নাসিকে করোনাকালের স্বেচ্ছাসেবীদের লাখ লাখ টাকা লোপাট

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৩: ৫৮
Thumbnail image

করোনা মহামারিকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য বরাদ্দ আসা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নামে-বেনামে টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের। তাঁরা টাকার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিটি করপোরেশন।

স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেন প্রায় ৪০ কর্মী। তাঁদের কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। এর মধ্যে একেকজন একেক পরিমাণ মজুরি পেয়েছেন। তখন জানানো হয়েছে, বরাদ্দ এলে পুরো মজুরি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সম্প্রতি নথি প্রকাশ করার পরে দেখা গেছে, স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নামে-বেনামে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনে নামা ১৬ কর্মীর অভিযোগ, তাঁদের স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেওয়া টাকার পরিমাণ ২ লাখ ৭২ হাজার। এটা তাঁরা জানতে পেরেছেন। বাকি সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসূল অঞ্চলের কর্মীরা জানেনই না কী পরিমাণ টাকা তাঁদের নাম ব্যবহার করে লোপাট করা হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের মাধ্যমে এই প্রতিবেদকের হাতে আসা কিছু নথিপত্রে দেখা গেছে, টাকা বণ্টনের শিটের কয়েকটি নাম ও পাতা একই। যেগুলো একাধিকবার ব্যবহার করে একাধিক ভাউচার বানানো হয়েছে। যাঁদের টাকা দেওয়া হয়েছে তাঁদের অনেককে চিনতে পারছেন না আন্দোলনকারীরা। এমনকি গ্রহীতার কোনো মোবাইল নম্বর রাখা হয়নি। ফলে যাঁদের নাম ও স্বাক্ষর দেখা যাচ্ছে, তাঁরা আসলেই টাকা পেয়েছেন কি না, তা প্রমাণের সুযোগ নেই।

স্বেচ্ছাসেবীদের অভিযোগ, এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত মেডিকেল অফিসার মোস্তফা আলী এবং টিকাদান সুপারভাইজার হাফিজুর রহমান। কারণ, তাঁরা দুজনেই প্রতিটি ভাউচারে স্বাক্ষর করেছেন।

স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ৭৫৪ দিন কাজ করা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাকে রসিদসহ ১৮ হাজার এবং একটি রেজিস্টার খাতায় সই নিয়ে ৪২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার কর্মদিবস অনুযায়ী ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রাপ্য। শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি হিসাবরক্ষণ বিভাগে দেওয়া খাতা চেক করে দেখতে পাই, আমার স্বাক্ষর নকল করে তুলে নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৭৫০ টাকা। অথচ এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ আরেক স্বেচ্ছাসেবী নুসরাত জাহান সুনামের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং শাহাদাত হোসেন সিমনের নামে ১২ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে মোস্তফা আলী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে কৌশলে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ অভিযোগের বিষয়ে নাসিকের নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) জাকির হোসেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি।’

যোগাযোগ করা হলে নাসিকের তৎকালীন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আমি আমার ডাক্তারদের বিশ্বাস করতাম। এক বছর আগে আমি ডা. মোস্তফার একটি ফাইলে গরমিল পাই। এরপরেই চলতি বছরের মার্চে তাকে সিটি করপোরেশন থেকে সরিয়ে বন্দর অঞ্চলে ট্রান্সফার করে দিই। একাধিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। করোনাকালের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ সাম্প্রতিক নয়, এক বছর আগে থেকে এ নিয়ে সমস্যা চলছে। সে যদি অন্যায় করে থাকে, তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত