বাংলাবাজার ঘাটে বাড়ছে ভিড়, ভোগান্তিতে ঢাকামুখী যাত্রীরা

মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২২, ১০: ০০
আপডেট : ০৬ মে ২০২২, ১১: ০৯

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এরই মধ্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নৌপথ। তবে ফিরতি পথেও ভোগান্তির শেষ নেই যাত্রীদের। পথে পথে দুর্ভোগ মিলেমিশে নৌপথে এসে যোগ হয়েছে বাড়তি ঝক্কি-ঝামেলা। মোটরসাইকেল আর ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে ফেরিতে উঠতে পারছে না যাত্রীবাহী যানবাহন। ফলে যাত্রীদের লঞ্চ আর স্পিডবোটই একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সুযোগে লঞ্চ ও স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী হয়েই পদ্মা পার হচ্ছেন যাত্রীরা। 

আজ শুক্রবার সকাল থেকে দেশের অন্যতম নৌপথ শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। বিভিন্ন স্থান থেকে সকাল ৭টার পর বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। অনেকের শনিবার অফিস থাকায় এক দিন আগেই ঢাকায় যাচ্ছেন। আর শনিবার থেকে লঞ্চগুলোতে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সরেজমিন বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ৩ নম্বর ফেরিঘাটে ‘এনায়েতপুরী’ ফেরিটি নোঙর করার ১০ মিনিটেই পুরো ফেরি মোটরসাইকেল আর হালকা কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়িতে ভর্তি হয়ে গেল। পা ফেলার জায়গা নেই। ফেরির মাস্টার সিগন্যাল দেওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে গেল ফেরিটি। এর পরে একই ঘাটে ফেরি ‘কুঞ্জলতা’; আসতে না আসতেই মোটরসাইকেলে ভর্তি হয়ে গেল। সঙ্গে দু-তিনটি মাইক্রোবাস উঠতে পেরেছে ফেরিতে। এমন দৃশ্য সকাল থেকেই। ঘাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে হুঁশিয়ারি বার্তা। শুধু ৩ নম্বর ঘাটই নয়, অন্য ফেরিঘাটগুলোর প্রায় একই চিত্র। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার যাত্রীরা ঈদ শেষে কর্মস্থলে যাচ্ছে।

পটুয়াখালী থেকে আসা যাত্রী হিরু মোল্লা জানান, ‘ঈদ এলেই আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঘাটে এলে ফেরিতে উঠতে পারি না। লঞ্চে যাত্রীদের ব্যাপক চাপ। পা ফেলার জায়গা নেই। ভাড়া খুব বেশি না নিলেও যাত্রীদের চাপে শেষ হয়ে যাই। যদি লঞ্চে ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তাহলে দুর্ভোগ কমবে। আর পুলিশ যদি লঞ্চের মালিকদের চাপ দেয় কম যাত্রী নিতে, তাহলে সমস্যা থাকে না।’

বরিশালের উজিরপুরের যাত্রী আহমেদ রতন বলেন, ‘মোটরসাইকেল নিয়ে আসছি ঈদ করতে। যাওয়ার সময় যেমন ফেরিতে উঠতে কষ্ট হয়েছে, ঠিক তেমনি ফেরার পথেও একই কষ্ট। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ ঘাটে বড় বড় ফেরি নোঙর করে রাখা। এই সময়ে যদি ফেরিগুলো ছাড়া হতো, তাহলে এত কষ্ট হতো না। কী কারণে এমন করে রাখছে জানি না। এদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।’ 

মোটরসাইকেল আর ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেড়েছে বাংলাবাজার ঘাটে। বাংলাবাজার ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিটিসির ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘এই ফেরিঘাটে আজ ঘরমুখী যাত্রীদের চাপ রয়েছে। সাতটি ফেরি এই ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিটি ফেরিতেই ব্যাপক চাপ। তবে ঈদ শেষ হলেও কিছুসংখ্যক যাত্রী এখনো গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। এ জন্য ৮৭টি লঞ্চ ছাড়াও শতাধিক স্পিডবোট চলছে। কোথাও কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর চুরি-ছিনতাই রোধে। আশা রাখি, ঈদের আগের চেয়ে এখন বেশি নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবো।’ 

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এরই মধ্যে মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাসগুলোর যাত্রীরা নদী পার হয়েছে। তবে ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ তুলনামূলক অন্য বছরের চেয়ে কম। গত বছর যে পরিমাণে চাপ ছিল, তার অর্ধেকও এবার নাই। এর অন্যতম কারণ লঞ্চ ও স্পিডবোট চালু থাকা। গতবার এসব বন্ধ ছিল।’ 

লঞ্চঘাটের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর পুলিশ পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবারই ঈদ শেষে ফেরার পথে যাত্রীদের চাপ একটু বেশি থাকে। এবারও দুই দিন ধরে যাত্রী চাপ রয়েছে। আমরা প্রতিটি লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার না করে, সে জন্য লঞ্চের মালিক ও শ্রমিকদের চাপ দিয়ে আসছি। অনেক সময় যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে লঞ্চে ওঠেন, তখন আর তেমন কিছু করার থাকে না। তাও চেষ্টা করছি নিয়ম মেনেই যাত্রীরা পারাপার হোক।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত