Ajker Patrika

শ্রীপুরে শিক্ষার্থী–পুলিশ সংঘর্ষ: ব্যবসায়ী নিহত, আহত অর্ধশতাধিক

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৪, ২১: ২৫
শ্রীপুরে শিক্ষার্থী–পুলিশ সংঘর্ষ: ব্যবসায়ী নিহত, আহত অর্ধশতাধিক

গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের দাবি, পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। মরদেহ হাসপাতালের স্ট্রেচারে করে নিয়ে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশ বলছে, তিনি গুলিতে মারা যাননি। 

উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আজ তিনটি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরে তারা মাওনা হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে ভেতরে থাকা দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। সংঘর্ষে পুলিশের রাবার বুলেটে শতাধিক আহত হয়েছে। 

নিহত জাকির হোসেনের (৪৩) বাড়ি সাতক্ষীরা বলে জানা গেছে। শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া বেপারী বাড়ি এলাকায় তাঁর লেপ তোশকের দোকান রয়েছে।

পুলিশ বলছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, পুলিশের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ছোটাছুটি করার সময় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। মরদেহ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। 

আলহেরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন লোককে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। 

সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার বেলা ১১টা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থান নেয়। সরকার দলীয় কর্মী–সমর্থকেরা মাওনা চৌরাস্তার ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নিলে উত্তেজনা দেখা যায়। কিছু সময় পর ছাত্ররা লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল নিয়ে মাওনা ফ্লাইওভার এলাকায় যায়। এ সময় ছাত্ররা পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশ করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়। পরে ছাত্ররা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে ফিরে যায়। 

কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা মাওনা ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেয় এবং খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে। এরপর ফের ছাত্ররা মিছিল নিয়ে মাওনা চৌরাস্তায় আসে এবং মাওনা হাইওয়ে, গাজীপুর জেলা পুলিশ, শ্রীপুর থানা-পুলিশের তিনটি বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরে উত্তেজিত ছাত্ররা আশপাশের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ভাই ভাই সিটি কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়। পরে ছাত্ররা একত্রিত হয়ে মাওনা-শ্রীপুর সড়কের ভাই ভাই সিটি কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেওয়া পুলিশের লক্ষ্য করে দুয়োধ্বনি দেয়। ওই কমপ্লেক্সে থাকা তিনটি পুলিশ ভ্যানসহ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিকেল ৩টার দিকে শ্রীপুর সড়কের বকুলতলা এলাকায় মাওনা হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

মাওনা আলহেরা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুপুরের পর থেকে আলহেরা হাসপাতালে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে এসেছে। তাদের অনেককেই গুরুতর অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একজন মধ্যবয়সী পুরুষকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁর মাথা বুলেটের আঘাতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। 

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, পুলিশের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আন্দোলনকারীরা এসে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তিনটি পুলিশ বক্স ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ছাড়া পুলিশের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। 

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব মোর্শেদ বলেন, বিকেল ৩টার কিছু সময় পর কয়েক হাজার আন্দোলনকারী এসে হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও দুটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় দু’ঘণ্টা ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত