দূষণে মাছ কমছে নদীতে, পেশা ছাড়ছেন জেলেরা

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০: ৪৭
Thumbnail image

হাওর অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত। তবে নদী, খাল-বিল ও পুকুর দূষিত হওয়ায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। আর তাই অনেক জেলে জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

জানা গেছে, জেলায় ২৬টি নদনদী, ৩৪৭ বিল ও ১২২টি হাওর রয়েছে। কালের বিবর্তনে বিভিন্ন বর্জ্য, পলিথিন, বিস্কুট ও চিপসের প্যাকেটসহ অপচনশীল প্লাস্টিকবর্জ্যে দূষণের কবলে পড়েছে এসব জলাশয়ের অধিকাংশই। মাছ উৎপাদনে অন্য জেলার চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ভবিষ্যতে কীভাবে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পেশা বদল করে কেউ হয়েছেন অটোরিকশাচালক কেউ পোশাক কারখানার কর্মী।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৮২৫ জন। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যমতে, অন্তত পাঁচ হাজার জেলে তাঁদের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। জেলেরা বলছেন, তাঁরা যে পরিমাণ মাছ ধরেন তাঁর সিংহভাগ দিয়ে দিতে হয় ঋণ পরিশোধে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। তাই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সদর উপজেলার গাইটাল এলাকার বাসিন্দা আলী। ১৫-২০ বছর আগেও নরসুন্দা নদী থেকে সারা বছর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন।তিনি জানান, বিভিন্ন বর্জ্যে নরসুন্দা নদী দূষিত হয়ে পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। দিনের পর দিন বসে থেকেও মাছ ধরা সম্ভব হয় না।

ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি ইউনিয়নের জেলে মো. ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো শুধু মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করি। যেভাবে পানি দূষিত হচ্ছে ভবিষ্যতে মনে হয় এ পেশায় আর থাকতে পারব না।’

সদর উপজেলার হারুয়া এলাকার মো. জালাল উদ্দীন বলেন, নালার পানিতে বিভিন্ন বর্জ্য ফেলে রাখে। পানি খুবই দুর্গন্ধযুক্ত। কীভাবে মাছ থাকবে এই নদীতে?

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ বলেন, ‘আমরা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সমন্বয় করে দূষণ রোধে মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। শিল্প উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে কর্মশালা করছি, যেন পানিতে কোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল বলেন, প্রতিবছরই ৫ থেকে ১০ শতাংশ জেলে তাঁদের পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। কিশোরগঞ্জে উৎপাদিত মাছ চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত থাকে এবং দেশের মৎস্য চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে। তাই তাঁদের এ পেশায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত