শামসুন্নাহারদের টিকে থাকার গল্প নিয়ে আইআরসির প্রদর্শনী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ০৫
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৫০

কক্সবাজারের উখিয়ার ছোট একটি গ্রামে থাকেন শামসুন্নাহার। তাঁদের গ্রামে কাজ করে উপার্জনের সুযোগ খুবই কম। পরিবারের সবার জন্য পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ ছিল না তাঁদের। তবে ছোট এক খণ্ড জমি ছিল শামসুন্নাহারের। সেখানে সবজি ফলানোর ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কীভাবে বেশি ফসল ফলানো যায়, সে সম্পর্কে জানতেন না শামসুন্নাহার।

এরপর ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগরিকালচার’ সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের পর আইআরসি থেকেই শামসুন্নাহারকে বীজ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ থেকে পাওয়া জ্ঞান কাজে লাগিয়ে জমি তৈরি করে চাষাবাদ শুরু করেন শামসুন্নাহার। ছোট এক খণ্ড জমি থেকে ভালো ফলন পান তিনি। এখন নিজের এবং পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারছেন শামসুন্নাহার।

শামসুন্নাহারদের মতোই কক্সবাজার এলাকার স্থানীয় অধিবাসী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লড়াই ও টিকে থাকার গল্প উঠে এসেছে ‘থ্রু দ্য লেন্স অব হোপ: আনফোলডিং দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে।

আজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে ‘বে এজওয়াটার’ এর এজ গ্যালারিতে শুরু হয় এই প্রদর্শনী। ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় জনগণের সংগ্রাম ও সমস্যা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে দাতা সংস্থা, বিশ্বনেতা এবং নীতিনির্ধারকদের নজরে পুনরায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে আইআরসি এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এটা বিশাল ব্যাপার। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে স্থানীয়রাও বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট খুব দ্রুত নিরসন হওয়া প্রয়োজন।’

আইআরসির আয়োজনে ‘থ্রু দ্য লেন্স অব হোপ: আনফোলডিং দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস’ আলোকচিত্র প্রদর্শনী।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সমস্যাটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বের তালিকায় পিছিয়ে গেছে। ফলে তৈরি হয়েছে তহবিল সংকট, পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আশা নিয়ে প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করছে। রোহিঙ্গা আগমন এবং অবস্থান শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণের জন্যও নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। যা উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত পরিস্থিতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।

‘থ্রু দ্য লেন্স অব হোপ’ প্রদর্শনীটির তত্ত্বাবধান করছেন ভিজুয়াল আর্টিস্ট ওয়াকিলুর রহমান। প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ড্রা বার্গ ফন লিন্ডে, ইউএসএইড বাংলাদেশ মিশন ডিরেক্টর রিড জে এইকিলম্যান এবং ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুমবুল রিজভি। সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমস্যায় আইআরসির সহায়তার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলের বর্তমান অবস্থাও উপস্থাপন করেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ক্যাম্পের পরিবেশে অবস্থানের কারণে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সংকট নিরসনে নির্ভর করতে হচ্ছে দাতা সংস্থাগুলোর ওপর, সাম্প্রতিক সময়ে তহবিল সংকটের কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাবারের জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ কমে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও এই জনগোষ্ঠীর জন্য নেই কোন জীবিকার সুযোগ, শিশুদের জন্য নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা, এমনকি মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া চিকিৎসা সেবাও জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে প্রতিনিয়ত নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন স্ক্যাবিস) এই জনগোষ্ঠিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি দুর্গম পরিবেশে ক্ষুদ্র পরিসরে বাঁশের তৈরি ভঙ্গুর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে একই সঙ্গে অনেক মানুষের বসবাস প্রতিনিয়ত বন্যা, ভারী বর্ষণ, পাহাড়ধস এবং অগ্নিকান্ডের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রেখেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে।

সবার জন্য উন্মুক্ত ‘থ্রু দ্য লেন্স অব হোপ’ প্রদর্শনীর সমাপনী দিন ২০ ফেব্রুয়ারি রয়েছে আলোচনা সভা। এতে অংশ নেবেন দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, মিডিয়া এবং শিক্ষা অঙ্গনের প্রতিনিধিরা। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত