Ajker Patrika

অফিসের দ্বন্দ্বে সহকর্মীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসান ইমরান: পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক
মূল হোতা আরিফ ইমরান খান ও সহযোগী ফারুক মিয়া সুমন। ছবি: সংগৃহীত
মূল হোতা আরিফ ইমরান খান ও সহযোগী ফারুক মিয়া সুমন। ছবি: সংগৃহীত

হাসানের সঙ্গে অফিশিয়াল বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল আরিফ ইমরানের। এই দ্বন্দ্ব থেকেই কৌশলে হাসানের পকেটে ১৯৩ পিস ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেন ইমরান। এ ঘটনায় মূল হোতা ইমরানসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা-পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— ফারুক মিয়া সুমন ও আরিফ ইমরান খান।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট (সিএ) হাসান আলী। গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও রহমানস রেগনাম সেন্টার ভবনে থাকা অফিস থেকে হাসান আলী তাঁর দুই সহকর্মী বাশার ও ইমাম হোসেনসহ বের হন। তারা তিনজন এসকেএস স্কাই ভবনের ফুটপাত ধরে হেঁটে পুলিশ প্লাজার দিকে যাচ্ছিলেন। হাসান অফিস থেকে বের হওয়ার পর পিছু নেয় অজ্ঞাত দুজন ব্যক্তি। হাসান আলী হেঁটে এসকেএস স্কাই ভবনের সামনে পৌঁছালে আচমকা চারদিক থেকে ৮-১০ জন লোক তাকে ঘিরে ধরে এবং মারধর শুরু করে।

এ সময় সু-কৌশলে হাসানের পকেটে ১৯৩ পিস ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনা চলাকালে সেখানে অবস্থানকারীরা থানায় ফোন দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে হাসানকে জনতা ইয়াবাসহ হাসান আলীকে আটক করেছে। তখন পুলিশ হাসান আলীকে থানায় নিয়ে যায় ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশ হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছে এমন একটি অভিযোগ উঠলে, বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়। হাসান আলীর ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে আসা বিষয়টি নজরে আসে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এনডিসি’র। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করতে মাঠে নামে পুলিশ।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা সূত্রে জানা যায়, নিরলস প্রচেষ্টায় ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হয় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা-পুলিশের চৌকস দল। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওয়ের পূর্ব নাখালপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফারুক মিয়া সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ঘটনার প্রকৃত কারণ। পরবর্তীতে সুমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর মূল হোতা আরিফ ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

থানা-পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, হাসান আলীর সহকর্মী আরিফ ইমরানের সাবেক গাড়ি চালক ফারুক মিয়া সুমন। হাসানের সঙ্গে অফিশিয়াল বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল আরিফ ইমরানের। হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে পারলে সুমনকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানায় ইমরান। পুরস্কারের কথা শুনে লোভে পরে হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে ফাঁদ পাতে সুমন। এরপর সুমন জনৈক এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াবা সংগ্রহ করে। সেই ব্যক্তিই মূলত অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনকে ভাড়া করে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সুমন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত ফারুক মিয়া সুমন ও আরিফ ইমরান দুজনেই বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে। এর সঙ্গে পুলিশের কেউ জড়িত নয়। মূল আসামিদের ধরা হয়েছে; একজন নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।’

ঘটনার ভুক্তভোগী সিএ কর্মকর্তা হাসান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার অফিসের এক সহকর্মীর পরিকল্পনায় আমাকে ফাঁসানো হয়। বিনা কারণে সাত দিন কারাভোগের পর ৯ ফেব্রুয়ারি আমি জামিনে মুক্ত হই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত