Ajker Patrika

টঙ্গীতে ট্রেনে কাটা পড়ে পুলিশ সদস্যের মৃত্যু

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ১২: ৫৯
টঙ্গীতে ট্রেনে কাটা পড়ে পুলিশ সদস্যের মৃত্যু

গাজীপুরের টঙ্গীতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে এ ঘটনা ঘটে। 

মৃত ওই পুলিশ সদস্যের নাম আব্দুল বাতেন (৫৫)। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার সাহাদাতপুর থানা এলাকার মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে। টঙ্গী রেলওয়ের পুলিশ ফাঁড়িতে কনস্টেবল পদে কর্তব্যরত ছিলেন। 

রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও স্থানীয়রা জানান, সকালে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে দায়িত্ব পালন করছিলেন আব্দুল বাতেন। এ সময় সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে পেছন দিক থেকে আব্দুল বাতেনকে ধাক্কা দেয়। এ সময় তিনি রেল লাইনে পড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে আহত হন। 

ঘটনার পর টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ি পুলিশের অন্য সদস্যরা মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। 

টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাফিস মজিদ বলেন, রোগীকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাঁর শরীরের বাঁ পাশের অংশটি থেঁতলে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। 

টঙ্গী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল বলেন, ফাঁড়ি ইনচার্জ এই মুহূর্তে পুলিশ নেই। পুলিশের অন্য সদস্যরা হাসপাতালে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মনোনয়ন ঘিরে অস্থিরতা: নওগাঁয় বিএনপিতে অসন্তোষ

  • সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে তিনটি আসনে চলছে বিক্ষোভ কর্মসূচি
  • বেশি বাড়াবাড়ি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু
নওগাঁ সংবাদদাতা
একরামুল বারী টিপু, ফজলে হুদা বাবুল ও মোস্তাফিজুর রহমান।
একরামুল বারী টিপু, ফজলে হুদা বাবুল ও মোস্তাফিজুর রহমান।

নওগাঁয় সংসদীয় আসন ছয়টি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পাঁচটিতে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। প্রাথমিক নামের তালিকা ঘোষণার পর থেকে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে তিনটি আসনে। আরও প্রকাশ্যে এসেছে দলীয় কোন্দল। মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। প্রার্থী ঘোষণার পর একদিকে চলছে ধানের শীষের প্রচার-প্রচারণা; অন্যদিকে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী-সমর্থকেরা।

জানা গেছে, মনোনয়ন ঘোষণা করায় কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। পছন্দের প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস যেমন আছে, তেমনি মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। মনোনয়ন ঘিরে আন্দোলনে নামায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তবে নির্বাচনের আগে দলীয় বিবাদ মিটিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

৩ নভেম্বর ২৩৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এদিন নওগাঁর সংসদীয় ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই তিনটি (১, ৩ ও ৪) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ। শুরুতেই নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে একরামুল বারী টিপুকে মনোনয়ন দেওয়ায় মান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মতিনের কর্মী-সমর্থকেরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শুরু করেন। এরপর নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে ফজলে হুদা বাবুলকে মনোনয়ন দেওয়ায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির কর্মী-সমর্থক এবং নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) আসনে মোস্তাফিজুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেন। প্রতিদিনই চলছে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে রাজপথে নেমে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন। তবে এরই মধ্যে ধানের শীষের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন দলীয় প্রার্থীরা।

মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, আসনগুলোয় ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে এই আসনগুলো বিএনপির হাতছাড়া হতে পারে। দ্রুত এসব আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি তাঁদের। তবে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে দল, এমন দাবি করে আসনগুলোতে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন, সেই আশা মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের।

নওগাঁ-৪ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত এম এ মতিন বলেন, ‘দলের নিবেদিত কর্মী হিসেবে হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, আমি তা মেনে নিয়েছি। এরপরও দলের কিছু নেতা-কর্মী ও আমার কিছু সমর্থক আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় কষ্ট পেয়েছে। তবে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’

একই আসনের বিএনপির প্রার্থী ইকরামুল বারী বলেন, ‘দল আমার ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে মনোনয়ন দিয়েছে, এর প্রতিদান সবাইকে সঙ্গে নিয়েই দেব।’

নওগাঁ-৩ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি বলেন, এই মনোনয়নই চূড়ান্ত নয়। রাজনীতি থেকে প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকীর পরিবারকে মাইনাসের ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র এখনো সক্রিয়। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দেওয়া হবে।

আসনের বিএনপির প্রার্থী ফজলে হুদা বাবুল বলেন, ‘মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে যে কারও মন খারাপ হবে। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। সবাইকে নিয়েই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে চাই। এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছি।’

সার্বিক বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলের নেতা তারেক রহমান যোগ্য নেতাদেরই মনোনীত করেছেন। বিএনপি একটি বড় দল হিসেবে সবাই আশা করে মনোনয়নের। তবে কোনো নেতা-কর্মী বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কিশোরগঞ্জের কলেজ: দুই বছর ধরে বেতনহীন ৪১ শিক্ষক-কর্মচারী

  • পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা
  • একটা প্রতিষ্ঠান তো এভাবে চলতে পারে না: দাতাসদস্য
  • দুর্ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার, ফান্ড না থাকার অজুহাত অধ্যক্ষের
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের কলেজ: দুই বছর ধরে বেতনহীন
৪১ শিক্ষক-কর্মচারী

কিশোরগঞ্জের ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘স্বেচ্ছাচারিতায়’ দুই বছরের বেশি সময় ধরে নন-এমপিও ২৯ শিক্ষক ও ১২ কর্মচারী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বেতন চাইলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ।

ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিনা কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং বেতন-ভাতা বন্ধ করে রাখেন। তাঁর কারণে দুই বছর ধরে বেতন হচ্ছে না তাঁদের।

১৯৮২ সালে ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটি এমপিওভুক্ত হয় ১৯৮৪ সালে। বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩ হাজার ৩০০। কলেজটির বার্ষিক আয় প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ আর ব্যয় প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তবে শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, কলেজে ফান্ডের অভাব নেই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সঠিক আয়-ব্যয়ের হিসাব গোপন করে রেখেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষক বলেন, ‘দুই বছরের অধিক সময় বেতন পাই না। উনি কলেজেও নিয়মিত আসেন না। কাউকে দায়িত্ব দেন না এবং ছুটিও নেন না। কলেজের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও আমরা তাঁকে পাই না।’

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করার দায়িত্ব পায়, যা আগে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির হাতে ছিল। তবে শিক্ষকের সংকট থাকলে কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে এনটিআরসিএর অনুমোদনক্রমে পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে। শিক্ষকেরা বলেন, ‘শুধু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সদিচ্ছার অভাবে আমরা বেতন পাচ্ছি না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন ফান্ড নেই, কিন্তু আমাদের তো একটা হিসাব আছে। বাংলাদেশের একমাত্র কলেজ, যেখানে বিনা বেতনে চাকরি করতে হচ্ছে। আমাদের দুরবস্থা দেখার মতো কেউ নেই।’

কলেজের অভিভাবক সদস্য আবু নাসের মিন্টু হিলালি বলেন, ‘টাকা আছে, তারপরও বেতন দেয় না কেন, এটা তো গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলতে পারবেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সপ্তাহে এক দিনও অফিস করেন না। ফোন করলে ধরেন না।’

দাতাসদস্য কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘মাসের পর মাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজে আসেন না। তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ঠিকমতো মিটিংও করেন না। একটা প্রতিষ্ঠান তো এভাবে চলে না, চলতে পারে না।’

কলেজটির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নূরুন নাহার চায়না বলেন, ‘তদন্তের মাধ্যমে নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে আমাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। আমরা প্রতিবেদন দাখিল করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তা গ্রহণ না করে পুনরায় কমিটি গঠন করে তদন্ত করতে দেন অন্যদের। এখন কী অবস্থায় আছে, তা আমি জানি না। মিটিং ডাকা হয়েছিল, তা-ও ক্যানসেল করা হয়েছে।’

কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রতন বলেন, ‘কলেজটি পতিত সরকার একবারে জিরো পজিশনে নিয়ে গেছে। কোনো ফান্ডিং নেই। আমি আসলে চলে যেতে চাই। এত যদি গ্যাপ থাকে কীভাবে কী করার? এক প্রিন্সিপাল দৌড়াইছে, আরেক প্রিন্সিপাল আসেন না। এই প্রতিষ্ঠানে যাওয়াটা আমার অপরাধ হইছে। আমি চাচ্ছি একটা জরুরি মিটিং ডেকে বিষয়গুলো সেটেল্ড করতে।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘অপরিকল্পিত নিয়োগের কারণে অনেক বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতার খাতিরে এবং বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি কলেজ হওয়ায় ছাত্রসংখ্যা কমে যায়। সেটা বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের নিচে চলে এসেছে। এমতাবস্থায় ১২০ শিক্ষকের বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যার জন্য বিগত ৩ বছরের মধ্যে দেড় বছরের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি আসার পরে ৪ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছি। এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করিনি।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কলেজটির নিজস্ব গভর্নিং বডি রয়েছে, তাদের দায়িত্ব বিষয়টি দেখা। এরপরও কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নওগাঁর রাণীনগর: বস্তায় আদা চাষে ‘দুর্নীতির প্রদর্শনী’

মো.সাহাজুল ইসলাম, রাণীনগর (নওগাঁ)
আদাগাছ পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। গতকাল নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আদাগাছ পরিচর্যা করছেন এক কৃষক। গতকাল নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনীতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কেউ বলছেন তালিকায় নাম থাকলেও প্রদর্শনী পাননি, কেউ বলছেন বরাদ্দ অনুযায়ী প্রদর্শনীর উপকরণ পাননি, আবার কেউ বলছেন কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা আদাবীজের গাছই ওঠেনি। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে পতিত জমিতে অনাবাদি প্রকল্পের আওতায় এই উপজেলায় ২২টি প্রদর্শনী হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অনাবাদি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ২১ মার্চ একযোগে ২২ জন কৃষককে প্রতি প্রদর্শনীর জন্য ৩০টি খালি বস্তা, আড়াই কেজি আদাবীজ, ৬ কেজি ডিএপি, ৬ কেজি পটাশ সার, ১০ কেজি জিপসাম, ২৫ কেজি জৈব সার এবং একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।

কৃষি অফিস থেকে বলা হয়েছে, প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো দেশে আদার চাহিদা পূরণ করে আমদানিনির্ভরতা কমানো, বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে তুলে ধরা এবং কম খরচে পতিত জমিতে বেশি লাভজনক আদা চাষ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। তবে মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের সুফল নিয়ে শঙ্কার কথা বলছেন কৃষকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা ২২ জন প্রদর্শনী কৃষকের তালিকায় প্রথমে রয়েছেন একডালা ইউনিয়নের জলকৈ গ্রামের মৃত জসমত আলীর ছেলে মনজুর রহমান। কিন্তু তিনি বলেন, ‘আমার নামে যে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে, তা আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে জানতে পারলাম। অফিস থেকে আমাকে এরকম কোনো প্রদর্শনী দেওয়া হয়নি বা বলাও হয়নি। এ বিষয়ে আমার কিছু জানাও নেই।’ এ নিয়ে প্রদর্শনীর দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা ব্লক সুপারভাইজার আফাজ উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে একডালা গ্রামের কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, ‘অফিস থেকে দেওয়া আদাবীজ থেকে গাছ ওঠেনি। তাই নতুন করে বাজার থেকে আদাবীজ কিনে রোপণ করতে হয়েছে।’ গহেলাপুর মানিকহার গ্রামের কৃষক অঞ্জনা রানী বলেন, অফিস থেকে তাঁকে ৩০টি খালি বস্তা, ২ কেজি ডিএপি, ২ কেজি পটাশ সার, ২ কেজি আদা, আধা বস্তা জৈব সার ও একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু পাননি। একই কথা বলেন ওই গ্রামের কৃষক অনন্ত সরকার।

রাণীনগর উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকার কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে কৃষকেরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই কৃষি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিমা খাতুন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বরাদ্দ অনুযায়ী সব উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে তালিকায় নাম থাকলেও প্রদর্শনী না পাওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৬ টুকরা আশরাফুলের ফোন ধরতেন মালয়েশিয়াফেরত বন্ধু জরেজ, বলতেন ‘ব্যস্ত আছে’

শিপুল ইসলাম, রংপুর 
আশরাফুল হক। ছবি: সংগৃহীত
আশরাফুল হক। ছবি: সংগৃহীত

তিন দিন আগে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে প্রবাসী বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকা যান কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। এর পর থেকে স্ত্রী লাকী বেগম আশরাফুলকে ফোন করলে তাঁর বন্ধু জরেজ ফোন রিসিভ করতেন। আশরাফুলের খোঁজ করলে তিনি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত আছেন বলে জানাতেন। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে ভাইয়ের সঙ্গে বদরগঞ্জ থানায় যান লাকী বেগম। সেখানে জানতে পারেন, ঢাকায় স্বামী আশরাফুল হকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বারবার মূর্ছা যান।

আশরাফুল হকের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার হাইকোর্ট এলাকায় নীল রঙের ড্রামের ভেতরে আশরাফুলের ২৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

খুন হওয়া আশরাফুল হকের শ্যালক আব্দুল মজিদ বদরগঞ্জ থানার সামনে জানান, আশরাফুল তাঁর বাবাকে রংপুরে একটি হাসপাতালে রেখে মঙ্গলবার মালয়েশিয়াফেরত বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় যান। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় আশরাফুল তাঁর স্ত্রী লাকী বেগমের সঙ্গে শেষ কথা বলেন। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। তাই তাঁরা আজ বিকেলে বদরগঞ্জ থানায় জিডি করতে আসেন। এখানে এসে জানতে পারেন, আশরাফুল হককে ঢাকায় খুন করা হয়।

আব্দুল মজিদ বলেন, ‘গতকাল বিকেলে আমার বোনের সঙ্গে কথা হয় আশরাফুলের। তখন তিনি বলেছেন, ‘‘বাবা হাসপাতালে, রিলিজ দেবে, টাকাপয়সা দিছি। বাবাক নিয়া আইসো।’’ এটাই শেষ কথা। এরপর থাকি আশরাফুলকে কল দিলে তাঁর বন্ধু জরেজ ধরে, আর বলে, “আশরাফুল ব্যস্ত আছে, কালেকশনে গেছে।”’

আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আজ দুপুরে ফোন দিলে ফের জরেজ ফোন ধরে। কিন্তু আশরাফুলকে দেয় না। এ জন্য বোন জরেজের স্ত্রীর কাছে যান। জরেজের স্ত্রী তাঁকে ফোন দিলে আশরাফুলের ফোন ধরে না কেন জানতে চাইলে জরেজ বলে, আশরাফুলের ফোন ড্রেনে কুড়ায় পাইছে। এরপর বোনসহ থানায় আসি। এসে শুনি তাঁকে খুন করছে। তাঁর লাশ উদ্ধার হইছে ঢাকায়। এ কথা শোনার পর আমার বোন তো পাগল হয়ে গেছে। আমরা হত্যাকারীর বিচার চাই।’

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘নিহত আশরাফুল হকের স্ত্রী ও স্বজনেরা থানায় এসেছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন প্রকার তথ্য নিয়েছি। সেগুলো দিয়ে ওসি রমনা, শাহবাগকে সহযোগিতা করছি। এ ঘটনায় ঢাকাতে মামলা হচ্ছে। নিহতের পরিবার সেখানে যাচ্ছে।’

আশরাফুল হক হিলি থেকে কাঁচামাল কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি বিক্রি করতেন। তাঁর বন্ধু জরেজ মিয়া শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিবার। তিনি মালয়েশিয়া ছিলেন। দেশে আশার পর আশরাফুল হকের সঙ্গে ঘুরতেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত