যায়ন করে দেখা উচিত। যদি কাঠামোগত ক্ষতি না হয়ে থাকে, তাহলে পুনরায় তা মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা যাবে। তিনি বলেন, আগুনের পর কিছু বিচ্ছিন্ন অভিযান চলেছে। কিন্তু এসব অভিযানে সফলতা আসবে না। পুরো রাজধানীকে নিরাপদ করার জন্য সমন্বিতভাবে কী কী অভিযান চলতে পারে, তার একটি গাইডলাইন তৈরি করা উচিত টাস্কফোর্স বানিয়ে। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি।
রাজধানী ঢাকার যানজট কমাতে নেওয়া ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) এই প্রকল্পের ঠিকাদারদের মধ্যে শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা অবসানের পর শুরু হচ্ছে নতুন ধাপ, এতে গুরুত্ব দেওয়া হবে পান্থকুঞ্জ থেকে বুয়েট পর্যন্ত অংশ।
১৮ মিনিট আগেথানা হলো জনসাধারণকে সেবা প্রদানের মূল কেন্দ্রস্থল। পুলিশের কাজ হচ্ছে জনগণকে সেবা দেওয়া। আমরা সম্মানিত নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে চাই। থানায় আসা একজন ব্যক্তিও যেন সেবা বঞ্চিত না হন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে...
২২ মিনিট আগেঢাকার ধামরাইয়ে তিন দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীরামপুর এলাকার গ্রাফিক্স টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিকেরা এ বিক্ষোভ করেন। এ সময় অবরোধস্থলের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
৯ ঘণ্টা আগেপটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে খালের পানিতে ডুবে চার বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের কাকড়াবুনিয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
১০ ঘণ্টা আগে