পাঠশালা বন্ধ, পাবজি খোলা

মো. ফরিদ রায়হান,অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮: ১৪
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০: ০৮

গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটার সময় হঠাৎ চোখে পড়ে একটি বাড়ির আঙিনায় চার-পাঁচজন কিশোর গোল হয়ে বসে আছে। তারা খুব আগ্রহ নিয়ে কিছু একটা দেখছে। সামনে এগিয়ে যেতেই দেখা গেল কয়েকজন শিক্ষার্থী দল বেঁধে মুঠোফোনে ভিডিও গেম পাবজি খেলছে। বিদ্যালয়ের ভার্চুয়াল শ্রেণিপাঠের কথা বলে, অভিভাবকের ফোন নিয়ে পাবজি খেলায় মগ্ন তারা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামে দেখা মেলে এমন চিত্র। কী দেখছ? জানতে চাইলে দুই শিক্ষার্থী বলে, ‘স্যার অনলাইনে পড়াচ্ছে, আমরা একসাথে শুনছি।’ আমিও শুনি তাহলে? এ প্রশ্নে বিপত্তি বাধে শিক্ষার্থীদের। ‘এরা পাবজি খেলতাছে’ বলে দৌড়ে পালায় একজন।

নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, `স্কুলে যেতে হয় না, অনলাইন ক্লাসে নেটওয়ার্ক সমস্যা হলে একটু গেম খেলি, সময় কাটানোর জন্য। স্কুল খোলা হলে খেলব না।' অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘এটা বড় ভাইয়ের মোবাইল। আম্মাকে বলে আনছি, স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট করব বলে। তবে একটু নাটক-গান শুনি।’ 

করোনা মোকাবিলায় গত ১৮ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় দফায় বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে আবারও অলস সময় পার করছে শিক্ষার্থীরা। অনলাইন ক্লাসে পাঠদান চালু রাখার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই সুবিধা নিতে পারেনি প্রযুক্তির অভাবে।

অন্যদিকে অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে মুঠোফোন বা ল্যাপটপে নাটক, গান ও বিভিন্ন অনলাইন গেম আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ঘরে বন্দী থাকা শিশুর মানসিক বিকাশ প্রভাবিত হতে পারে। এখন প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক স্বীকৃতিতে প্রযুক্তি ও অনলাইন ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরা। অনেকেই এই সুযোগে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তাদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে। 

অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহাবুব আলম বলেন, শিশুদের প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার কমাতে হবে। অনলাইন ব্যবহারে অভিভাবকের কঠোর নজরদারি করতে হবে। 

অষ্টগ্রাম রোটারি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজতবা আরীফ খান বলেন, মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকার অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নে অনলাইন গেম আসক্তি বিনষ্ট ও পাঠ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত