Ajker Patrika

জানাজা থামিয়ে সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে শুরু হয়েছে ওঝার ঝাড়ফুঁক 

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৪, ১৬: ৪৯
জানাজা থামিয়ে সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে শুরু হয়েছে ওঝার ঝাড়ফুঁক 

বিজ্ঞানের এমন উৎকর্ষের যুগেও সাপের দংশনে মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে চলছে বাংলা সিনেমার মতো আয়োজন। আজ শনিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামে সাপের কামড়ে এক টাইলস মিস্ত্রির মৃত্যু হয়। এরপর তাঁকে জীবিত করে তুলতে সন্ধ্যায় ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

সাপের কামড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম সাইফুল ইসলাম (৪০)। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন।

জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে বিলে মাছ ধরতে গেলে তাঁকে সাপে কামড় দেয়। পরে প্রথমে তাঁকে স্থানীয় ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

বিকেলে তাঁর জানাজার নামাজের আগে ঢাকার সাভার থেকে দুই ওঝা এসে চিকিৎসা করে মৃত সাইফুলকে সুস্থ করে তোলার দাবি করেন। তাঁরা জানাজা না পরাতে অনুরোধ করেন। তাঁদের অনুরোধে জানাজা না করে ওঝার ঝাড়ফুঁকের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন স্বজনেরা।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্র ও মৃত সাইফুল ইসলামের স্বজনেরা জানান, সাইফুল ইসলাম গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে টর্চলাইট দিয়ে আলো জ্বালিয়ে টেঁটা দিয়ে বাড়ির পাশের বিলে মাছ ধরতে যান। পথে হঠাৎ একটি বিষধর সাপ সাইফুলের বাঁ পায়ে কামড় দেয়। পরে তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যরা টেঁটা দিয়ে আঘাত করে ওই বিষধর সাপকে মেরে ফেলেন। তারপর মৃত সাপটি নিয়ে সাইফুল ও সঙ্গের লোকজন বাড়িতে ফিরে ঘটনাটি পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীকে জানান। ঘটনা জেনে সাইফুলের স্বজনেরা প্রথমে তাঁকে ওঝার কাছে নিয়ে যান। ওঝা ঝাড়ফুঁক দিয়ে সুস্থ করতে না পারলে পরিবারের লোকজন রাতেই তাঁকে টাঙ্গাইল জেলা মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিকে সুস্থ করতে শুরু হয়েছে ওঝার ঝাড়ফুঁক। ছবি: আজকের পত্রিকা এদিকে, শনিবার বিকেলে মৃত সাইফুলকে গোসল শেষে কাফনের কাপড় পরিয়ে জানাজার নামাজ পড়ার আয়োজন করা হয়। বাড়ির পাশে একটি জানাজা নামাজের আয়োজন করার সময় কয়েকজন ওঝা এসে তাঁকে চিকিৎসা করে ভালো করা সম্ভব বলে দাবি করেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জানাজার নামাজ পড়া বন্ধ রেখে ওঝা দিয়ে পুনরায় চিকিৎসা করানোর আয়োজন শুরু হয়। এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ঝাড়ফুঁক দেখতে আশপাশের লোকজন মাঠে জড়ো হয়েছে। অনেকে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা লাইভে দেখা যায়, মাঠের মাঝখানে কয়েকটি কলাগাছ কেটে এনে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে। পাশে দুধভর্তি কয়েকটি কলসি ও চেয়ার রাখা হয়েছে। চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড়।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিকে সুস্থ করতে শুরু হয়েছে ওঝার ঝাড়ফুঁক। ছবি: আজকের পত্রিকা রাত ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় ওঝা ও মৃত সাইফুলের মরদেহ সেখানে আনার প্রস্তুতি চলছিল। দুই ওঝা মৃত সাইফুলকে পরীক্ষা করে কী কী করতে হবে এসব বিষয় জানিয়ে মানিকগঞ্জ গিয়েছেন কড়ি আনতে। কড়ি নিয়ে ফিরে এলে ১০টার দিকে ঝাড়ফুঁক শুরু হবে। এসব দেখতে সেখানে অপেক্ষা করছেন উৎসুক জনতা।

এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, ‘সাপের কামড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যক্তির হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। পরে দাফনের আগে কয়েকজন ওঝার কথায় মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাসের কারণে ঝাড়ফুঁক শুরু করার খবর আমরা পেয়েছি। বিষয়টি আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত