নগর পরিবহন: সুবিধা-অসুবিধার গণশুনানি গড়াল ভাড়া বৃদ্ধির আলোচনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ১৭: ৫২
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ১৮: ৩৩

দেড় বছর পার করেছে ঢাকা নগর পরিবহন। তবে কোনোভাবেই যাত্রীসেবা দিতে পারছে না বাস রুট রেশনালাইজেশনের অধীনে চালু হওয়া এই নগরকেন্দ্রিক সেবা। দিন দিন অনিয়মের অভিযোগ বাড়ছে। আর কমছে যাত্রীসেবার মান। নগর পরিবহন চালুর আগে ও পরে করা হয়েছে ২৭টি সভা। এসব সভায় সাধারণত যাত্রীসেবার মান বাড়ানোসহ নগর পরিবহনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এর মধ্যে আজ সোমবার হয়েছে ২৮তম গণশুনানি। তবে সেখানে প্রতিফলিত হয়নি যাত্রীসেবার মান নিয়ে আলোচনা। বরং সভার একপর্যায়ে মালিক সমিতির প্রতিনিধি দাবি করেন ভাড়া বৃদ্ধির। পরে এই ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গ নিয়েই এগোতে থাকে আলোচনা।

এদিকে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ভবনে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না যাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি। অন্যান্য সেবা সংস্থার ৩৮ জনের কাছে গণশুনানি উপলক্ষে চিঠি পাঠালেও দেখা যায়নি বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে।

সভার শুরুতে আলোচনা হয় নতুন রুট ও বাস বৃদ্ধির জন্য। তবে তাতে বাধ সাধেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান। মাহাবুবুর রহমান নগর পরিবহন পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, এখানে যাঁরা ছোট বাসমালিক আছেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে বড় কোনো সুবিধা হচ্ছে না। তাঁরা এভাবে বাস দিতে চান না।

এই প্রকল্প চালু করার আগে মালিক সমিতি থেকে শুরু করে সব সেক্টরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে জানালে, তিনি এটাকে ব্যক্তিগত অভিমত বলে উল্লেখ করেন।

ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন বলেন, এই পদ্ধতিকে সেবা হিসেবে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার থেকে সহযোগিতা করা হবে। রুট বাড়ানো হলে বাস বাড়াতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মাহাবুবুর রহমান তখন ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলেন। সেই সঙ্গে সরকার থেকে প্রণোদনার দাবিও জানান তিনি। যা নিয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত হতে থাকে।

গণশুনানিতে মালিক সমিতির এক পক্ষীয় কথায় একপর্যায়ে ডিটিসিএ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ডিটিসিএর কোনো কর্মকর্তার কথা তিনি শুনতে নারাজ।

গণশুনানিতে যাত্রীদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি না থাকায় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা মাহাবুবুর রহমানকে সাম্প্রতিক সময়ে চালু করা ই-টিকিট পদ্ধতি ও বাসের সেবা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তবে তিনি তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সে সময় সাবিহা পারভীন বলেন, এখানে সবাই যাত্রীদের প্রতিনিধি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হককে চিঠি দিলেও তিনি ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি।

ভাড়া বাড়ানোর প্রসঙ্গে ডিটিসিএর সহকারী পরিকল্পনাবিদ ধ্রুব আলম বলেন, ভাড়া বাড়বে যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে তার সঙ্গে সমন্বয় করে। সেবার মান না বাড়িয়ে ভাড়া নিয়ে আলোচনা যৌক্তিক নয়।

বাস রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৯টি ক্লাস্টার (৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের), ২২টি কোম্পানি ও ৪২টি রুটের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরবান ক্লাস্টার (নগর পরিবহন) ৬টি (রুট ৩৪টি) ও সাব-আরবান (শহরতলি পরিবহন) ক্লাস্টার ৩টি (রুট ৮টি)। সবুজ ক্লাস্টারে বর্তমানে চলমান মোট ৫৪টি রুটকে সমন্বয় করে ৮টি রুটে পরিণত করা হয়েছে, যাদের রুট নম্বর ২১ থেকে ২৮।

২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২১ নম্বর রুট এবং ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর ২২ ও ২৬ নম্বর রুটে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে সবুজ রঙের বাসসেবা চালু হয়।

সাবিহা পারভীন বলেন, এসব রুটে দৈনিক ৩০ হাজার যাত্রীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সবুজ বাস সার্ভিস বাস্তবায়ন সাপেক্ষে অন্যগুলো চালু করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত