সৌগত বসু, ফরিদপুর থেকে
ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের কালী মন্দিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা এখনও নিশ্চিত জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসীর মারধরে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কয়েকজন মুসলিম ছিলেন কেবল ওই নির্মাণ শ্রমিকেরাই। সেই কারণে উত্তেজনার মধ্যে নিছক সন্দেহের বশে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে।
আজকের পত্রিকার সরেজমিন অনুসন্ধান ও এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, মন্দিরটি সর্বজনীন। ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রাম আর পঞ্চপল্লী এলাকা। এই এলাকাটি পাঁচটি গ্রাম নিয়ে। সবগুলো গ্রামই হিন্দু অধ্যুষিত। আশেপাশের এলাকাগুলোও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। আগুন লাগার খবরে বেশি লোক জড়ো হয় আশেপাশের এলাকা থেকে।
গতকাল সন্ধ্যার পর মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর ১০–১৫ মিনিটের মধ্যেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন পাশে শুধুমাত্র সাতজন নির্মাণ শ্রমিক সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে আগুন দিতে কেউ দেখেনি বা আগুন দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য তাদের থাকতে পারে এমন- সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্কুলে বা তাঁর আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরাও নেই।
আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চপল্লী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক গজ পেছনে মন্দিরের অবস্থান। স্কুলের কক্ষ থেকে মন্দিরের সবকিছুই দেখা যায়। সেখানে চারটি মূর্তি রয়েছে। এর মধ্যে কালী ও শিব মূর্তি ছিল একসঙ্গে। আর ২ ফুট দূরে দুই পাশে অন্য দুটি মূর্তি। আগুনে পুড়েছে শুধুমাত্র কালী মূর্তি। এই মূর্তির পরনের শাড়ি ও হাতে থাকা শাড়ি পুড়ে গেছে। মূর্তির সামনে প্রায় দুই ফুট দূরত্বে দুটি প্রদীপ রয়েছে।
এই বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক (বাথরুম ও হাত ধোয়ার জায়গা) তৈরির কাজ চলছে। সেখানকার যে কক্ষে শ্রমিকদের অবস্থান সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের সামনে থেকে কক্ষের পেছনের গ্রিলের জানালার অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরো কক্ষে ইট ছড়িয়ে আছে। আর কক্ষের তিন জায়গায় রক্তের ছোপ দাগ। কক্ষে শ্রমিকদের কাপড় ও ব্যাগ রয়েছে। কক্ষে প্রবেশের দুটি দরজার একটি ভাঙা অবস্থায় আছে।
ঘটনা শুরু যেভাবে
পঞ্চপল্লী গ্রামে এই মন্দিরটির বয়স প্রায় ৬০ বছর। মন্দিরের পেছনেই বসতি রয়েছে। আর এর মধ্যে প্রভাষ কুমার মন্ডলের (৫০) পরিবার মন্দিরটিতে প্রতি সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান। প্রতিদিনের মতোই প্রভাষ কুমারের স্ত্রী তপতী রানী মন্ডল (৪০) সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। মন্দির থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩০ গজের মতো।
তপতি রানী আজকের পত্রিকাকে জানান, গতকাল সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর সময় সাতজন নির্মাণ শ্রমিক স্কুলের মধ্যেই ছিলেন। প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার কিছু সময় পর গোবরের জ্বালানি সংগ্রহ করতে তিনি আবারও মন্দিরের সামনে যান। তখন নির্মাণ শ্রমিকদের তিনি মন্দিরের সামনে দেখেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন।
তপতি বলেন, শ্রমিকেরা গালিগালাজ করলেও মন্দির ও হিন্দু নিয়ে কিছু বলেননি। এরপর তাঁরা পাশে রাখা একটি নসিমনের (ইঞ্জিনচালিত বড় ভ্যান) কাছে যান। এই নসিমনে স্কুলের নির্মাণসামগ্রী ছিল। এরপর তপতি রানী আবার বাড়ি ফিরে আসেন।
তপতি রানী আরও বলেন, নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কখনো তাঁদের ঝামেলা হয়নি। ঘটনার দিন সন্ধ্যাতেও তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। তবে দ্বিতীয়বার যাওয়ার সময় তিনি তাদেরকে গালিগালাজ করতে শোনেন। সেসময় তাঁরা মন্দিরের সামনেই ছিলেন।
তবে কী বিষয় নিয়ে শ্রমিকেরা গালিগালাজ করছিলেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তপতি রানী।
জানা যায়, তপতির স্বামী প্রভাষ কুমার মন্ডলের পরিবার শুরু থেকেই এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। প্রভাষ কুমারের মা মনমতি মন্ডল, এরপর তার পিসি (ফুফু) গোলাপী মন্ডল, এরপর তাঁর ভাইয়ের বউ সন্ধ্যা রানী মন্ডল এর আগে মন্দিরে সন্ধ্যাপ্রদীপ ও বাকি কাজ করতেন। তাঁরা সবাই এখন মৃত। এরপর থেকে মালতি রানী মন্দিরের সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান।
প্রভাষ কুমার মন্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই আগুন আগুন চিৎকার শুনে তাঁরা মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখতে পান, কালী মূর্তির শাড়িতে আগুন, সেটা আস্তে আস্তে পাশে থাকা কাপড়ের জিনিসেও ছড়িয়ে যায়। এলাকায় পানির সংকট আছে। সেজন্য আগুন নেভাতে তাদের কিছু সময় লাগে। তবে মূর্তি ছাড়া অন্য কিছুতে আগুন লাগেনি। আগুন নেভানোর সময় নির্মাণ শ্রমিকেরা ওই স্থানেই ছিলেন। এর মধ্যেই আশপাশের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকলে তারা স্কুলের মধ্যে তাদের কক্ষে চলে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীরা বলেন, আগুন নেভানোর সময় নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা–কাটাকাটি হয়। আর এর জেরে স্থানীরা নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর করে বেঁধে রাখেন কক্ষের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, শুরুতে মধুখালী থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ খুবই অল্প মানুষ ছিল। তাঁদেরও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আর এই সময়েই স্কুলের ওই কক্ষ ভেঙে নির্মাণশ্রমিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। মন্দির সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ে আশেপাশের অঞ্চলের মানুষই বেশি ছিল তখন। তাই তাদের থামানো যায়নি।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সীতা রানী বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্মাণ শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার কাজ করতে এসেছেন। তাঁরা স্কুলের মধ্যেই থাকেন। মাঝে মাঝে নির্মাণ সামগ্রী এলে সেগুলো আনতে বাইরে যান।
স্কুলের আরেক শিক্ষক উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তাঁরা এই ঘটনা শুনতে পান। স্কুলে আসার পর দেখেন স্থানীয় প্রশাসন সেখানে উপস্থিত রয়েছে। তবে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে আশেপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ এখানে ভিড় করেন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
স্কুলের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, তিনি খবর পেয়ে যখন স্কুলে আসেন তখন নির্মাণশ্রমিকরা স্কুলের ভেতরের কক্ষে ছিলেন। এসময় মধুখালি থানার পুলিশ, ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ওই কক্ষে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। তবে তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এসময় উত্তেজিত জনতা বাইরে থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একটি ইট তাঁর শরীরেও লেগেছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা গতকাল ঘটনা শোনার পরই এখানে এসেছেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা যায়নি।
ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন ইউপি সদস্য তাঁকে ফোন করে কালী মন্দিরে আগুনের কথা জানান। তিনি আনুমানিক সাড়ে ৭টার সময় সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে যাওয়ার পর দেখতে পান নির্মাণ শ্রমিকদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ওই কক্ষে রাখা হয়েছিল।
এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তপন বলেন, তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁরা আগুন দিয়েছে কিনা। নির্মাণ শ্রমিকরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ আগুন দেয়নি। সন্দেহ করে তাঁদেরকে এভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে।
রাত ১১টার পর অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে থাকা মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম একই ধরনের বক্তব্য দেন।
আগুন কে দিল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, বাতাসের কারণে আগুন লাগতে পারে। আর পুরো এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়াতে একমাত্র ওই নির্মাণ শ্রমিকেরা মুসলিম ছিলেন। তাই তাঁদেরকেই সন্দেহ করা হয়। আগুন কে বা কারা লাগিয়েছে সেটা জানা না গেলেও আগুন লাগার পর তা ভিন্ন খাতে নেওয়া হয়েছে। সেটির সঙ্গে স্কুলের প্রকল্পের বিষয় থাকতে পারে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, মূর্তির সামনে থাকা প্রদীপ থেকে মূর্তির দূরত্ব অনেক বেশি। আর মূর্তি মাটি থেকে উঁচু একটা জায়গায় রয়েছে। তাই বাতাসে আগুন লাগা সম্ভব নয়। আশেপাশে কাঠ আর টিনের তৈরি মন্দির এবং দুটি মূর্তি থাকলেও সেগুলো অক্ষত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সকালে স্থানীয়দের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর সন্ধ্যায় প্রতিমার গায়ে আগুন লাগলে সব সন্দেহ তাঁদের ওপর পড়ে।
অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘কোনো একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই ঘটনায় একজন আটক আছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের কালী মন্দিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা এখনও নিশ্চিত জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসীর মারধরে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কয়েকজন মুসলিম ছিলেন কেবল ওই নির্মাণ শ্রমিকেরাই। সেই কারণে উত্তেজনার মধ্যে নিছক সন্দেহের বশে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে।
আজকের পত্রিকার সরেজমিন অনুসন্ধান ও এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, মন্দিরটি সর্বজনীন। ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রাম আর পঞ্চপল্লী এলাকা। এই এলাকাটি পাঁচটি গ্রাম নিয়ে। সবগুলো গ্রামই হিন্দু অধ্যুষিত। আশেপাশের এলাকাগুলোও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। আগুন লাগার খবরে বেশি লোক জড়ো হয় আশেপাশের এলাকা থেকে।
গতকাল সন্ধ্যার পর মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর ১০–১৫ মিনিটের মধ্যেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন পাশে শুধুমাত্র সাতজন নির্মাণ শ্রমিক সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে আগুন দিতে কেউ দেখেনি বা আগুন দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য তাদের থাকতে পারে এমন- সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্কুলে বা তাঁর আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরাও নেই।
আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চপল্লী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক গজ পেছনে মন্দিরের অবস্থান। স্কুলের কক্ষ থেকে মন্দিরের সবকিছুই দেখা যায়। সেখানে চারটি মূর্তি রয়েছে। এর মধ্যে কালী ও শিব মূর্তি ছিল একসঙ্গে। আর ২ ফুট দূরে দুই পাশে অন্য দুটি মূর্তি। আগুনে পুড়েছে শুধুমাত্র কালী মূর্তি। এই মূর্তির পরনের শাড়ি ও হাতে থাকা শাড়ি পুড়ে গেছে। মূর্তির সামনে প্রায় দুই ফুট দূরত্বে দুটি প্রদীপ রয়েছে।
এই বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক (বাথরুম ও হাত ধোয়ার জায়গা) তৈরির কাজ চলছে। সেখানকার যে কক্ষে শ্রমিকদের অবস্থান সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের সামনে থেকে কক্ষের পেছনের গ্রিলের জানালার অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরো কক্ষে ইট ছড়িয়ে আছে। আর কক্ষের তিন জায়গায় রক্তের ছোপ দাগ। কক্ষে শ্রমিকদের কাপড় ও ব্যাগ রয়েছে। কক্ষে প্রবেশের দুটি দরজার একটি ভাঙা অবস্থায় আছে।
ঘটনা শুরু যেভাবে
পঞ্চপল্লী গ্রামে এই মন্দিরটির বয়স প্রায় ৬০ বছর। মন্দিরের পেছনেই বসতি রয়েছে। আর এর মধ্যে প্রভাষ কুমার মন্ডলের (৫০) পরিবার মন্দিরটিতে প্রতি সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান। প্রতিদিনের মতোই প্রভাষ কুমারের স্ত্রী তপতী রানী মন্ডল (৪০) সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। মন্দির থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩০ গজের মতো।
তপতি রানী আজকের পত্রিকাকে জানান, গতকাল সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর সময় সাতজন নির্মাণ শ্রমিক স্কুলের মধ্যেই ছিলেন। প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার কিছু সময় পর গোবরের জ্বালানি সংগ্রহ করতে তিনি আবারও মন্দিরের সামনে যান। তখন নির্মাণ শ্রমিকদের তিনি মন্দিরের সামনে দেখেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন।
তপতি বলেন, শ্রমিকেরা গালিগালাজ করলেও মন্দির ও হিন্দু নিয়ে কিছু বলেননি। এরপর তাঁরা পাশে রাখা একটি নসিমনের (ইঞ্জিনচালিত বড় ভ্যান) কাছে যান। এই নসিমনে স্কুলের নির্মাণসামগ্রী ছিল। এরপর তপতি রানী আবার বাড়ি ফিরে আসেন।
তপতি রানী আরও বলেন, নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কখনো তাঁদের ঝামেলা হয়নি। ঘটনার দিন সন্ধ্যাতেও তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। তবে দ্বিতীয়বার যাওয়ার সময় তিনি তাদেরকে গালিগালাজ করতে শোনেন। সেসময় তাঁরা মন্দিরের সামনেই ছিলেন।
তবে কী বিষয় নিয়ে শ্রমিকেরা গালিগালাজ করছিলেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তপতি রানী।
জানা যায়, তপতির স্বামী প্রভাষ কুমার মন্ডলের পরিবার শুরু থেকেই এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। প্রভাষ কুমারের মা মনমতি মন্ডল, এরপর তার পিসি (ফুফু) গোলাপী মন্ডল, এরপর তাঁর ভাইয়ের বউ সন্ধ্যা রানী মন্ডল এর আগে মন্দিরে সন্ধ্যাপ্রদীপ ও বাকি কাজ করতেন। তাঁরা সবাই এখন মৃত। এরপর থেকে মালতি রানী মন্দিরের সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান।
প্রভাষ কুমার মন্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই আগুন আগুন চিৎকার শুনে তাঁরা মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখতে পান, কালী মূর্তির শাড়িতে আগুন, সেটা আস্তে আস্তে পাশে থাকা কাপড়ের জিনিসেও ছড়িয়ে যায়। এলাকায় পানির সংকট আছে। সেজন্য আগুন নেভাতে তাদের কিছু সময় লাগে। তবে মূর্তি ছাড়া অন্য কিছুতে আগুন লাগেনি। আগুন নেভানোর সময় নির্মাণ শ্রমিকেরা ওই স্থানেই ছিলেন। এর মধ্যেই আশপাশের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকলে তারা স্কুলের মধ্যে তাদের কক্ষে চলে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীরা বলেন, আগুন নেভানোর সময় নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা–কাটাকাটি হয়। আর এর জেরে স্থানীরা নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর করে বেঁধে রাখেন কক্ষের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, শুরুতে মধুখালী থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ খুবই অল্প মানুষ ছিল। তাঁদেরও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আর এই সময়েই স্কুলের ওই কক্ষ ভেঙে নির্মাণশ্রমিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। মন্দির সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ে আশেপাশের অঞ্চলের মানুষই বেশি ছিল তখন। তাই তাদের থামানো যায়নি।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সীতা রানী বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্মাণ শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার কাজ করতে এসেছেন। তাঁরা স্কুলের মধ্যেই থাকেন। মাঝে মাঝে নির্মাণ সামগ্রী এলে সেগুলো আনতে বাইরে যান।
স্কুলের আরেক শিক্ষক উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তাঁরা এই ঘটনা শুনতে পান। স্কুলে আসার পর দেখেন স্থানীয় প্রশাসন সেখানে উপস্থিত রয়েছে। তবে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে আশেপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ এখানে ভিড় করেন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
স্কুলের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, তিনি খবর পেয়ে যখন স্কুলে আসেন তখন নির্মাণশ্রমিকরা স্কুলের ভেতরের কক্ষে ছিলেন। এসময় মধুখালি থানার পুলিশ, ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ওই কক্ষে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। তবে তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এসময় উত্তেজিত জনতা বাইরে থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একটি ইট তাঁর শরীরেও লেগেছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা গতকাল ঘটনা শোনার পরই এখানে এসেছেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা যায়নি।
ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন ইউপি সদস্য তাঁকে ফোন করে কালী মন্দিরে আগুনের কথা জানান। তিনি আনুমানিক সাড়ে ৭টার সময় সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে যাওয়ার পর দেখতে পান নির্মাণ শ্রমিকদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ওই কক্ষে রাখা হয়েছিল।
এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তপন বলেন, তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁরা আগুন দিয়েছে কিনা। নির্মাণ শ্রমিকরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ আগুন দেয়নি। সন্দেহ করে তাঁদেরকে এভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে।
রাত ১১টার পর অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে থাকা মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম একই ধরনের বক্তব্য দেন।
আগুন কে দিল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, বাতাসের কারণে আগুন লাগতে পারে। আর পুরো এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়াতে একমাত্র ওই নির্মাণ শ্রমিকেরা মুসলিম ছিলেন। তাই তাঁদেরকেই সন্দেহ করা হয়। আগুন কে বা কারা লাগিয়েছে সেটা জানা না গেলেও আগুন লাগার পর তা ভিন্ন খাতে নেওয়া হয়েছে। সেটির সঙ্গে স্কুলের প্রকল্পের বিষয় থাকতে পারে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, মূর্তির সামনে থাকা প্রদীপ থেকে মূর্তির দূরত্ব অনেক বেশি। আর মূর্তি মাটি থেকে উঁচু একটা জায়গায় রয়েছে। তাই বাতাসে আগুন লাগা সম্ভব নয়। আশেপাশে কাঠ আর টিনের তৈরি মন্দির এবং দুটি মূর্তি থাকলেও সেগুলো অক্ষত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সকালে স্থানীয়দের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর সন্ধ্যায় প্রতিমার গায়ে আগুন লাগলে সব সন্দেহ তাঁদের ওপর পড়ে।
অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘কোনো একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই ঘটনায় একজন আটক আছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫৩ ব্যাচ) শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মৃত্যুর ঘটনায় অপরাধীর বিচারসহ ১১ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তালা দেওয়ার পর দাবি পূরণে প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে বেলা ১টার
৮ মিনিট আগেরাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাফিলতির কারণে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বেশ কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে গতকাল শনিবার তাঁদের ওপর কবি নজরুল কলেজের কিছু শিক্ষার্থী হামলা করে বলে অভিযোগ করা হয়।
২২ মিনিট আগেগাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত সাফারি পার্কের ম্যাকাউ পাখিশালার নেট (জাল) কেটে দুইটি গ্রিন উইং ম্যাকাও পাখি চুরি ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পার্কের পক্ষ থেকে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আজ রোববার পাখি চুরি যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বনসংরক্ষক...
৩৬ মিনিট আগেড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও হামলার বিচারের দাবিতে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘেরাও করেছে রাজধানীর ৩৫ টির বেশি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয় এবং নামফলক ভেঙে ফেলে।
৪০ মিনিট আগে