রওনক রেহানা
৫ অক্টোবর ত্বকীর জন্মদিন। ২৬ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু আজ থেকে সাড়ে আট বছর আগে ত্বকী চলে গেছে এই বিশ্বের সবকিছু ছেড়ে। ‘এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি’ ত্বকী ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন অকালপ্রয়াত কিশোর কবি সুকান্তের মতো এই অঙ্গীকার আমিও করেছিলাম। কিন্তু না, আমরা আমাদের এই জনপদকে শিশুর বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারিনি। সুকান্তের মৃত্যু হয়েছে যক্ষ্মা রোগে, আর ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে নিষ্ঠুরভাবে।
ত্বকী, বিশ্বজিৎ, আবরার ফাহাদের মতো সন্তানেরা এ দেশে বাঁচে না। এদের জন্য কোনো যোগ্য আবাসভূমি এখনো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। সৎ, কার্যকর প্রশাসনিক নিরাপত্তায় বা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন হয় এমন স্বদেশ, জনপদের নাগরিকও আমরা নই!
এখানে দুষ্টের হাতে শিষ্টকে জীবন দিতে হয়। রাষ্ট্র-সরকার দুষ্টের নিরাপত্তা দেয়। এখানে বিচারের বাণী স্বরবেই প্রতিনিয়ত কেঁদে চলে। নয়তো সাড়ে আট বছরেও একটি বিচার শুরু হবে না কেন? অপরাধীরা চিহ্নিত হলো, কিন্তু ধরা পড়ল না, অভিযোগপত্র দেওয়া হলো না। আমরা কি এমন রাষ্ট্র চেয়েছিলাম? এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ?
জন্মদিন হয় আনন্দের; ফুল, কেক বিভিন্ন অনুষঙ্গ এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু না, ত্বকীর জন্মদিন এখন আর আমাদের জন্য কোনো আনন্দের বার্তা বয়ে আনে না। একরাশ বেদনা আমাদের নিমজ্জিত করে। ত্বকী বেঁচে থাকতে একটা ছড়া ও প্রায়ই শুনতে চাইত, ‘মন্দরা ছিল মন্দরা আছে থাকবেও চিরকাল, তবুও ভালোর ছোঁয়া লেগে শুভ হোক আগামীকাল।’
এখন আর কণ্ঠ থেকে কোনো ছড়া, কবিতা বা গান বেরোতে চায় না, কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। কিন্তু আমার চোখের জলে কোনো স্মৃতি মুছে যায়নি, ত্বকীর সঙ্গের প্রতিটি স্মৃতি, প্রতিটি মুহূর্ত থেকে আমি ফিরে পেতে চাই বর্তমান ও ভবিষ্যতে ত্বকীর সঙ্গে আমার জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষায়, অথচ যা আর কোনো দিন হওয়ার নয়।
ত্বকী ‘ডেইলি স্টার’ পুরস্কার নিতে গিয়ে পরিচিতি প্রকাশে জীবনের লক্ষ্য জানাতে গিয়ে লিখেছিল, ‘সততাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লালন করব।’ যে জীবনের পরিসীমা এতই ছোট, যে আঠারোর আগেই পথ ছেড়ে চলে যেতে হয়, সেখানে লক্ষ্য মুখ থুবড়ে পড়ে।
আমি যখনই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘মানুষ’ কবিতা থেকে আবৃত্তি করতাম—‘মানুষ বড় কাঁদছে তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’—তখন প্রতিবারই আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার শিশুসন্তান আপন মনেই বলে চলত ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও তোমাকে দাঁড়াতেই হবে’। এই সব ছোট ছোট সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্নার জীবন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে রক্ষার দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের, সমাজের। একটি সমতার সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল ত্বকী। কিন্তু কতটা বিরুদ্ধ সমাজে বসে সে এই স্বপ্ন দেখছে, সেই ধারণা হয়তো তার ছিল না।
আজ ত্বকীর এই জন্মদিনে কোনো সরকারের কাছে, কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আমি কোনো আবেদন জানাব না। শুধু এ সত্যই উচ্চারণ করব যে, কোনো অন্যায়, অবিচারই শেষ কথা নয়, ন্যায় আর সত্যই শেষ কথা। ক্ষমতার মোহে আজ যাঁরা অন্ধ, যাঁরা পিতা, পুত্র, ভাই, নিজস্ব পরিজন ছাড়া অন্য কাউকেই আপন ভাবতে কুণ্ঠাবোধ করেন, যাঁরা আইন-প্রশাসন-রাষ্ট্র সবকিছুকে নিজেদের প্রয়োজনে মনে করেন, তাঁদের কাছে আর যা-ই হোক, সুবিচার আশা করা যায় না।
ঘাতক আর জল্লাদের আস্ফালনই শেষ কথা নয়। যাঁরা আজকে মিথ্যা ছড়িয়ে সত্যকে চাপা দিতে চাইছেন, আপাতত সফল মনে হলেও তা কখনো সফল হবে না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আল্লাহ তাঁদের সুমতি দিন। সত্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা দিন, অসুরের ওপর মানুষের বিজয় দান করুন।
লেখিকা: তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর মা
৫ অক্টোবর ত্বকীর জন্মদিন। ২৬ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু আজ থেকে সাড়ে আট বছর আগে ত্বকী চলে গেছে এই বিশ্বের সবকিছু ছেড়ে। ‘এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি’ ত্বকী ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন অকালপ্রয়াত কিশোর কবি সুকান্তের মতো এই অঙ্গীকার আমিও করেছিলাম। কিন্তু না, আমরা আমাদের এই জনপদকে শিশুর বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারিনি। সুকান্তের মৃত্যু হয়েছে যক্ষ্মা রোগে, আর ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে নিষ্ঠুরভাবে।
ত্বকী, বিশ্বজিৎ, আবরার ফাহাদের মতো সন্তানেরা এ দেশে বাঁচে না। এদের জন্য কোনো যোগ্য আবাসভূমি এখনো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। সৎ, কার্যকর প্রশাসনিক নিরাপত্তায় বা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন হয় এমন স্বদেশ, জনপদের নাগরিকও আমরা নই!
এখানে দুষ্টের হাতে শিষ্টকে জীবন দিতে হয়। রাষ্ট্র-সরকার দুষ্টের নিরাপত্তা দেয়। এখানে বিচারের বাণী স্বরবেই প্রতিনিয়ত কেঁদে চলে। নয়তো সাড়ে আট বছরেও একটি বিচার শুরু হবে না কেন? অপরাধীরা চিহ্নিত হলো, কিন্তু ধরা পড়ল না, অভিযোগপত্র দেওয়া হলো না। আমরা কি এমন রাষ্ট্র চেয়েছিলাম? এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ?
জন্মদিন হয় আনন্দের; ফুল, কেক বিভিন্ন অনুষঙ্গ এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু না, ত্বকীর জন্মদিন এখন আর আমাদের জন্য কোনো আনন্দের বার্তা বয়ে আনে না। একরাশ বেদনা আমাদের নিমজ্জিত করে। ত্বকী বেঁচে থাকতে একটা ছড়া ও প্রায়ই শুনতে চাইত, ‘মন্দরা ছিল মন্দরা আছে থাকবেও চিরকাল, তবুও ভালোর ছোঁয়া লেগে শুভ হোক আগামীকাল।’
এখন আর কণ্ঠ থেকে কোনো ছড়া, কবিতা বা গান বেরোতে চায় না, কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। কিন্তু আমার চোখের জলে কোনো স্মৃতি মুছে যায়নি, ত্বকীর সঙ্গের প্রতিটি স্মৃতি, প্রতিটি মুহূর্ত থেকে আমি ফিরে পেতে চাই বর্তমান ও ভবিষ্যতে ত্বকীর সঙ্গে আমার জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষায়, অথচ যা আর কোনো দিন হওয়ার নয়।
ত্বকী ‘ডেইলি স্টার’ পুরস্কার নিতে গিয়ে পরিচিতি প্রকাশে জীবনের লক্ষ্য জানাতে গিয়ে লিখেছিল, ‘সততাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লালন করব।’ যে জীবনের পরিসীমা এতই ছোট, যে আঠারোর আগেই পথ ছেড়ে চলে যেতে হয়, সেখানে লক্ষ্য মুখ থুবড়ে পড়ে।
আমি যখনই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘মানুষ’ কবিতা থেকে আবৃত্তি করতাম—‘মানুষ বড় কাঁদছে তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’—তখন প্রতিবারই আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার শিশুসন্তান আপন মনেই বলে চলত ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও তোমাকে দাঁড়াতেই হবে’। এই সব ছোট ছোট সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্নার জীবন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে রক্ষার দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের, সমাজের। একটি সমতার সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল ত্বকী। কিন্তু কতটা বিরুদ্ধ সমাজে বসে সে এই স্বপ্ন দেখছে, সেই ধারণা হয়তো তার ছিল না।
আজ ত্বকীর এই জন্মদিনে কোনো সরকারের কাছে, কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আমি কোনো আবেদন জানাব না। শুধু এ সত্যই উচ্চারণ করব যে, কোনো অন্যায়, অবিচারই শেষ কথা নয়, ন্যায় আর সত্যই শেষ কথা। ক্ষমতার মোহে আজ যাঁরা অন্ধ, যাঁরা পিতা, পুত্র, ভাই, নিজস্ব পরিজন ছাড়া অন্য কাউকেই আপন ভাবতে কুণ্ঠাবোধ করেন, যাঁরা আইন-প্রশাসন-রাষ্ট্র সবকিছুকে নিজেদের প্রয়োজনে মনে করেন, তাঁদের কাছে আর যা-ই হোক, সুবিচার আশা করা যায় না।
ঘাতক আর জল্লাদের আস্ফালনই শেষ কথা নয়। যাঁরা আজকে মিথ্যা ছড়িয়ে সত্যকে চাপা দিতে চাইছেন, আপাতত সফল মনে হলেও তা কখনো সফল হবে না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আল্লাহ তাঁদের সুমতি দিন। সত্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা দিন, অসুরের ওপর মানুষের বিজয় দান করুন।
লেখিকা: তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর মা
ডেমরায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) খালের ওপর নির্মিত হাজীনগর সেতু প্রয়োজনের তুলনায় কম প্রশস্ত হওয়ায় পারাপারে দুর্ভোগে পড়েছে এলাকার বহু মানুষ। স্টাফ কোয়ার্টার-হাজীনগর এলাকার এই গার্ডার সেতু প্রায় দেড় দশক আগে নির্মিত।
৭ ঘণ্টা আগেসাতক্ষীরার আশাশুনিতে নদী খননের কারণে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি স্থাপনা (সেতু ও কালভার্ট) ধসে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন আশাশুনিসহ আশপাশের কয়েক লাখ মানুষ। ধসে পড়া সেতুর ওর নির্মিত সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন মানুষ। দীর্ঘদিন এই অবস্থা চললেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
৭ ঘণ্টা আগেপানির ৫৭টি পরীক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পানি পরীক্ষাগার। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে উদ্বোধনের চার বছর পরও জেলার একমাত্র পানি পরীক্ষাগারটি চালু করা যায়নি।
৭ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসুর নামে রাজধানীর শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) যুবাইর বিন নেছারী নামের এক শিক্ষার্থী এ জিডি করেন।
৮ ঘণ্টা আগে