ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’দিনব্যাপী গবেষণা ও প্রকাশনা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় বক্তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে অ্যালামনাইদের উদ্যোগে বিশেষ গবেষণা ফান্ড গঠন, ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার কারিকুলাম প্রণয়ন, একাডেমিয়ার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির যোগসাজশ তৈরি করা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন বক্তারা।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দু’দিনব্যাপী এ মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘আজকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উঁকি দিচ্ছে। সেখানে আমাদের যে কর্মীবাহিনী আছে, তারা কর্মহীন হয়ে পড়ে কিনা সেটা ভাবতে হচ্ছে। আমাদের সুদক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করা সময়ের দাবি। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের আস্থা ও ভরসার জায়গা।’

শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান প্রজন্মকে সুদক্ষ কর্মীবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করতে হবে। গবেষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য তিনি শিল্প মালিক ও অ্যালামনাইদের প্রতি আহ্বান জানান।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, কর্মদক্ষ ও যুগোপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করা দরকার। আমরা শুধুমাত্র বেকার, কর্ম দক্ষতাহীন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছি কিনা তা ভাবতে হবে। আমাদের একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন জরুরি। গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অ্যালামনাইদের কার্যকর ভূমিকা রাখার জোর তাগিদ দেন তিনি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রকাশনা, গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সামাজিক চাহিদা নিরূপণ, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের ক্ষেত্রে এই মেলা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতামূলক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন উপাচার্য।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

দু’দিনব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, প্রকাশনা সংস্থা ও গবেষণা কেন্দ্রের শতাধিক স্টল রয়েছে। এসব স্টলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনা ও উদ্ভাবনসহ ৫৫টি গ্রন্থ, ২৬টি বিশেষ জার্নাল, ২১৬টি গবেষণা প্রজেক্ট, ৬২৪টি পোস্টার এবং ৮৬টি ফ্লাইয়ার/ব্রশিয়ার স্থান পেয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিম সং পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সূচনা করা হয়।